#মারলেও জবাব দিতো না। অথচ কী হলো এখন মানুষটার? আমজাদ সওদাগরকে যেন এক ফোঁটাও দেখতে পারেন না। কথায় কথায় কেমন ছ্যাত করে উঠেন।
আমজাদ সওদাগর নির্ভার, নিরুদবিগ্ন স্বরে বলেন, "কী হয়েছে তোমার? এভাবে কথা বলো কেন? গুরুলঘু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো?"
"আমি তোমার সাথে কেমন করে কথা বলছি তাতে কি আদৌ কিছু যায় আসে না-কি? আমার কোনো কিছু তোমার জীবনে প্রভাব কেন ফেলবে, আমজাদ? আগে তো এমন হতো না?"
আমজাদ সওদাগর হাত ছেড়ে দেন। উত্তরটুকু আর দেন না। তিনি হলেন বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের লোক। দরকার না হলে জবাবটুকু দেন না। আর অবনী বেগমের সাথে কথা বলার টানই তো তিনি কখনো অনুভব করেননি এর আগে। সেই যে এক নারীতে আবদ্ধ হয়ে ছিলেন এরপর আর দ্বিতীয় কারো কথা ভাবাে কথা মাথাতেও আসেনি।
কিন্তু আজকাল বড়ো মন পোড়ে তার। দ্বিধা জমে বুকে। অবনীটা আর আগের মতন৷ আর তাকে ডাকেন না। কথাও বলতে চান না। কিন্তু এখন যে আমজাদ সওদাগরের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে অবনী। এখন কি চাইলেও সেই অভ্যাস বদলাতে পারেন? পারেন না৷ কিন্তু এ সকল কথা অবনীকে বলবে কে?
অবনী বেগম স্বামীর নীরবতা দেখে আর কিচ্ছুটি বললেন না। আলমারিটা আটকে বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। যেন তার রাজকার্য রয়েছে। আজকাল আর আমজাদ সওদাগরকে নিয়ে ভাবনার সময় নেই।
কিশোরী অবনীর সাথে এই অবনীর বিস্তর পার্থক্যে মনে যাতনা হয় আমজাদ সওদাগরের। এত যত্ন করা মানুষটা হারিয়ে ফেলেছেন অযত্নে তা কি আর তার মন জানে না?
•
ড্রয়িং রুমের একদিকে আড্ডা চলছে বর্তমান জেনারেশনের। ওদের হাসাহাসিতেই জুড়িয়ে যাচ্ছে ড্রয়িং রুম। সবচেয়ে বেশি হাসছে চিত্রা মেয়েটা। যেন ওর সুখের বাঁধ ভেঙেছে। কী এক আনন্দ ওর জীবন জুড়ে। বড়োরা কথার মাঝে সাঝেই তাকাচ্ছে এদিকটায়। চিত্রার হাসিতে তাদের যেন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা তো বরাবরই এমন ছিলো। হাসতে ভালোবাসে। হুট করে কয়েক বছর মেয়েটার জীবনে বেশ ঝড় গিয়েছে। এখন আবার সেই পুরোনো চিত্রাকে ফিরে পেতেই তাদের ভেতর আনন্দ কাজ করছে।
নওশাদ চিত্রার হাসির মাঝেই বলল, "চিত্রা, তোমাকে বেশি বেশি খুশি লাগছে যে আজকাল? কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?"
সবাই সে কথায় ঠোঁট চেপে হাসলো। অহি নওশাদের সাথে তাল মিলিয়ে বলল, "নিশ্চয় আছে। হয়তো প্রেমে-টেমে পড়েছে।"
চাঁদ আপা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলল, "কেবলই কি প্রেমে পড়েছে? বল, গুরুতর প্রেমে পড়েছে। আজকাল তো ও কিছুই দেখছে না চোখো। প্রেম জমে ক্ষীর।"
চিত্রার এবার লজ্জা লাগছে। আড়চোখে সে একবার বোনদের দিকে তাকাচ্ছে, তো একবার বড়োদের দিকে তাকাচ্ছে৷ চোখের ইশারায় শাসাচ্ছেও। কিন্তু কে শুনে কার কথা?
