গল্প: পেনশনের টাকায় চাঁদ
✍️ লেখক: মোঃ জনি
এক
আব্দুল হাকিম সাহেব—একজন অবসরপ্রাপ্ত ডাক বিভাগের কর্মচারী। সরকারি চাকরি করেছেন তিরিশ বছর, নিয়ম করে ডাক বিতরণ করেছেন শহরের অলিতে-গলিতে।
এখন বয়স ছিয়াত্তর, চোখে চশমা, হাঁটেন লাঠিতে ভর দিয়ে।
তবু প্রতিদিন সকালে উঠেই রান্নাঘরে যান, ছেলেটার জন্য দুধ-রুটি গরম করে রাখেন।
ছেলেটার নাম রাশেদ।
প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাকিম সাহেবের বেতনের টাকায় পড়েছে। এখন রাশেদ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার—ঢাকায় বড় কোম্পানিতে চাকরি করে, তবে ছয়মাসে একবার বাড়ি আসে কি আসে না।
দুই
হাকিম সাহেবের পেনশন আসে মাসের শুরুতে। ব্যাংকের কিউয়ে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা তোলেন, তারপর দুটো জিনিস কেনা তার অভ্যাস—একটা মিষ্টির প্যাকেট (রাশেদের পছন্দ), আর একটা খাম।
খামে লেখা থাকে—
“আমার ছেলে, তুমি যদি আজ থাকতাম আমার সামনে, তাহলে এই টাকা দিয়ে তোমার জন্য একজোড়া চামড়ার জুতা কিনে দিতাম।”
এমন অনেক খাম জমে আছে তার ছোট টেবিলের ড্রয়ারে। একটাও কখনো পাঠান না। শুধু লেখেন, ভাঁজ করে রাখেন।
তিন
একদিন রাশেদ ফোনে বলল,
—“আব্বা, এবার ইদে আসতে পারছি না। অফিসে চাপ।”
—“আচ্ছা বাবা, কোনো অসুবিধা নেই,” হাকিম সাহেব বললেন।
তারপর লাইনটা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি খাম খুঁজে বের করলেন।
এবার লিখলেন,
“তোর অনুপস্থিতি এই ঈদের দিনে ঘরের বাতাসকেও ভারী করে তুলেছে। তবে চিন্তা করিস না, আমি রুটি বানাতে শিখে গেছি। তোর জন্য বানিয়েছিলাম—গরম থাকতে থাকতে রেখে দিলাম চাঁদের উদ্দেশে।”
চার
পরদিন সকালে পাড়া দেখে, হাকিম সাহেবের ঘরের সামনে একটা কুরিয়ার কোম্পানির গাড়ি দাঁড়িয়ে।
ছোট একটা বাক্স। ভেতরে একজোড়া দামি স্যান্ডেল, আর একটা চিরকুট:
“আব্বা, তোমার হাঁটার শব্দটা মনে পড়ে। এবার তুমি একটু ভালো করে হেঁটে এসো, ঠিক সেই পুরোনো ডাকবাবুর মতো। ঈদের সালাম।”
হাকিম সাহেব হাসলেন—অশ্রুসজল চোখে।
আর রাতে, তার খামে লেখা হলো—
“আজকে প্রথমবার মনে হচ্ছে, পেনশনের টাকায় আমি সত্যি একটা চাঁদ কিনেছি।”
সমাপ্ত।
🌙
Md Jony
---
"ছাদবিলাস"
তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বন্ধু খুব একটা নেই, নীরব, চুপচাপ ছেলে। ক্লাস শেষ করে সে প্রায়ই উঠে যায় মেসের ছাদে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে ছাদটাই হয়ে ওঠে তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
কিন্তু সে খেয়াল করল, প্রতিদিন ঠিক সাড়ে ছটায় পাশের ছাদে একটা মেয়ে এসে বসে—হাতের খাতায় কিছু লেখে, কখনো চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তন্ময় প্রথমে পাত্তা দেয়নি। তারপর ধীরে ধীরে প্রতিদিন ওর আসাটাই একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়াল। ওর নীরবতা যেন তন্ময়ের একাকীত্বকে একটু একটু করে ভাঙছিল।
তারা কখনো কথা বলেনি। শুধু মাঝে মাঝে চোখাচোখি হতো। একদিন মেয়েটা হাতে একটা কাগজ উঁচু করে ধরল—তাতে লেখা ছিল,
“তুমি কি চুপ করেই গল্প বলো?”
তন্ময় মুচকি হাসল। পরদিন সে-ও একটা কাগজ নিয়ে এলো—
“হ্যাঁ, শব্দ ছাড়া কথা বলা আমার প্রিয়।”
এরপর শুরু হলো ছাদের গল্প। শব্দহীন কথোপকথন, চোখের ভেতর হাসি, পকেটের কাগজে লেখা স্বপ্ন।
কিন্তু একদিন হঠাৎ মেয়েটা আর এল না। এক সপ্তাহ কেটে গেল, তন্ময় ছাদে বসে থাকত, তাকিয়ে থাকত সেই খালি ছাদটার দিকে।
নবম দিনে সে একটা ছোট চিরকুট পেল নিজের ছাদে উড়ে আসা অবস্থায়:
“আমাকে যেতে হলো। কিন্তু তুমি যে নীরবতায় কথা বলতে পারো, সেটা জানিয়ে দিলেই আমি শান্ত থাকি। ধন্যবাদ, তন্ময়।”
তন্ময় সেই চিরকুটটা এখনো তার খাতার মাঝখানে রেখে দিয়েছে।
আর এখন সে শব্দে নয়—নতুন করে গল্প বলতে শিখেছে… চুপ করে বসে থাকলেও কেউ বুঝতে পারে, সে কিছু না বলেও অনেক কিছু বলছে।
---
আরও গল্প চাইলে তো বললেই হবে। আপনি চাইলে এবার একটু হাসির গল্প দেই, না কি অ্যাডভেঞ্চার বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কিছু? কী মুডে আছেন বলেন 😊
टिप्पणी हटाएं
क्या आप वाकई इस टिप्पणी को हटाना चाहते हैं?