হৃদপিন্ডটা ছলাৎ করেনি। কেবল ছোটো, খুবই ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস বুক থেকে বেরিয়ে এসেছে। চাঁদনী সেই শ্বাসটাকে মুক্ত করেই রিপ্লাই করল,
‘ফোন নাম্বার পেলে কীভাবে?’
মেসেজ পাঠিয়েই ফোনের স্ক্রিনের আলোটা বন্ধ করল। বন্ধ করল রুমের আলোটা। আবার আরামপ্রিয় ব্যক্তির মতন হেঁটে পৌঁছালো বারান্দায়। ফোনের বন্ধ আলোটা আবার জ্বলে উঠল। ওপাশ থেকে শাহাদাৎ এর নতুন মেসেজ,
‘তোমার আম্মুর থেকে নিয়েছি।’
মেসেজটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল চাঁদনী। ওন মা যে কেন এত বোকা তা ও বুঝে উঠতে পারে না। যেখানে ও বার বার করে সবাইকে বলেছে ওর যোগাযোগ নাম্বার, ঠিকানা যেন কেউ না পায় সেখানে মায়ের কি এটা করা উচিত হয়েছে?
কিছুটা ভোঁতা বিরক্ত নিয়ে চাঁদনী রিপ্লাই করল,
‘কোনো দরকার?’
ওপাশে সাথে সাথে সিন হলো। থ্রি ডট গুলো ঢেউয়ের মতন কাঁপছে স্ক্রিনে। মনে হচ্ছে ওপাশের মানুষটি বেশ গুছিয়ে, সময় নিয়ে কিছু লিখছে। চাঁদনী তাই অপেক্ষা করল। দরকারটুকু শুনে এরপর নাহয় বলবে, তুমুল দরকারেও আর ওকে খুঁজতে যেন না আসে। ও দূরে চলে এসেছে। অনেক দূরে। দরকার, অদরকারের সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন করে ফেলেছে আজ আড়াইটা বছর তো হতে চললো!
“আমার ওয়াইফের আবার মিসক্যারেজ হয়েছে! তোমায় কষ্ট দিয়ে ছিলাম তার ফল পাচ্ছি আমি।”
বিয়ের প্রথম প্রথম একবার না মিসক্যারেজ হলো শাহাদাৎ-এর স্ত্রীর? আবার! চাঁদনীর বেশ খারাপ লাগল। তবে ফর্মালিটিটুকু বজায় রেখে বলল,
“যত্ন নিও ওর। তাছাড়া বয়স তো কম ওর, আরেকটু সময় দাও।”
মেসেজটুকু লিখতে গিয়ে একবারের জন্য হাতটা থেমে গিয়েছিল। যে-ই লোকটার সাথে তার আট বছরের প্রেম ছিল এমনকি বিয়ে করেছিল আড়ালে, যেই লোকটার সাথে ও পরিপূর্ণ,সুখী সংসারের স্বপ্ন দেখেছিল সেই লোকটিকে আজ স্বান্তনা দিতে হচ্ছে অন্য কোনো একটা মেয়েকে স্ত্রীর রূপে দেখে! এজন্যই হয়তো বলে ভাগ্যের খেলা বুঝা দুষ্কর।
“চাঁদ, তুমি আমাকে ক্ষমা না করা অব্দি হয়তো আমি ক্ষমা পাবো না। আমার সাথে এসব চলতেই থাকবে। তোমার সাথে বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি। ক্ষমা কি করা যায় না একটিবার?”
এই মাঝারি আকারের মেসেজটি দেখে হাসল চাঁদনী। হাসারই তো কথা! সে এই দেশে এসেছে অনেকগুলো দিনতো হলো! নিজের পরিবার-পরিজন, আপন মানুষদের ছেড়ে তো তার এখানে আসার কথা ছিল না। না ছিল একা থাকার কথা। শাহাদাৎ নামক মানুষটা ভালো করেই জানে আজ চাঁদনীর একাকীত্বের সমস্ত দায় কেবল আর কেবলমাত্র তার। অথচ একটাবার এতদিনেও এক টুকরো মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করল না একাকী জীবন মেয়েটার কেমন কাটছে! আদৌ ভালো আছে কি-না সে নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ গুলো সামলে। এতদিন একবারও অনুভব করেনি সে যে মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছে। আজ দুঃখের দিন বলে মনে হচ্ছে অন্যায়ের কথা। দুঃখ ফুরিয়ে গেলে ঠিক আবার ভুলেই তো যাবে!
চাঁদনী এতসব মনের কথা ব্যক্ত করল না। কিছু কথা আড়ালে থাকা ভালো। তাহলে সামনের মানুষটি বুঝতে পারবে না কতটুকু ঝড় বয়ে যায় অন্তরে। কতটুকু গর্জনে ধ্বংস হয় একটি হৃদয় প্রতিনিয়ত!
“আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি, শাহাদাৎ। তোমায় ছেড়েছি মানে তোমার সম্পর্কিত সব ছেড়েছি। রাগ, অভিযোগ, অভিমান, ঘৃণা কিংবা ক্ষমা। তোমায় তো মনের কোথাও, কোনো অনুভূতিতে রাখিনি। শুধু শুধু এসব বলে অস্বস্তি অনুভব করিও না আমাকে।’
মেসেজটুকু সেন্ড করেই নীরবে ব্লক বাটনে ক্লিক করে আটকে দিলো, থামিয়ে দিলো এই যোগাযোগ। তার একেকটা শব্দ বড়ো মূল্যবান। ছেড়ে দেওয়া মানুষের জন্য সেসব শব্দ কেন ব্যবহার করবে সে? যাকে ছেড়ে দিয়েছে তার ছায়ার থেকেও বহু কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে। তাহলে নতুন করে আবার কেন নৈকট্যের গল্প হবে?
•
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। জুনের শহরে অসহ্য রোদ কিংবা ঝুম বৃষ্টি অবাকের কিছু নয়। জুন মাস হলো প্রেমের মতন। জ্বালিয়েও দিতে পারে আবার শীতলও করতে পারে।
রাত তখন আনুমানিক দশটা। চিত্রার ঘরে আজ আলো জ্বলছে। বাতাসে এলোমেলো উড়ছে বাতায়নের পাশ
Read More
Shorif nawaz sakil
Verwijder reactie
Weet je zeker dat je deze reactie wil verwijderen?