নওশাদ চিত্রার নাজুক অবস্থা দেখে আরেকটু টিটকারি মেরে বলল,
"প্রেম করো তো কী হয়েছে, চিত্রা? লজ্জা পাচ্ছো কেন? তুমি ছেলের ঠিকানা বলো। আমরা প্রয়োজনে পাত্রকে তুলে এনে তোমার সঙ্গে বিয়ে দিবো। চিন্তা নাই অত। তা পাত্রের বাড়ি কি কাছে? না-কি অনেক দূরে?"
"অনেক দূরে। শ্বাস বন্ধ করে ঠিক পাঁচ পা যেতে হয়। এতদূর যে যেতে যেতে এক মিনিট লেগে যায়।" আবারও ঠাট্টা করল অহি। চিত্রার যেন লজ্জায় মাথাকাটা। এ কাদের পাল্লায় পড়লো সে? সকলে তাকে লজ্জা দিতে যেন ব্যস্ত। তাছাড়া বাড়ির বড়োরাও তো এখানে আছেন। সবচেয়ে বড়ো কথা আব্বু এখানে বসা। যদি উনিশ-বিশ হয় তখন কী হবে?
চিত্রা কথা ঘুরানোর চেষ্টা করল। বলল, "ধ্যাত, চুপ থাকোতো। আমি গিয়ে বনফুলকে নিয়ে আসি দাঁড়াও।"
"তাই নাকি? কেবল বনফুলকেই আনতে যাবে তো, শ্যালিকা? না-কি বনফুলের পাশাপাশি বনফলকেও দেখার ইচ্ছে?"
প্রথম 'বনফল' শব্দটির অর্থ বোধগম্য না হলেও পরক্ষণেই নওশাদের কথা ঠিক বুঝতে পারল চিত্রা। জিভ কেটে চোখের ইশারায় বাবাকে দেখালো। বলল, "ধ্যাত, যাবোই না।"
টুইংকেল এই সবকিছুতেই এতক্ষণ কেবল মুচকি হেসে ভূমিকা রাখছিলো। চিত্রা যাবে না বলাতে সে আগ্রহ নিয়ে, চিত্রারন রাখতেই বলল, "আচ্ছা, তুমি বসো। আমি না-হয় ডেকে নিয়ে আসি?"
চিত্রা সম্মতি দিলো খুশি মনে। আগ্রহী স্বরে বলল, "অবশ্যই। তুমিই ডেকে নিয়ে আসো।"
টুইংকেল চাঁদনীর হাতে তার ফোনটা রেখে বেরিয়ে গেলো।
বনফুলদের বাড়িতে তখনো সন্ধ্যার আলো জ্বালানো হয়নি। আকাশের গাঢ় আঁধারিয়া নীল অন্ধকারটুকু এসেই কোনো রকমে অন্ধকারে এক চিমটি আলোর ছটাক এঁকেছে। নীরব বাড়িটা। কোনো মানুষের সাড়াশব্দ নেই।
টুইংকেল আগ্রহ নিয়েই চপল পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। বনফুলের রুমে যাওয়ার আগেই তার চোখ পড়লো ড্রয়িং রুমের ডানদিকের রুমটায়। সেখানে চোখ পড়ারও একটি কারণ আছে। সেখানটায় জ্বলজ্বল করছে কিছু হলুদ তারার শেপের বাতি। জ্বলছেও সেগুলো। সে আলোয় ঘরের কোণার গিটারটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। টুইংকেলের আবার গিটার বেশ প্রিয়। তাই সে ঐ আকর্ষণেই এগিয়ে গেলো। হালকা দরজাটা ভেজানো ছিলো ঘরটার। সে দরজাটা খুলে ধীর পায়ে
Shorif nawaz sakil
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