৯
আজ ১০ বছর পর দেশে ফিরেছে আকাশ। অতীতের সব এখনো মেনে নেয়নি সে। দেশে ফেরার ইচ্ছাও ছিলো না তবে আকাশের মা খুব অসুস্থ। মায়ের এমন মুহুর্তে কোনো ছেলে কি পারে দূরে থাকতে?
আকাশ এয়ারপোর্টে নেমে গাড়িতে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। গাড়ির জানালা দিয়ে চাঁদের সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। মনে পরে যায় ১০ বছর আগের সেই ঘটনা গুলো।
১০ বছর আগে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আমজাদ সাহেব, আমি আমার বন্ধুকে তার মৃ*ত্যু*র সময় কথা দিয়েছি। তুই কি চাস না আমি আমার কথা রাখি?
আকাশ, চাইবো না কেন আব্বু? কিন্তু আমারো তো একটা জীবন আছে। আমি কেন আমার লাইফ ন*ষ্ট করবো।
আমজাদ সাহেব, এখানে লাইফ ন*ষ্ট হওয়ার কি আছে? আমি এতো কিছু শুনতে চাই না। তোকে বিয়ে করতেই হবে ব্যাস।
আমজাদ সাহেব এই কথা বলে রুমে চলে যায়৷ আকাশ তাকিয়ে থাকে মা নুজাইফা বেগমের দিকে।
নুজাইফা বেগম, রাজি হয়ে যা বাবা। তর বাপ এক কথার মানুষ। এখানে আমার কিছু বলার নাই। আর সামিয়ার তো এই দুনিয়ায় আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তুই রাজি হয়ে যা বাবা। বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।
আকাশ কিছুই বললো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সবে মাত্র ক্লাস ৮ এ পড়ে এখনি বিয়ে করলে মানুষ কি বলবে?
কিন্তু আজমাদ সাহেব তার কথায় অনড়। নুজাইফা বেগম বললেন, কালকে পারিবারিকভাবে তোদের বিয়ে হবে। আশা কোনো ঝামেলা হবে না বিয়েতে।
আকাশ রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। এইটুকু বয়সে সে আর কিইবা করতে পারবে। এদিকে সামিয়াও খুব ছোট মাত্র ক্লাস ৫ এ পড়ে। বিয়ে শাদী কি জিনিস তা সে জানেও না।
,,,,,,,,,,
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে আকাশের। রেডি হয়ে নিচে আসতে বলে যায়। অনিচ্ছা সত্বেও সে রেডি হয়ে নিচে যায়।
নিচে গিয়ে দেখে বাবা মা সহ ২/৪ জন লোক বসে আছে। আর পাশে বউ সেজে বসে আছে ক্লাস ৫ এর বাচ্চা সামিয়া।
সামিয়াকে দেখে আকাশের বেশ রাগ হলো। ওর জন্যই তো আকাশের জীবনটা শেষ। হঠাৎ আমজাদ সাহেব ডাক দিলো, ঐখানে দাড়িয়ে না থেকে তারাতাড়ি এখানে এসে বস।
আকাশ নিচে গিয়ে বসলো সামিয়ার পাশে। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
কাজী সাহেব, সামিয়া মা বলো কবুল।
সামিয়া, বকুল
সামিয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। কিন্তু আকাশের যেনো এখন হাসি পাচ্ছে না। এই অবুঝ বাচ্চার সাথে সে কিভাবে সংসার করবে?
কাজী সাহেব আবার বললেন, বকুল না মা কবুল কবুল।
সামিয়া, আইচ্ছা আঙ্কেল কবুল কবুল
কাজী সাহেব, মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ এবার আকাশ বাবা বলো কবুল।
আকাশ একবার মায়ের দিকে তাকায়। মা ছেলেকে কবুল বলতে আগ্রহ দিচ্ছে কিন্তু সে বলছে না।কারন এই মেয়ে তার পছন্দ না।
আমজাদ সাহেব, কি হলো আকাশ কবুল বল।
আকাশ, কবুল।
কাজী সাহেব, আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ে হয়ে গেছে তবে ওরা বড় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আলাদা রুমে রাখবেন।
আমজাদ সাহেব, জি তা আমরা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি।
কাজী সাহেব চলে গেলেন। আকাশ মন ম*রা হয়ে বসে আছে। সামিয়া শাড়ি নিয়ে খেলা করতে করতে হঠাৎ আকাশকে বলে, আকাশ ভাইয়া আমার শাড়িটা খুলে দিবে? খুব কষ্ট হচ্ছে এভাবে।
সামিয়ার কথায় সবাই আবার সজোরে হেসে উঠে। এদিকে আকাশ বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। রাগে বাসা থেকে বের হয়ে যায় তখন।
রাত ৮ টায় বাসায় ফিরে সে। বাসায় ফিরে চলে যায় আমজাদ সাহেবের রুমে।
আকাশকে দেখে আমজাদ সাহেব বলে, কিছু বলতে চাস?
