# মৃদু চিৎকার করে উঠলো। সে পড়ে যেতে নিচ্ছিল তবে তার আগেই কল্প তার হাত টেনে ধরল।
রুবি চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। তার এক হাত কল্পের হাতের মুঠোয়, অন্য হাতে সে নিজেই কল্পের বুকের কাছের শার্টের একাংশ ধরে রেখেছে। তার হাতের বইগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে সিড়িতে পড়ে আছে। কল্প বিস্ময়কর চাহনিতে তাকে দেখলো। কাজের সময় এই মেয়ে আবার কোথা থেকে টপকালো। আর এই মেয়ে এখনো এভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছে কেন।
-‘ রুবি? চোখ খোলো। তুমি এখন সেইফ আছো। '
কল্পের কথায় পিটপিট করে চোখ খুলল রুবি। চোখের পাতা ঝাপটে পিটপিট করে তাকাল কল্পের দিকে। কল্প তার ছেড়ে দিয়ে বলল,
-‘ কীভাবে হাটছিলে? আর একটু হলেই তো পড়ে যেতে। আল্লাহ রক্ষা করেছেন, এবার থেকে একটু সাবধানে চলবে। যাও, উপরে যাও। ’
রুবি নড়ল না। সে সেভাবেই ফ্যালফ্যাল করে কল্পের দিকে তাকিয়ে রইল। বুকের কাছের শার্টটাও ছাড়ল না। কল্পের ভ্রু কুচকে এলো, কপালে ভাজ ফেললো। তবে সে মেয়ের মধ্যে কোনো বিকার দেখা গেল না। কল্প আলগোছে হাত ছাড়িয়ে নিল। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল। তবে তাকে বিস্ময়ে ফেলে তার হাত চেপে ধরে আটকায় রুবি। সে বিস্ময়ে পেছনে ফিরে একবার হাতের দিকে আর একবার রুবির দিকে। রুবি দিকে তাকাতেই সে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাত ছেড়ে দিল। মৃদু হেসে বলল,
-‘ সরি, সরি কিছু মনে করবেন না। আসলে বলছিলাম যে থ্যাঙ্কিউ। আপনি আমায় না ধরলে কি হতো..
-‘ ইটস ওকে '
বলেই কল্প আর দাঁড়ালো না। ব্যস্ত পায়ে নেমে এলো সেখান থেকে। রুবি তার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকল, এবং চেয়েই থাকল। তারপর মৃদু হেসে বইগুলো কুড়াতে লাগল।
_______________
মৌনিকে দেখা গেল রুপার সাথে মিলেমিশে করলা পারছে। লাঠির আগায় আংটার মতো বানিয়েছে যার দরুণ পারতে সুবিধা হচ্ছে। অবশ্য রুপা কাজ করছে কম সে মৌনির চারিদিকে ঘুরে কিছু একটা নিয়ে ক্রমাগত বকেই চলেছে।
কল্প ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে দাঁড়ালো চুপচাপ। কল্পকে নজরে আসতেই থেমে গেল মৌনি। এই ছেলেটাকে আজ কয়দিন হলো দেখেনি সে। কোমলের কথা উঠার পর সেই যে বাড়ি ছেড়েছিল আর ফিরে আসেনি। এমনকি তার ফ্লাটের তালাটাও মৌনিকে মারতে হয়েছিল। সেটা এখনো মৌনির কাছেই রয়ে গিয়েছে। হয়তো নিজের কাছের এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলেছিল। না জানি এই কটাদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিল?
