গল্প: শেষ ট্রেনের আগে
✍️ লেখক: মোঃ জনি
এক
রাত ৯টা ৫৭। কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ৫।
মেয়েটির চোখে উদ্বেগ, ছেলেটির মুখে নির্লিপ্ত হাসি।
মেয়েটির নাম নীলা। চাকরি করে খুলনায়, এসেছিল ঢাকায় ট্রেনিংয়ে। আজ রাতেই ফিরে যাবে। শেষ ট্রেন ছাড়বে ১০টায়।
ছেলেটির নাম আদিত্য। পুরনো বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়ত। তারপর কেটে গেছে প্রায় তিন বছর—আজ হঠাৎ দেখা। নীলার হাতে কফি, আদিত্যর হাতে চায়ের কাপে ভাপ।
নীলা বলল, “আচ্ছা, ট্রেনটা যদি মিস করি?”
আদিত্য বলল, “তাহলে আমি বলতাম, আরেকটা রাত থাকো। গল্প করবো। রিকশায় শহরটা ঘুরে দেখাবো।”
নীলা চুপ।
দুই
বসে থাকা মিনিট দু’য়েক।
আদিত্য বলল, “তুমি জানো, আমি প্রতিদিন এখানে আসি। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়াই। কারণ, ভেবেছিলাম তুমি একদিন ঠিক ফিরে আসবে।”
নীলা তাকিয়ে রইল—আকাশের ওপরে।
“তুমি তো খুব সাহসী ছিলে আগে,” বলল সে, “এখনো কি তাই আছো?”
আদিত্য মুচকি হাসল, “তুমি কি সাহসী ছিলে, যে চলে গেলে—একটাও কিছু না বলে?”
নীলা নিচু গলায় বলল, “তোমাকে ভালোবাসতে ভয় পেয়েছিলাম... হারিয়ে যাওয়ার ভয়।”
আদিত্য কিছু বলল না। শুধু কফির কাপটা হাতে নিল, শেষ চুমুকটুকু খেল।
তিন
ঘড়িতে তখন ৯:৫৯।
লাইনে ট্রেন ঢুকছে। বাঁশির শব্দ। লোকেরা ব্যাগ হাতে ছুটছে।
নীলা উঠে দাঁড়াল। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বলল, “আচ্ছা, এবার যাই?”
আদিত্য বলল না “যেও না”, বলল না “থেকে যাও।”
শুধু জিজ্ঞেস করল, “ফেরার তারিখটা কি জানা আছে?”
নীলা তাকিয়ে বলল, “না। তবে তুমি কি প্রতিদিন এখানেই থাকবে?”
আদিত্য চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ। যতদিন না শেষ ট্রেনটা চলে যায়।”
চার
ট্রেন ছাড়ল।
আদিত্য দাঁড়িয়ে রইল, সেই পুরনো প্ল্যাটফর্মে।
নীলা জানালার পাশে বসে, জানালার কাঁচে কুয়াশা জমে গেলে একটা আঙুল দিয়ে লিখল — “আবার দেখা হবে।”
আর আদিত্য?
সে ঠিক পরের রাতেও একই সময়, একই জায়গায় থাকবে—
কারণ কিছু শেষ ট্রেন আর শেষ কথার জন্য অপেক্ষা করেই আসে।
সমাপ্ত।
Md Hasibul Ialam
Verwijder reactie
Weet je zeker dat je deze reactie wil verwijderen?