দশটি কবিতা দেন আপনার ইচ্ছামতগল্প: পৃথিবীর শেষ চিঠি
✍️ লেখক: ChatGPT
এক
বৃদ্ধ মানুষটি একটি পুরোনো কাঠের বাক্স খুললেন। ধুলোমাখা, কিন্তু তার চোখে তখনও জ্বলজ্বলে এক স্মৃতি। ভেতর থেকে বেরোল একটি হলদেটে খাম—তার ওপরে লেখা, “তোমার জন্য, পৃথিবী”।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নামটা আর কোনো ঠিকানায় পাঠানো যায় না। এই চিঠি পৃথিবীর শেষ চিঠি।
তিনি জানতেন, এই গ্রহ আর খুব বেশি দিন নেই। মানবজাতি বহু আগেই অন্য গ্রহে পাড়ি জমিয়েছে। কেবল তিনিই রয়ে গেছেন, স্বেচ্ছায়। শেষ প্রহরের প্রহরী হয়ে।
দুই
তার নাম ছিল অর্ণব সেন। একসময় বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর হৃদয় আছে। গাছের কান্না আছে, নদীর রাগ, বাতাসের অভিমান—সবই অনুভব করতে পারতেন তিনি। কেউ বিশ্বাস করত না, তাই তিনি থাকলেন, একাই।
তিনি রোজ চিঠি লিখতেন—একটি চিঠি পৃথিবীর জন্য।
সে চিঠিতে থাকত তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা—
"আমরা তোমাকে বুঝিনি। আমরা শুধু নিয়েছি, ফিরিয়ে দিইনি।
তুমি আমাদের শিখিয়েছিলে বাতাসে হাসতে, আলোতে গান গাইতে।
তবু আমরা ধোঁয়া দিয়েছি তোমার ফুসফুসে।
ক্ষমা করো, পৃথিবী।"
তিন
শেষ চিঠি লেখার দিনটি ছিল আজ।
আকাশ ছিল সীসার মতো ধূসর, পাখি নেই, গন্ধ নেই কোনো মাটির।
তিনি জানতেন, চিঠি আর কেউ পড়বে না। তবু লিখলেন।
“তুমি যদি আরেকবার জন্ম নাও,
আমরা যদি আবার ফিরে আসি,
আমি কথা দিচ্ছি—
তোমার প্রতিটি পাতার ভাষা আমরা শিখব,
তোমার প্রতিটি ঢেউয়ের নাম মুখস্থ করব।
এইবার নয়, পরের জন্মে—আমরা ভালোবাসতে শিখব।”
চার
তিনি চিঠিটা রেখে দিলেন গাছের গোড়ায়,
যেখানে একসময় শিশুরা দৌড়ঝাঁপ করত।
তারপর তিনি চুপচাপ বসে রইলেন,
সূর্য ডুবতে ডুবতে পৃথিবীর বুকজুড়ে ছড়িয়ে গেল সোনালি নিঃশ্বাস।
একটা পাতা হঠাৎ নড়ে উঠল বাতাসে।
পৃথিবী যেন চিঠিটা গ্রহণ করল।
পাঁচ
বহু বছর পর,
কোনো দূর গ্রহ থেকে ফিরে আসা এক শিশু খুঁজে পায় সেই বাক্স।
চিঠি পড়ে সে কাঁদে না—
শুধু গাছের নিচে বসে বলে, “আমরা আবার ফিরব মা, এবার সত্যিই ভালোবাসতে।”১. সময়ের ছায়া
অতীতের পথে হেঁটে চলে
একটি ছায়া—নীরব, কালো,
হৃদয়ে তার শূন্য বাজে,
স্মৃতি খেলে লুকোচুরি-চালো।
২. নদী বলে
নদী বলে, "আমি চলি",
থেমে থাকলে জল হয় গলি।
পাথর চিরে, ঘুম ভেঙে দিয়ে,
আমি প্রাণে প্রাণ ছুঁইয়ে দিই।
৩. চন্দ্রবিন্দু
তোমার নামের পাশে বসিয়ে দিলাম
একটি চন্দ্রবিন্দু—
তোমার মৌনতা যেন
তারার চেয়েও অম্লান সুন্দর।
৪. বৃদ্ধ বৃক্ষের কণ্ঠস্বরে
একটি গাছ বলে গেল
হাজার পাতা ফেলে,
"সবই গেছে—রয়ে গেছে শুধু
