11 i ·Översätt

#
নিরু কিছুটা সময় নিলো। ভেতর ভেতর হয়তো গুছিয়ে নিলো কথাগুলো। এরপর ফুঁস করে শ্বাস ফেলে তুহিনের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
"দেখো তুহিন, আমি বিশ্বাস করি যে, এ জীবন কারো জন্য থেমে যাওয়ার নয়। এই জীবন গতিশীল। সময় পরিবর্তনশীল। আজ যা আমার, কাল তা অন্যকারো। এটাই নিয়ম। কিন্তু তুমি যদি সেই শোকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দাও, জীবনের সকল আনন্দ মাটি করে পথ ধরো বিষাদের তাহলে তা অত্যন্ত কাপুরুষের মতো কাজ হবে। কারো জন্যই জীবন থামিয়ে দিতে নেই। এই যে দেখো, আমি ঠিক যেই মুহূর্তে অনুভব করেছিলাম তোমার ভেতর নিজের অস্তিত্ব কমে আসছে ঠিক সেই মুহূর্তে আমি পথ বদলে নিলাম। আমার গতিশীল জীবনকে গতিশীল রাখলাম। কারণ এ জীবন কারো জন্য থামিয়ে দেওয়ার নয়। তোমার উচিত এগিয়ে যাওয়া। নাহয় আজ থেকে পাঁচ বছর পর গিয়ে তোমার আফসোস হবে। মনে হবে, ইশ্ কেন যে তখন জীবনটাকে থামিয়ে দিয়ে ছিলাম! আমি হয়তো প্রেমিকা হিসেবে তোমার জীবনে চিরস্থায়ী হইনি কিন্তু আমি বন্ধু হিসেবে সবসময় তোমার পাশে থাকবো। আর আমি বন্ধু হয়েই চাইবো তুমি এগিয়ে যাও। তুহিনের এগিয়ে যাওয়ার পথে নিরুপমার স্মৃতি যেন বাঁধা নাহয়।"

"তুমি আমাকে বুঝাতেই এসেছো তাই না? নিজে এগিয়ে গিয়েছো বলে আমাকেও এগিয়ে যাওয়ার কথা বলতে এসেছো?"

"সত্যি বলতে তুহিন, আমাকে যেদিন বাবা বললেন আমাদের হাসবেন্ডের সাথে দেখা করার কথা, আমি তোমার পাওয়া কষ্ট গুলোর জন্য মান করেই দেখা করতে গেলাম। দেখা করে বুঝলাম ও না গুছিয়ে ভালোবাসতে জানে না তোমার মতন। তবে খুব যত্ন করতে জানে। আর যে আমাকে কোনো সম্পর্ক ছাড়াই এতটা যত্ন করেছে সে আমাকে পেলে কতটা যত্ন করবে সেটা দেখার লোভ আমি ছাড়তে পারলাম না। এবং আমি মন খুলে বলতে পারি আমি ভালো আছি। হ্যাঁ তোমাকে এত সহজে ভুলে হয়তো যেতে পারবো না। বছরের পর বছর লাগিয়ে যে মায়ার জন্ম সেই মায়া কাটাতেও যে বছর লাগবে। কিন্তু মনের এক পাশটাতে আমার স্বামী মানুষটা যত্ন করেই জায়গা করে নিয়েছে। খুব চুপটি করে সে আমার মনের গভীরে চলে গিয়েছে। তাই আমি চাই তুমিও মুভ অন করো, তুহিন। আমি তোমার সুখী জীবন দেখতে চাই।"

"আমাকে ক্ষমা করো, নিরু। আমি ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু তোমার মতন এত ভালো হতে পারিনি কখনো। সত্যিই আমি তোমাকে ডিজার্ভ করি না। এজন্য ভাগ্য আমাদের আলাদা করেছে। তুমি সুখী হও। আমি মন থেকে চাই, তুমি সুখী হও।"

নিরু হাসলো। তুহিনের টেবিলে একটি লাল গোলাপ রাখলো নীরবে। সাথে ছোটো একটি চিরকুট। এরপর প্রস্থান নিলো বিনা বাক্যে। যেমন করে তার বিচ্ছেদ ছিলো চির নির্বাক তেমন করেই।
নিরু বেরিয়ে যেতেই তুহিন সেই চিরকুটটা তুলে নিলো। খুলতেই নিরুর লিখা লাইনগুলো ভেসে উঠলো,
"আমি আর আমার হাসবেন্ড টেকনাফ চলে যাচ্ছি। আমি এক বার বলেছিলাম টেকনাফ আমার পছন্দ। পাগলটা জানো অফিসে ট্রান্সফারের আবেদন করে ফেলেছিলো আমাকে না জানিয়ে। পরশুদিন হুট করে বলছে ওর টেকনাফ বদলি হয়েছে। আমি প্রচন্ড অবাক হতেই বলল— আমি টেকনাফ ভালোবাসি তাই ও সেখানেই আমাকে রাখবে। এমন পাগলও হয় বলো? তাই আজ চলে যাচ্ছি। শেষবার দেখা করে গেলাম। তুমি খয়েরী শাড়িতে দেখতে চেয়েছিলে আমাকে। কথা ছিলো আমাদের বিয়ের পর আমি শাড়িটা পরে দেখাবো। কিন্তু সেটা তো আর হলো না তাই আজ তোমার ইচ্ছে পূরণ করে গেলাম। মনে আছে তুহিন, একদিন গোলাপ কিনে দিতে বলায় তুমি বিরক্ত হয়েছিলে? আজ আমাদের বিচ্ছেদের শেষবেলায় আমি স্মৃতি হিসেবে গোলাপ দিয়ে গেলাম। ভালো থেকো, তুহিন। তুমি ভালো আছো জানলে আমার জীবনে সুখ পরিপূর্ণ হবে।"

ব্যস্ চিরকুটটি শেষ। তুহিনের চোখের জল ফোঁটায় ফোঁটায় গড়িয়ে পড়লো চিরকুটটাতে। সে গোলাপটাকে মুঠোয় আঁকড়ে ধরলো। তার ভালোবাসার শেষ সম্বল। তার বিচ্ছেদের স্মৃতি!
নিরুদের গাড়ি চলতে শুরু

34 m ·Översätt

বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।

পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,

ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।

আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
ও বাবা শেয়াল কোথা
ভেলোটা দাড়িয়ে হোথা
দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জাড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ম কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!

‘বাবা গো মা গো’ বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গিয়ে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!

যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা…!

======

image
34 m ·Översätt

কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেশ দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে প’ড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি’ উঠো না, শাস্ত্রবিদের ক’রো না ক’ বীর, ভয়-
তাহারা খোদার খোদ ‘ প্রাইভেট সেক্রেটারী’ ত নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি!
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কুলে-
রত্নাকরের খবর তা ব’লে পুছো না ওদের ভুলে’।
উহারা রত্ন-বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তা’রা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।

image
35 m ·Översätt

বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানে না সে কে তাহারে চাবে।
উদাস পথিক ভাবে।

বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে –
উদাস পথিক ভাবে।

বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে-
উদাস পথিক ভাবে।

হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।

======

image
35 m ·Översätt

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

======

image
36 m ·Översätt

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে-
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে-
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার -ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে-
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

======

image
image