# সমস্ত মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে রুশিতা সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আপনাকে এত কষ্ট দিচ্ছি তবুও আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”
মাহিম হেসে বলল, “আমি যদি আমার স্ত্রী জন্য এতটুকু কষ্ট সহ্য করতে না পারি তাহলে ভালো স্বামী হব কীভাবে বলো তো রুশিতা? আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমি একজন ভালো স্বামী হতে চাই। যতটা ভালো হলে আমার স্ত্রীর চেহারা সব সময় উজ্জ্বল দেখাবে। মানুষ একটা নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারে নারী তার স্বামীর ঘরে কতটা সুখী। আমিও চাই রুশিতা মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝুক তুমি অন্তত ভুল মানুষের হাতে পড়োনি। পৃথিবীতে যার স্বামী ভালো হয় সেই নারীর আর সুখের প্রয়োজন হয় না।”
“আপনি বেশ কথা বলতে পারেন শুধু কথা বললেই হবে না। আপনার কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে। প্রতিটি নারী চায় তার স্বামীকে নিয়ে অহংকার করতে, গর্ব করতে আপনি কি আমার গর্বের কারণ হবেন মাহিম ভাই?”
রুশিতার কথায় মাহিম বুকে হাত রেখে বলল, “এভাবে ভাইয়া বলো না রুশিতা বুকে ব্যথা করে তো!”
রুশিতা খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, “আমি মাঝেমধ্যে আপনার বুকে ব্যথার কারণ হতে চাই ভাইয়া।”
রুশিতার সেই দিশেহারা হয়ে পড়ল মাহিম। এই মেয়েটা তার জীবনের চরম সর্বনাশ ঘটিয়েই ছাড়বে। মাহিম গম্ভীর হয়ে বলল, “তুমি আমার হাতে মার খাবে রুশিতা আর কখনো এভাবে আমার সামনে হাসবে না।”
রুশিতা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কেন?”
“সেটা সময় হলে বুঝবে কেন?”
“তাই, তা আপনি আমাকে মারবেন?”
“তুমি শুনতে পাওনি?”
“আপনার সাহস আছে?”
“হ্যাঁ আছে।”
“দেখান।”
“বিয়ে হয়নি তো!”
“মানে? বিয়ের সাথে মারের সাথ কী?”
“তুমি ছোটো বাচ্চা বুঝবে না।”
“আপনি বোঝালেই আমি বুঝব।”
“তুমি যখন আমাকে রাগাবে তখন আমি রেগে গিয়ে তোমাকে কোটিখানেক চুমু খাব। এখন বিয়ে হয়নি তাই আদরের মারটা মারতে পারলাম না। এই মার খাওয়ার জন্য দ্রুত বিয়ে করতে হবে। আমার যে দিন ফুরোয় না রুশিতা আমার ভয় লাগছে চলো আজই বিয়ে করে ফেলি।”
মাহিমের কথায় রুশিতা লজ্জায় রক্ত জবার মতো লাল হয়ে গেল। রুশিতার লাজুক মুখ দেখে মাহিম হাসছে রুশিতা মিছে রাগ দেখিয়ে মাহিমের পিঠে মারতে লাগল। মাহিমা রুশিতাকে বাঁধা দিল না।
“আপনি খুব অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন মাহিম ভাই।”
“আমি খুব ভদ্র ছেলে কিন্তু তুমি সামনে আসলে অভদ্র হয়ে যাই। আমার রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু তোমার ক্লান্ত মুখটা দেখে আমার হৃদয় পুড়ছে। আমরা আর দেরি না করি শাড়ি কিনে রেস্টুরেন্টে খেতে যাব। দুপুরে খাওয়ার খেয়ে বাড়ি ফিরব তোমার কোনো সমস্যা আছে রুশিতা?”
“আমার কোনো সমস্যা নেই চলুন।”
মাহিম আর রুশিতা রাস্তা পার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। শতশত গাড়ির আনাগোনা স্থির নেই একটা গাড়িও। চলন্ত গাড়ির ফাঁকফোকড় দিয়েই রাস্তা পার হতে হয়। মাহিম শক্ত করে রুশিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে রাস্তা পার হলো খুব সাবধানে। রাস্তা পার হওয়ায় শেষ মাহিম সিরিয়াস হয়ে বলল,
“তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার হাত ধরার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় ছিল না। তোমার এতটুকু ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারব না। তোমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছি আমি। তোমার ভালো খারাপ দেখার দায়িত্বটাও আমার। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না রুশিতা আর কখনো এমন ভুল করব না।”
রুশিতা মুগ্ধ হয়ে মাহিমকে দেখছে। এই মানুষটা প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ভালো। রুশিতা হেসে বলল,
“আপনি ভয় পাবেন না আমি কিছু মনে করিনি। আমার ভালোর জন্যই আমার হাত ধরেছিলেন। আমি কেন রাগ করতে যাব? আপনি আমার সবকিছু এত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। আমার এতেই শান্তি লাগছে আমি চাই আপনি সারাজীবন এমনই থাকেন। আপনি এমন থাকলে সত্যি এক দিন আপনি আমার গর্বের কারণ হবেন।
অরুণ বাইকের ওপর বসে সিগারেট খাচ্ছে। একটা কাজে অরুণ এদিকে এসেছিল। মাহিম আর রুশিতাকে একসাথে দেখে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গেল। গাছের নিচে বাইক দাঁড় করিয়ে সিগারেট ধরাল। তারপর বসে বসে দু'জনের খুনসুটি দেখল। তার বুকের মধ্যে হঠাৎ করে মোচড় দিয়ে উঠল। সে রুশিতাকে দেখতে চায় না সে চলে যেতে চায় তবে কোনো এক অদৃশ্য দেওয়াল তাকে আঁটকে রেখেছে। অবাধ্য মনটা কিছুতেই যেতে চাইছে না নির্লজ্জের মতো দুজনকে দেখছে। রুশিতার হাসি যেন অরুণের কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তার উঠে দিয়ে দু'জনকে দুটো চড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। মাহিম যখন রুশিতার হাত ধরল অরুণের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। তার সবকিছু এলোমেলো লাগছে দিশেহা