#চেপে ধরে আছে রুদ্র। ভেতরে সমস্ত রাগ জেনো উগলে দিতে চাইছে সে। নাতাশা ঘাড় ঘুরিয়ে অপকটে তাকালো রুদ্রর পানে। জিজ্ঞেস করলো, ' কি হইছে? হাত ধরলা কেনো?
-" তোর কি মনে হয় আমি তোকে চিনি নাহ?
নাতাশা মাথা নুইয়ে হাসলো, " ওহহ তাই? চেনো আমাকে?
রুদ্র দাঁত কটমট করে বললো, " চলে যা এই বাড়ি থেকে নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে নাতাশা। আমি বাবা মাকে সব বলে দিতে বাধ্য হবো! "
নাতাশা হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, " কি বলবে শুনি!
নাতাশার হেয়ালিপনায় ক্ষুপ্ত হলো রুদ্র। তড়িৎ গতিতে দুগাল শক্ত করে চেপে ধরে নাতাশার। এতেও ভাব-ভঙ্গির কোনো প্রতিক্রিয়া হলো নাহ। রুদ্র দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
" তুই আমার নাতাশা নাহ। হতেই পারিস নাহ! আমি আমার নাতাশাকে চিনি। "
-" তাতে কি? ১৯ বছর ধরে আমি সকলের কাছে নাতাশা, মৃত ইমা সিদ্দিকার একমাত্র মেয়ে। সম্পর্কে তোমার খালাতো বোন পাশাপাশি বউও বটে। আর এই নাতাশা, মুত্তাছির আবরার রুদ্রকে সবকিছুর বিনিময়ে ভালোবাসে। শুরুটা অনাকাঙ্খিতভাবে হয়েছিলো অজান্তেই, কিন্তু শেষটা হবে আমার ইচ্ছেতেই। এখন তুমি চাইলে সবাইকে সবকিছু হবে দিতেই পারো কিন্তু এতে লাভের লাভ কিছু হবে নাহ। বড়জোড় তুমি আরো নিচু বলে পরিচিত হবে সবার সামনে। "
নাতাশা কথাগুলো বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো রুদ্রর থেকে। ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসি নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেলো।
____
খুব ভোরে গাড়ি নিয়ে বের হলো নাতাশা। চারপাশে এখনো গুমোট অন্ধকার বিরাজ করছে। বাড়ির সকলেই এখন গভীর মুখে আচ্ছন্ন একমাত্র রুদ্র ছাড়া। বেশিরভাগ সময়ই নির্ঘুম রাগ কাটায় সে, ঘুম তার সঙ্গে ছলনা করে খুব। এই ঘুমে চোখ বুঁজে আসে আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম চলে যায়৷ নিত্যিদিন এসবই হয়। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি..
বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়েছে যার শেষাংশ, ছাই সাদা টাইলসের উপর পড়ে আছে। এরই মাঝে রুদ্র দেখলো নাতাশা গাড়ি নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে। কপালে ভাজ পড়লো রুদ্রর। এতো রাতে নাতাশা কই যাচ্ছে?
রুদ্রর কৌতুহল হলো খুব। বারান্দায় না দাঁড়িয়ে নেমে আসলো নিচে। নিজের বাইকটা নিয়ে গাড়ির পিছু নিলো রুদ্র। তবে নাতাশা বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলো, কেউ তার পিছু নিচ্ছে। নাতাশা কিছুটা আন্দাজও করতে পেরেছে, তার পিছু নেওয়া মানুষ রুদ্র।
-" মতি কাকা আপনি গাড়িটাকে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে পেছনের বাইকটার থেকে আড়ালে নিয়ে যান। রুদ্র আমার পিছু নিয়েছে, ও যাতে আমাদের আর দেখতে না পারে।
নাতাশার কথায় ড্রাইভার মতি সম্মতি জানালো। মতি ছিলো খুব দক্ষ একজন গাড়ি চালক, তাই নাতাশার কথা মতো তিনি গন্তব্যে না গিয়ে গাড়ি নিয়ে গোলোক ধাঁধার মতো এদিক ওদিক ঘুরেছে খানিকক্ষণ। রুদ্রও এতে বিচলিত হয়ে পড়ে, পরিশেষে ঘুরে ফিরে একই জায়গায় এসে থামলো সে। কিন্তু গাড়িটা চোখের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে বহুদূর।
রুদ্র পা দিয়ে সজোড়ে লাথি মারলো রাস্তায়, " শিটট!! শিটট!! এতো কাছে এসেও হারিয়ে ফেললাম।, রুদ্র নিজেকেই নিজে খানিকক্ষণ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে পুনরায় নাতাশে খুঁজতে আরম্ভ করলো। আজ যে করেই হোক ওকে খুঁজে পেতে হবে। এই হাইড এন্ড সিক লেখা এবার শেষ করতেই হবে।
____
নাতাশার গাড়ি এসে থামলো বুড়িগঙ্গা নদী তীরে। বসতি এলাকা এখন নির্জন হলেও এদিকটায় মানুষজন এখনো সজাগ। নদীর ঘাট মানুষের সমাগমে ভরে আছে, কেউ লঞ্চে করে আসছে, কেউবা নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে।
নাতাশা গাড়ি থেকে নেমে মতি কাকার হাতে হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে বললো, " কাকা গাড়িটা সাইড করে আপনি কিছু খাওয়া দাওয়া করেন। আমি কাজ সেরে আসছি। ".
নাতাশা দাঁড়ালো না আর। পা চালিয়ে চলে আসলো পরিত্যক্ত একটা কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং-এর সামনে৷ এখানে বড় শপিংমল হওয়ার কথা ছিলো। সেই অনুয়ায়ী কাজও শুরু হয়েছিলো কিন্তু নদীকুলীয় জায়গা হওয়ায় রিস্ক ছিলো খুব। বন্যার সময় বুড়িগঙ্গার পানি থাকে টইটম্বুর তাই যেকোনো দূর্ঘটা হওয়ার সম্ভবনাও ছিলো প্রকট৷ এসব ভেবেই সরকার পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করে দেয়।
নাতাশা সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসলো ৪ তালা