নিজের মুখে সকলের সামনে ইভানকে তাকে তালাক দিয়েছে। যার মানে ইভান পনেরো বছর পর ও ইনায়াকে ঘৃণা করে। ইনায়া শান্ত স্বরে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইভানকে বলে -
"- দীর্ঘ পনেরো বছর পর আপনার সাথে আবার দেখা হলো আমার ইভান ভাই। যদি সাতদিন আগে ছাদ থেকে আমাকে ধাক্কা না দিতেন তাহলে হয়তো এর আগে আপনার সাথে দেখা হয়ে যেতো। তবে নাইস টু মিট ইউ ইভান ভাই "।
ইনায়া বেশ শান্ত হয়ে কথাটা বলে তবে ইভান একটু অবাক হয় ইনায়ার এতো নরমাল ব্যবহার দেখে। কারণ ইভানের তালাক দেওয়া কথাটা ইনায়া শুনতে পাই তবুও এতো সাধারণ ব্যবহার করছে। ইভান বলে -
"- হুম অনেক দিন পর দেখা হলো ইনায়া। তবে যদি কোনো দিন আমাদের দেখা না হতো তাহলে আরো ভালো হতো। ছাদ থেকে পড়ে মরে কোনো গেলেন না আপনি?
ইনায়া কথাটা শুনে হাসে আর বলে -
"- আসলে মারা যাওয়া বা বেঁচে থাকা সব উপর ওয়ালার হাতে থাকে। মানুষ শত চেষ্টা করলে ও কাউকে মারতে পারে না আবার বাঁচাতে ও পারে না। যেহেতু আপনি আমাকে তালাক দিলেন আমি আর আপনার কেউ হয় না। আজকের পর থেকে আমাদের মধ্য থাকা সকল সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে "।
"- ইনায়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো ও না কোনোদিন। পনেরো বছর আগে বা পরে এই ইভান চৌধুরী সবসময় ইনায়াকে ঘৃণা করে গেছে আর ভবিষ্যতে ও তাই করে যাবে "।
ইভানের মুখে ঘৃণার কথাটা শুনে বেশ কষ্ট হয় ইনায়ার একজন নারী যতই শক্ত হোক না কোনো তার স্বামীর ঘৃণা সে সয্য করতে পারে না। তবে ইনায়ার মাথায় অনেক ব্যাথা করছে সেখান থেকে অবিরাম রক্ত পড়ে যাচ্ছে। শরীরের অসুস্থতা আর রক্ত শূন্যতার কারণে ইনায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নাই। ইনায়া নিজের মাথায় হাত দেয় তার চোখের সামনে সব অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। অরুণা বেগম দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইনায়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে। তিনি তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে গিয়ে ইনায়াকে ধরে ফেলেন।
ইনায়া পড়ে যায় তবে অরুণা বেগম তাকে ধরে ফেলে ইনায়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অরুণা বেগম দেখে ইনায়ার মাথা থেকে রক্ত পড়ছে সেটা দেখে ওনি বলে -
"- ইনায়া কি হয়েছে মা তোর? ওর মাথা থেকে অনেক রক্ত পড়ছে। নাতাশা যাও তাড়াতাড়ি ঔষধ নিয়ে আসো ডক্টরকে ফোন করো। এই ইনায়া "।
ডক্টর আসে ইনায়ার রুমে ওর চেকআপ করতে থাকে মাথায় কেটে যাওয়া স্থানে আবার ঔষধ লাগিয়ে দেয়। অরুণা বেগম এতোখন ইনায়ার পাশে বসে ছিলো ইনায়ার চেকআপ শেষ হলে। অরুণা বেগম জিজ্ঞেস করে ডক্টরকে -
"- ডক্টর কি হয়েছে ইনায়ার ও মাথা থেকে রক্ত কোনো বের হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে কি ডক্টর "।
"- না অরুণা ম্যাম তেমন কোনো সমস্যা না আসলে হঠাৎ করে কোময় থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার কারণে। ওর মাথার ক্ষত থেকে রক্ত বের হয়েছে তবে টেনশন করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ইনায়ার জ্ঞান
ফিরে আসবে "।
ডক্টর কথাটা বলে চলে যায় অরুণা বেগম ইনায়ার মাথায় হাত দিয়ে বুলাতে থাকে। ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে একদম বাচ্চার মতো অরুণা বেগম বলে -
"- ইনায়া তোর মামণি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছে তোর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। পনেরো বছর আগে ইভানের সাথে তোর বিয়ে দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। ইভানের মতো জঘন্য আর নিচুঁ মানসিকতা মানুষ তোর জীবন সঙ্গী হওয়ার যোগ্য না। তোর মামণি নিজের ভুল সংশোধন করে নিবে তোর স্বামী হিসাবে বেটার কাউকে তোর জীবনে নিয়ে আসবে "।
অরুণা বেগম কথাটা বলে ইনায়ার মুখের দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা ইনায়ার জ্ঞান ফিরে আসে ধীরে ধীরে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে তার পাশে অরুণা বেগম বসে আছে। অরুণা বেগম ঘুমিয়ে আছে আসলে ইনায়ার অসুস্থতা জন্য ওনি বিগত সাতদিন ভালো করে ঘুমাতে পারেন নাই। রাতে যখন ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করেছেন ওনি ইনায়ার মায়া ভরা মুখ তার সামনে এসেছে। ইনায়া দেখে তার মামণি ঘুমিয়ে আছে সেটা দেখে সে হাসে তবে একটু আগে ইভানের মুখ থেকে বলা তালাক শব্দটা তার কানে বাজে। ইনায়া মনে মনে বলে -
"- ইভান ভাই আপনি আমার জীবনের প্রথম পুরুষ যার জন্য এই পনেরো বছর অপেক্ষা করেছি আমি। স্বামী হিসাবে প্রতিদিন যাকে নিজের কাছে চেয়েছি প্রতিদিন যাকে একবার দেখার জন্য নিজের চোখের পানি বিসর্জন দিয়েছি। কিন্তু আজকে আপনি কতো সহজে আমাকে তালাক দিয়ে দিল