#
সবাই কপাল কুঁচকে তাকালো উনার দিকে। কামরান দেওয়ান অবাক হয়ে বললেন,
"মালা?"
জাহানারা বেগম উনার হোয়াটসঅ্যাপে আর্যর ফোন থেকে আসা ছবিটা দেখালেন সবাইকে। কামরান দেওয়ান বলল,
"ওই পরিবারের সবকটা ছেলে এমন। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই বেয়াইন।"
"তাহলে এখন কি হবে?"
"কল্পকে খুঁজে বের করতে হবে।"
"আর না পেলে তখন?"
লুবনা বেগম একটু কড়া গলায় বললেন,
"মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না আর আপনি ভাবছেন না পেলে তখন কি হবে?"
ইলিনা বেগম আসলাম খানের সাথে কথা বলছে। ফোন করছে একের পর এক। আসলাম খান বলল,
"মরেছে মনে হয়। একটাও ফোন ধরছেনা কেন?"
ইলিনা বেগম ঘামছে। আর্য কোনো অঘটন ঘটালে দেওয়ানরা এবার ছাড়বে না। কি যে হবে। ইথু কোথায় গেল। সেও আর্যর সাথে তাল মিলিয়েছে নাকি? তিনি আশিষের কাছে গেলেন। কাদিনের হাতে মার খেয়েছে। রাগে ফুলে বসে আছে। ইলিনা বেগম বললেন,"আর্য কোথায় আশিষ?"
আশিষ চোখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে।
"জাহান্নামে গেছে।"
"একচড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেব। তুমি জানো কিছু? জেনে থাকলে বলো। আরিশ তুমি জানো? সত্যি কথা বলো আমাকে। তোমার ড্যাড জানলে কি হবে ভাবতে পারছো?"
আরিশ বলল,"আমি জানিনা কিছু। জানলে অবশ্য বলতাম।"
ক্লাবে জাহানারা বেগমের সাথে বড়ফুপুর কথা কাটাকাটি লেগে গেছে। জাহানারা বেগমের মতে সবাই সবটা জেনেশুনে কল্পকে উনার ছেলের ঘাড়ে তুলে দিতে চেয়েছে। বড়ফুপু বললেন,
"ছেলেমেয়েরা একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করছে সেখানে অন্যজন এসে পড়লে মেয়েটার কি দোষ? আপনি শুধু আমাদের মেয়ের দোষ দেখছেন বেয়াইন?"
জাহানারা বেগম বললেন,"মেয়ের দোষ দিচ্ছি না। দোষ আপনাদের। আপনারা দেখেছেন মেয়েটার পেছনে পড়েছে ওই বাড়ির ছেলে। কিন্তু আপনারা চুপ থেকেছেন। দেখেও না দেখার ভান করেছেন। আপনারা কথাবার্তা বলে সমাধান করে নিতে পারতেন।"
বড়ফুপু বিরক্ত হয়ে বলল,
"আপনি তখন থেকেই একটা কথা বলে যাচ্ছেন শুধু। আমরা কিছু জানতাম না। ওই ছেলে আপনার মেয়ের পেছনেও তো পড়েছিল। সেটা অস্বীকার করবেন?"
"অস্বীকার করবো না। কল্পর পেছনে পড়েছে বলেই তো জেসিকে ছেড়েছে। নইলে কি ছাড়তো?"
লুবনা বেগম বললেন,
"তাহলে আপনি চুপ ছিলেন কেন? জেনেশুনে আপনি কেন মেয়েটাকে বউ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন?"
"আমার ছেলের জন্য। তার সাথে ওই ব্যাপারে কথায় বলতে পারিনি। সে শুনতেই ইচ্ছুক নয়। এখন মিললো তো আমার কথা। জেসি দেখলে তো? কাল আমার ছবিটা তোমার ভাইয়া দেখতেই চাচ্ছিল না।
জেসি চুপ করে আছে। সবটা অবিশ্বাস্য লাগছে তার। সে ভাবিকে জিজ্ঞেস করেছিল ভাইয়ার সামনে আর্য তাকে পছন্দ করে কিনা। ভাবি চমকে উঠেছিল।
তাহলে কি আসলেই কিছু টের পাননি ভাবি? নাকি ভেতরে ভেতরে টের পেয়েও, বিষয়টাকে তুচ্ছ ভেবে উপেক্ষা করেছেন ঘৃণা আর অবজ্ঞার চোখে দেখেছেন বলে? এখন কি হবে? ভাবিকে কোথায় নিয়ে গেছে আর্য?
কাওসার দেওয়ান কিরণকে চড়ও বসিয়ে দিয়েছে। কেন সে কল্পকে একা ছাড়লো। কিরণ কাঁদছে। সবাই তাকে দোষারোপ করছে। তাকে কাঁদতে দেখে কাদিন বলল,
"এই চুপ। একদম কাঁদবি না। পার্লারে ফোন কেন ফেলে আসতো গেলি তুই? ও ওভাবে ঝিমুচ্ছিল সেটা টের পেয়েও সন্দেহ করিসনি কিছু? বেকুব মেয়ে কোথাকার।"
কিরণ বলল,"আমি কি করে বুঝবো? ভাবিকে কি কেউ সন্দেহ করেছিল এর আগে?"
কাসেদ বলল,"আরেকটা কথা বললে চড়াবো। চুপ থাক। ওর কিছু হলে তোকে ছাড়ব না আমি।"
________________
পুলিশ, র্যাব সব বাহিনীই কল্পনাকে খুঁজতে নেমেছে। চারদিকে তল্লাশি চলছে। কিন্তু তার কোনও হদিস মেলেনি এখনো।
জোসেফও আর বসে থাকেনি। শেরওয়ানি পাল্টে সে নেমে গেছে গোয়েন্দা দলের সঙ্গে। কিরণ আর অহনার কাছ থেকে সে প্রয়োজনীয় সব তথ্য নিয়েছে। তারপর তারা গিয়েছিল পার্লারে। খুঁটিয়ে তদন্ত চললো। প্রতিটি কোণ ঘেঁটে দেখা হলো। পানির গ্লাসে ড্রাগসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
কাবির স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো!!
আর্যাব খান একজন অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা। তদন্তের নিয়মকানুন, আইনের ফাঁকফোকর, গোয়েন্দাদের মনস্তত্ত্ব সবই তার নখদর্পণে। সে জানে কিভাবে গা ঢাকা দিলে আইনের অনুসন্ধানী চোখও তাকে খুঁজে পাবেনা।
জোসেফ কাবিরকে কিছু বললো না। সে স্পষ্ট দেখলো কাবির দেওয়ান নিজের মধ্যে নেই। স্ত্রী বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
জোসেফ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। তার কল্পর জন্য চিন্তা হচ্ছে। আর্যাব খান ওর সাথে জঘন্য কিছু করে বসবে না তো?
______________