হাওয়া আর সূর্যের কেলে।"
৫. দূরের গ্রহ
রাতের আকাশে এক নীল দাগ,
সে বুঝি কোনো গ্রহের পাঠ,
ভবিষ্যৎ আমায় ডাকছে দূরে,
অজানা পথে রেখে আলোর পাঠ।
৬গল্প: ছেঁড়া জুতার গান
✍️ লেখক: মোঃ জনি
এক
রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে এক কিশোর। নাম রাজু। বয়স হয়তো তেরো-চৌদ্দ। তার পরনে ছেঁড়া স্কুলড্রেস, পায়ে ফাটা একজোড়া পুরোনো জুতো—ডান পায়ের সামনের অংশ ফেটে গেছে, ভেতর থেকে দেখা যায় মোজা না পরা পায়ের আঙুল।
তবুও তার মুখে হাসি। হাতে একটা পুরোনো খাতা আর টিউশনির ব্যাগ।
সে পড়ে শহরের এক সরকারি স্কুলে। স্কুলে যেতে হয় হেঁটে হেঁটে, প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা। জুতো ছেঁড়া হলেও সে ভাবে—“যতদিন না পা রক্ত দেয়, ততদিন তো এগোনো যায়!”
দুই
রাজুর বাবা রিকশাওয়ালা। মা গৃহকর্মী। সংসারে অভাব, কিন্তু মানসিকতায় কোনো দারিদ্র্য নেই।
একদিন স্কুলে শিক্ষক বললেন, “আগামীকাল বিজ্ঞান প্রদর্শনী। যার যার প্রকল্প তৈরি করে আনবে।”
সবাই হৈ হৈ করে বলল—“আমি রোবট বানাব!”
“আমি সৌরচালিত গাড়ি বানাব!”
রাজু চুপ করে রইল। তার কাছে নেই খেলনা গাড়ি, নেই ব্যাটারি, নেই চার্জার। তবু সে রাতে ঘুমোলো না।
ভাঙা ঘড়ির যন্ত্র, বুড়ো টর্চলাইট, একটুখানি তার—সব জোড়াতালি দিয়ে বানিয়ে ফেলল একটা ছোট্ট বাতি—যা দিন হলে নিভে যায়, আর রাত হলে জ্বলে ওঠে।
তিন
পরদিন স্কুলে বিজ্ঞানের মেলায় রাজুর প্রকল্প দেখে শিক্ষক থমকে গেলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি এটা কোথা থেকে শিখলে?”
রাজু মাথা নিচু করে বলল, “ইউটিউবে স্যার। ভাইয়া ফোনে দেখতে দিত মাঝে মাঝে। তখন দেখে শিখেছিলাম।”
শিক্ষক হাসলেন, বললেন, “তুমি জানো তুমি কী বানালে? এটা একটা 'লাইট-সেন্সর' টেকনোলজি!”
সবাই অবাক। ছেঁড়া জুতো, পুরোনো ব্যাগ—তার ভেতর এমন আলো?
চার
রাজুর প্রকল্প প্রথম স্থান পেল। জেলা পর্যায়ে ডাক এল। সেখানে এক ইঞ্জিনিয়ার প্রশ্ন করলেন, “তুমি ভবিষ্যতে কী হতে চাও?”
রাজু উত্তর দিল, “আমি আলো দিতে চাই—যেখানে যেই ঘরটায় রাতে এখনো আলো জ্বলে না, সেখানে একটা ছোট্ট বাতি জ্বলুক আমার কারণে।”
পাঁচ
কয়েক বছর পর, রাজুর নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালু হয়—“ছেঁড়া জুতার আলো।”
যারা স্কুলে যেতে পারে না, যারা বিজ্ঞান বুঝতে চায়, অথচ সামর্থ্য নেই—তাদের হাতে রাজু পৌঁছে দেয় একটা নতুন সকাল।
সে এখনো আগের মতোই হাঁটে—কিন্তু নতুন জুতোয় নয়, পুরোনো ছেঁড়া জুতার স্মৃতি সঙ্গে করে।
কারণ, রাজু জানে, ঠিক সেই ছেঁড়া জুতার ফাঁক দিয়ে একদিন পৃথিবীর আলো ঢুকেছিল।
সমাপ্ত।