সাত বছর বয়সী রনির পৃথিবীটা ছিল তার মায়ের পুরনো শাড়ির আঁচলের মতো। নরম, উষ্ণ আর ভালোবাসায় ভরা। বাবা নেই, তাই মা-ই ছিল তার সব। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আনতো, তা দিয়েই চলতো তাদের ছোট্ট সংসার। রনি জানতো, তাদের অভাব আছে, কিন্তু মায়ের হাসিমুখ দেখলে সব কষ্ট কোথায় যেন উবে যেতো।
একদিন রনি স্কুল থেকে ফিরে দেখে মা মনমরা হয়ে বসে আছে। “কী হয়েছে মা?” রনি জানতে চাইলো। মা প্রথমে বলতে চাইলো না, কিন্তু রনির পীড়াপীড়িতে বললো, “আরিফ সাহেবের মেয়ে তার জন্মদিনে দামি পুতুল চেয়েছে। তাই তিনি আমাকে কাজ থেকে ছুটি দিয়েছেন।” রনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সে জানতো, মায়ের এই ছুটি মানে কাজ নেই, টাকাও নেই।
রনি চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলো। তার ছোট্ট মাটির ব্যাংকটা দেখলো। তাতে কিছু খুচরো পয়সা আছে, যা সে অনেক কষ্টে জমিয়েছে। সে ভাবলো, এই টাকা দিয়ে কি মায়ের জন্য কিছু করা যায়? হঠাৎ তার চোখে পড়লো তাদের উঠোনের কোণে ফুটে থাকা বুনো ফুলগুলো। সেগুলো দেখতে ভারি সুন্দর!
পরের দিন সকালে রনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো। সে কিছু বুনো ফুল তুললো, তারপর তার জমানো সব পয়সা নিয়ে বাজারের দিকে চললো। বাজারে গিয়ে সে একটা ছোট প্যাকেট আর সুতো কিনলো। এরপর সে ফুলগুলো যত্ন করে প্যাকেটে ভরে, সুতো দিয়ে বেঁধে সুন্দর একটা তোড়া বানালো।
বিকেলে মা যখন কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো, রনি মায়ের হাতে তোড়াটা তুলে দিলো। “এটা তোমার জন্য মা,” রনি বললো। মা অবাক হয়ে তোড়াটা হাতে নিলো। বুনো ফুল, কিন্তু এত সুন্দর করে সাজানো! মায়ের চোখে জল এসে গেলো। সে রনিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
“এই ফুলগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফুল, রনি,” মা ফিসফিস করে বললো। রনি মায়ের মুখের হাসি দেখে বুঝলো, তার ছোট্ট উপহারটা মায়ের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। সেদিন রনি বুঝলো, ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি করা উপহারই সবচেয়ে মূল্যবান। আর এই ভালোবাসাই তাদের ছোট্ট সংসারটাকে আলোকিত করে রাখতো।
