-"
-" পছন্দ করতাম বোন হিসেবে, আমার খালার মেয়ে হিসেবে। বউ হিসেবে না বাবা। তুমি বউ আর বোনের মধ্যে তো গুলিয়ে ফেললে হবে নাহ। আর খালা খালুর শেষ ইচ্ছে পুরন করার চক্করে আমি তো আমার জীবন, কেরিয়ার ধ্বংস করতে পারি না তাই না।
আয়শা বেগম এবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন, " রুদ্র মুখ সামলে কথা বলো। নাতাশার জন্য তোমার কি কেরিয়ার শেষ হয়েছে? ও তোমাকে কবে কোনোকিছুর জন্য চাপ দিয়েছে বলতে পারবে? তুমি কারো কোনো কথা না শুনে ওকে রেখেই চলে গিয়েছিলে। আর আজ আসলে ৯ বছর পর। নাতাশার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এসব মেনে নিতো? আবার বলছো ও তোমার জীবন শেষ করেছে।
রদ্র বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো, " ওই মেয়ে নিজেই তো এক আস্ত বড় চাপ। আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো এর থেকে বড় চাপ আর কি আছে?
আয়শা পেরে উঠছেন না ছেলের সঙ্গে। নাতাশা কিছু বলতে না পারলেও শুনেছে সবকিছুই। বন্ধ চোখের কণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আয়শা একনজর করুন দৃষ্টিতে তাকায় নাতাশার দিকে। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে রুদ্রকে৷ কিন্তু রুদ্র বোঝারই চেষ্টা করে নাহ।
মানিক আহমেদ রাগ করেই বের হয়ে যান রুম থেকে। রুদ্র সোফা থেকে উঠে দাড়ায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-" ওকে নিয়ে যাও আমার রুম থেকে। এখানে থাকলে রাগের মাথায় ওকে না মেরেই ফেলি আমি।
আয়শা বেগম একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের দিকে তাকিয়ে। নাতাশা এবার নিজ থেকেই উঠে বসলো, বিদ্ধস্ত চেহারায় অস্ফুট কন্ঠে আয়শাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-" মামনি একটু ধরবে আমাকে? "
আয়শা ধরলো নাতাশার দুবাহু। ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো নাতাশা। আয়শা বেগম বুঝতে পেরে আরো আলতো করে ধরলো। নাতাশাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই রদ্র দরজা লাগিয়ে দিলো।
__
আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা আজ। নাতাশার মনের অবস্থার কিছুটা বহিঃপ্রকাশ হলো বোধহয়। নাতাশা দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের রেলিং ঘেষে। নিস্তব্ধ পরিবেশে থেকে থেকেই বৃহৎ গর্জনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। হয়তো আজ বৃষ্টি নামবে..
এমন সময় রুদ্রও ফোনের কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসলো ছাঁদে। নাতাশা আনমনে হয়ে থাকায় খেয়াল করলো না রুদ্রকে। তবে রুদ্র দেখেছে, নাতাশার উপস্থিতিতে মনের ক্ষোভটা আবারো মাথা চারা দিয়ে উঠলো। কল কেটে দিয়ে নাতাশার পাশে এসে দাঁড়ালো।
-" মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। ঝাপ দে তো নাতাশা, বৃষ্টির পানির সঙ্গে সঙ্গে আজ তুইও ধুয়েমুছে চলে যাক আমার জীবন থেকে।
নাতাশা মলিন হাসলো " রুদ্র আমার উপর এতো ক্ষোভ কেনো তোমার?
-" ক্ষোভ তে নয়।
-" তাহলে কি? একেবারেই মেরে ফেলতে চাও কেনো আমাকে?
-" তু্ই তো আমার জীবনের একটা সমস্যা নাতাশা। মানুষ তার সমস্যা যেকোনো উপায়ে যে কোনো পদ্ধতিতে সমাধান করতে চায়, আমিও চাই। তোর জন্য আমার পুরো জীবনটাই নষ্ট। হয় মরে যা নাহলে আমাকে ছেড়ে দে।
নাতাশা শীতল দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রর দিকে। ছেলেটার চোখে মুখে তার জন্য প্রচন্ড ঘিন্না, রাগ। কিন্তু কেনো?.. নাতাশা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-" আমি তো ভালোবাসি তোমাকে, কিভাবে ছেড়ে দিবো?
-" তাহলে মরে যা। তোরও মুক্তি আমারো মুক্তি!
-" একদিন থাকবো না সত্যি সত্যিই, সেদিন বড় আফসোস করবা তুমি আমার জন্য।
বলেই নাতাশা ধীর পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসে। কষ্ট হচ্ছে খুব, রুদ্র তাকে কোনোদিন বুঝলো না। সেই ছোট কালেও বোঝেনি আর এখন বুঝেও বুঝতে চাচ্ছে না।
__
রুদ্র সারারাত বাইরে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে পার্টি করে বাড়ি ফিরলো সকাল বেলা। রুদ্রকে দেখেই তন্নি এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে। রুদ্রর ছোট বোন তন্নি, কলেজের পিকনিকে যাওয়ায় আসার পর দেখা হয়নি রুদ্রর সঙ্গে । রুদ্র একগাল হেসে জিজ্ঞেস করলো..
-" কেমন আছিস তুই?
-" আমি ভালো আছি ভাইয়া তুমি কেমন আছো? কতো বছর পর দেখা হলো।
-" হুম,, ভালোই বড় হয়ে গেছিস দেখি।
-" হু তা তো হবোই, ভাইয়া নাতাশা আপুর সাথে দেখা করেছো?
রুদ্রর মুখ থেকে হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। থমথমে কণ্ঠে বললো,
-" ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য অবশ্যই দেশে আসিনি আমি। আমার সামনে আর ওর নাম নিবি না..
তন্নির মুখ চুপসে গেলো। রান্নাঘর থেকে সব কথাই শুনতে পেলো আয়শা আর নাতাশা। মেয়েটার মন এমনিতেই খাটাপ তারউপর এসব শুনে মুখটা আরো কালো হয়ে যায় নাতাশার।
রুদ্র আদুরেভাবে তন্নির দুগাল চেপে বললো,
-" তোর জন্য অনেক কিছু আছে চল সেগুলো দেখবি চল।
তন্নি রান্নাঘরের দিকে তাকাতেই নাতাশার কালো মুখ খানা দেখতে পেলো। খারাপ লাগলো ওর,, এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ জানে নাতাশা কতোটা ভালোবাসে রুদ্রকে, একমাত্র রুদ্রই সেই ভালোবাসার কদর করে নাহ।
____
মানিক আহমেদের কনট্রাকশন সাইডের বি