9 w ·übersetzen

রাশেদ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখত—একদিন সে একজন ডাক্তার হবে। মাটির ঘরে জন্ম নেওয়া এই ছেলেটা প্রতিদিন ভাঙা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল, চোখে অনিশ্চয়তার ছায়া, তবুও মুখে একটা স্থির প্রত্যয়—“আমিও পারব।” বাবা ছিলেন দিনমজুর, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাড়িতে ছিল দু’বেলা খাওয়ার অনিশ্চয়তা, কিন্তু পড়ালেখার প্রতি মায়ের ছিল অদম্য আগ্রহ।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে রাশেদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হল। পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু আনন্দ বেশি দিন টিকল না। বাবার হঠাৎ স্ট্রোক হল। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে বাড়ি বন্ধক রাখতে হল। রাশেদ তখনও পড়ালেখায় মনোযোগ হারাল না। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি করে খরচ চালাত।

একদিন মেডিকেলের তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার বলল—“ক্যান্সার।” চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল রাশেদের জন্য। মেডিকেলের খরচ, বাবার ওষুধ, মায়ের চিকিৎসা—সবকিছু মিলে যেন জীবনটা একটা দুঃস্বপ্নে রূপ নিল। অনেক চেষ্টা করেও মাকে বাঁচাতে পারল না। মায়ের মৃত্যু রাশেদের জীবনে চিরস্থায়ী ছায়া ফেলে দিল।

এরপর থেকে সে একদম নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। বাবা ভেঙে পড়লেন, আর রাশেদ কেবল নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখত। সবার জন্য হাসিমুখে থাকলেও ভিতরে ভিতরে সে একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। কোনো বন্ধুর সাথেও সে আর মনের কথা ভাগ করত না।

মেডিকেল পাশ করল ঠিকই, কিন্তু স্বপ্নটা ততদিনে অনেকটাই ঝাপসা হয়ে গেছে। সে এখন একজন ডাক্তার, কিন্তু হৃদয়ে রয়ে গেছে ক্ষতের দাগ। যখনই রোগীর মুখে ‘মা’ শব্দটা শুনে, বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। নিজের ব্যথা সে ভুলে গিয়ে রোগীদের ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে।

জীবনের কষ্ট হয়তো শেষ হয়নি, কিন্তু রাশেদ আজও লড়ছে। প্রতিদিন সকালে হাসপাতালের আঙিনায় দাঁড়িয়ে সূর্য উঠতে দেখে সে ভাবে—"মায়ের কথা রাখতেই হবে। যতই কষ্ট হোক, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।"

এভাবেই রাশেদের জীবন কষ্টের রোদের নিচে দাঁড়িয়ে, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রামে কেটে যায়।

image