গল্প: "চিঠির অন্তর্ধান"
রাত্রি গভীর হয়েছে। শহরের বাতাসে এক ধরনের কৃত্রিম নীরবতা, যেন চারপাশে সব শব্দ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তবুও, পুরনো সেই দোতলা বাড়িটার জানালায় আলো জ্বলছে। সেখানে বসে আছে অয়ন, তার দাদা অরিন্দমের রেখে যাওয়া পুরনো চিঠিগুলোর পেছনে কিছু খুঁজে।
অরিন্দম দশ বছর আগে হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পুলিশ খুঁজে পায়নি কিছুই—না কোনো লাশ, না কোনো চিহ্ন। শুধু রয়ে গেছিল অরিন্দমের হাতে লেখা পঁচিশটা চিঠি, যেগুলো সে প্রতি সপ্তাহে অয়নকে লিখত, ঠিক তার হারিয়ে যাওয়ার এক মাস আগে থেকে।
চিঠিগুলোয় সবকিছু খুবই সাধারণ—বই পড়ার অভ্যাস, কলেজের গল্প, নতুন কবিতার চেষ্টা। কিন্তু অয়নের মনে হঠাৎ সন্দেহ জাগে—এই চিঠিগুলোর মধ্যে কি কোথাও কোনো লুকানো বার্তা ছিল?
সে লক্ষ্য করে, প্রতিটি চিঠির নির্দিষ্ট শব্দগুলো অদ্ভুতভাবে মিলে যাচ্ছে—প্রথম চিঠির পঞ্চম শব্দ, দ্বিতীয় চিঠির চতুর্থ, তৃতীয় চিঠির তৃতীয়, এবং এভাবে চলতে থাকে।
সব শব্দ একত্র করলে উঠে আসে একটা বাক্য:
"রাতের শেষ ট্রেনেই আমি চলে যাচ্ছি—আবার দেখা হবে না, কিন্তু আমি আছি।"
অয়ন স্তব্ধ হয়ে যায়। এত বছর পরে সে বুঝতে পারে, অরিন্দম পালিয়ে গিয়েছিল—নিজের ইচ্ছেতেই। কিন্তু কোথায়? কেন? সে কি কাউকে থেকে পালাচ্ছিল, না কি নিজের মধ্যেকার কিছু থেকে?
অয়ন চিঠিগুলো হাতে নিয়ে ছাদে যায়। রাতের আকাশে তারা জ্বলছে। হঠাৎ তার মনে হয়, দূরে একটা ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাচ্ছে... যেন দশ বছর আগের সেই শেষ ট্রেনটা আজও চলেছে, এক রহস্যময় গন্তব্যের দিকে।