মৌনি ঝুড়িটা রুপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো কল্পের দিকে। তাকে আদ্যোপান্ত দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, -‘ কোথায় ছিলেন এতোদিন? হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন নাকি? ’
-‘ উহু। হাওয়া করতে গিয়েছিলাম। ’
-‘ হু? ’
-‘ বাবার অফিসে অনেক কাজ জমেছিল। সেগুলো হাওয়া করতে গিয়েছিলাম। বুঝলে? ’
-‘ ওহ। আর বিলু? বিলু কোথায়? ’
-‘ তোমার বান্ধবি। সেটা তুমিই ভালো জানো। ’
-‘ আমার কাছে তো ফোন নেই। ও ভার্সিটিতে না এলে ওর খোজ জানব কীভাবে? আপনার কাছে নিশ্চয়ই ওর ফোন নাম্বার আছে। একটু ফোন করুন না। দ্রুত ফোন করুন। ’
-‘ দ্রুত কেন ম্যাডাম? ’
-‘ প্রথমত অনেকদিন বিলুর সাথে কথা হয়নি। আমার সেটা একদমই ভালো লাগছে না। আপনার থেকে তার খোজ নেব ভেবেছিলাম, তবে আপনিও তো হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন। এখন যখন আপনাকে পেয়েছি তাহলে দেরি কিসের? ’
-’ মনে হচ্ছে সব চিন্তা বন্ধুকে নিয়েই। ’
বিলুর নাম্বারে ডায়াল করতে করতে শুধালো কল্প। মৌনি ভ্রু কুচকালো।
-‘ তো আর কাকে নিয়ে চিন্তা হবে শুনি? ’
কল্প বিরবির করে আওড়ালো ‘ বরের থেকে ননদের খোজ বেশি তোমার। বরের চিন্তা নেই, এদিকে ননদের চিন্তায় মাথা খারাপ করে ফেলছে ’
মুখে বলল-‘ সেটাই তো। আর কার চিন্তা করবে। ’
বিলু ফোন ধরতেই তার দিকে এগিয়ে দিল ফোনটা।
______________
জুতো জোড়া খুলে পাশে রেখে লেকের পাড়ে পরপর বসে পানিতে পা ডুবিয়ে বসল বিলু, মৌনি ও রুপা। হাটুর একটু নিচ অব্দি ডুবে গেল তিন জোড়া পা। ঠান্ডা পানি পা স্পর্শ করতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল মৌনি। বিলুর চোখেমুখে আবেশের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেল না। তার দৃষ্টি নির্মল। তাকিয়ে আছে ঢেউ খেলে যাওয়া জলের দিকে। তবে রুপাকে বেশ উত্তেজিত দেখা গেল। সে তো রীতিমতো পা দাপাতে শুরু করল। যার দরুণ পানি ছিটকে এলো তার গায়ে। মৌনি তার পাশে বসে থাকার কারণে মৌনির গায়েও কিছুটা পানি ছিটকালো। মৌনি রুষ্ট কন্ঠে বলল,
-‘ এই রুপা, পা শান্ত করে রাখ। নয়তো বাড়ি ফিরে যাবো কিন্তু। ’
-‘ তো যা না। আমি তো যাবো না। আমি সারাজীবন এখানেই থাকবো। কি সুন্দর জায়গা! ’
জায়গাটা সত্যি সত্যিই খুব সুন্দর। এটা মূলত একটা পার্ক। রুপসী উদ্যান। হরেক রকমের গাছগাছালিতে ভর্তি। সবুজের সমাহার। এর একটা অংশজুড়ে শিশুপার্ক। সেখানে সব শিশুদের খেলাধুলার, বিনোদনের সরঞ্জাম। এর ভেতরে দুটো লেকও আছে। একটা মিনি সাইজের আর একটা বড়। বড়টা বড়দের জন্য, ছোটটা ছোটদের জন্য। লেকে ছোট ছোট বোট চলছে। একপাশে ছোটখাটো একটা চিড়িয়াখানাও আছে। বাচ্চা-বড় সবার জন্যই উপযোগী করে তৈরি করা উদ্যানটা। মৌনিরা আজ এখানে এসেছে মূলত রুপার জোড়াজুড়িতে।
বিলুর কাছে ফোন করার পর সে এসেছিল মৌনির সাথে দেখা করতে। তার নাকি সর্দি-জ্বর হয়েছিল। সেজন্য বাইরে কোথাও যায় নি।
তখন মৌনি আর বিলু বাড়ির পিছন দিকের পুকুরপাড়ে বসে গল্প করছিল। সাথে রুপাও ছিল। তার মুখে বারেবারে একই কথা সেদিন মৌনি তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলেও এখনো ঘুরতে নিয়ে যায় নি কেন সেটার কৈফিয়ত চাই। সবজি তোলার সময় এটা নিয়ে মৌনির সাথে বকবক করছিল। মৌনির মনে পড়ল সেদিনকার কথা য