আকাশ, জি আব্বু।
আমজাদ সাহেব, বল কি বলবি।
আকাশ, আব্বু আমি বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। দেশে আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ তুমি আমায় বাহিরে পাঠানের ব্যবস্থা করো।
আমজাদ সাহেব ভাবলেন ছেলে যেহেতু তার কথা মেনে বিয়ে করে নিয়েছে তাহলে তারও উচিৎ ছেলের অনুরোধ টুকু রাখা।
আমজাদ সাহেব বললেন, আচ্ছা আমি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলে জানাবো। তুমি এখন যাও।
আকাশ নিজ রুমে চলে গেলো। আমজাদ সাহেব নুজাইফা বেগমকে ডাকলেন।
নুজাইফা বেগম, কি হয়েছে কিছু বলবে?
আমজাদ সাহেব, আকাশ বিদেশ গিয়ে পড়াশোনা করতে চাচ্ছে তুমি কি বলো।
নুজাইফা বেগমের মনটা ছেত করে উঠে। আতঙ্কিত হয়ে বলে, বিদেশ কেন? দেশে কি হয়েছে?
আমজাদ সাহেব, দেশে নাকি ওর ভালো লাগে না। আর ওতো আমাদের কথা মেনে বিয়েটা করেছে। তাই ওর আবদারটুকু রাখা উচিৎ না?
নুজাইফা বেগম বললেন, আপনি যা ভালো মনে করেন।
বলে চলে গেলেন। কোনো মা কখনো চান না তার সন্তান তার থেকে দূরে চলে যাক। নুজাইফা বেগমও চান না ।
আমজাদ সাহেব ঠিক করলেন আকাশকে কানাডা তার বন্ধুর বাসায় পাঠাবেন। বন্ধুর নাম আজহার সাহেব। ফোন দিলো বন্ধুকে। কথা বলে ঠিক হলো আগামী শুক্রবারে ফ্লাইট। আমজাদ সাহেব সবাইকে জানিয়ে দিলো বিষয়টি।
আকাশ বেশ খুশি। কিন্তু মন মরা হয়ে গেছেন নুজাইফা বেগম। আমজাদ সাহেব উপরে উপরে ভালো থাকলেও ওনারও মন খারাপ।
দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে আসলো। আকাশকে বিদায় দেয়ার সময় বেশ কেদেছিলো নুজাইফা বেগম। সামিয়ার চোকেও জল এসেচছিলো। আমজাদ সাহেব হয়তো বুকে পাথর চাপা দিয়ে জল আটকে রেখে ছিলো।
আকাশ সবার থেকে বিদায় নিয়ে ছোট বোন ইকরার সাথে একটু দুষ্টুমি করে গাড়িতে উঠে চলে গেলো এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে বিমানে করে পৌঁছে যায় কানাডায়।
আকাশ মনে মনে বলতে থাকে, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায় ঐ ছোটলোক টাকে বিয়ে করতে হয়েছে শুধু তোমাদের জন্য। আজ তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো আর কখনো দেখা হবে না আশা করি।
আকাশ যেমনটা বলেছিলো ঠিক তেমনটাই করেছে।
দীর্ঘ ১০ টি বছরে একটি বারের জন্যও সে বাবা মা কারো সাথেই কথা বলেনি। ছোট বোন ইকরার সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলতো। আর সামিয়ার কথা বললে সে ফোনই কেটে দিতো।
চলবে,,,,,,
আজও_তর_অপেক্ষায়
আকাশ_খান
পর্ব_১
সূচনা_পর্ব