#না, বললোও না!
“কী করলাম শুনি?”
“এই যে কথা না বলে কেবল ঘাড় নাড়াচ্ছো। যার কথা শোনার জন্য এত তোড়জোড় তার নীরবতা কী মনে মানে বলো? মন বুঝে এই নীরবতা?”
লোকটা যেন অভিযোগ নিয়ে বসেই ছিলো।
চিত্রা হাসলো, “আগে কথা বললে তো ধমকাতেন।”
“আগের দিন বাঘে খেয়েছে।”
চিত্রা এবার হেসে দিলো। দিন দিন মানুষটার আবদার বাড়ছে কেবল।
গেইটের আড়ালে লুকিয়ে সেই দৃশ্য ঠিক দেখলো টুইংকেল। ওর ভীষণ লোভ জমেছে আজকাল। কেবল মনে চায় এই দু'জনের ছোটোখাটো মুহূর্তগুলো চিরদিন দেখে যেতে। ছবির মতন সুন্দর যেন এই প্রেম!
•
সওদাগর বাড়ির টেবিলের বুকে প্রতিদিন শত শত আড্ডার স্মৃতি জমে। তবে আজ বসেছে গুরুগম্ভীর আলোচনা। আলোচনার মূখ্য ব্যক্তি হলেন অবনী বেগম। খাবারের সময় যেহেতু সবাই একত্রিত থাকেন তাই তখনই অবনী বেগম তার কথাটা শুরু করলেন,
“বড়ো ভাইজান, আজ তো মাসের সাতাশ তারিখ। আমি এক তারিখে নতুন বাসায় উঠতে চাচ্ছি।”
সবাই বেশ অবাক হলো। বুঝাই যাচ্ছে কেউই এই বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়। রোজা সওদাগর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
“নতুন বাসা মানে? কোথায় যাবি?”
নুরুল সওদাগরও বললেন, “হ্যাঁ, কোথায় যাবে?”
বাকি সবাই সেই প্রশ্নের উত্তর জানতেই চুপ করে রইল। অবনী বেগম উত্তর দিলেন না৷ উত্তর দিলেন আফজাল সওদাগর, “ও আলাদা বাসায় চলে যাবে। আমরা সবাই জানি যে, আমজাদ কখনোই ওকে মেনে নিতে পারেনি। একান্তই আমাদের জোড়াজুড়িতে বিয়ে করেছিলো। এত বছর অহিকে সঠিক গন্তব্য দেওয়ার জন্যই ও এই এক তরফা সম্পর্ক ধরে রেখেছিলো। আজ অহির নিজস্ব ঠিকানা হয়েছে। তাই ও এই বাড়ির মায়া ত্যাগ করবে। আমজাদের বহু বছর যাবত গলার কাটা হয়ে ছিলো ও। তাই সেটা থেকে মুক্তি দিতে চায়।”
খাবার টেবিলে মুহূর্তেই যেন বিস্ফোরণ ঘটলো। কই, সবকিছু তো ভালোই ছিলো। আজ হুট করে হলোই বা কী!
রোজা সওদাগর বেশ ধমকে উঠলেন অবনীকে, “পাগল না-কি তুই? আমজাদের তখন বয়স কম ছিলো, তোরও বয়স কম ছিলো। এখন তোদের কত বছরের সংসার! সেসব রেখে আচমকা এসব কোন ধরনের কথা? আর তোর ভাইজানও বা এসব জেনেও চুপ করে আছে কীভাবে?”
“আহ্ রোজা! যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলো না। ওদের ব্যক্তিগত সংসার, ওরা যা ইচ্ছে করুক। ওরা প্রাপ্তবয়স্ক। আমরা ওদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।”
“হস্তক্ষেপ করতে হবে ভাইজান যদি সিদ্ধান্ত ভুল হয়।” নুরুল সওদাগর কথাটি বললেন রাগী স্বরে৷
হাসলেন আফজাল সওদাগর, “তাই না-কি? তুমি যখন তোমার মেয়ের বেলা ভুল সিদ্ধান্ত নাও, তোমার মেয়ে কাকে ভালোবাসে জেনেও অমুক, তমুকের সাথে বিয়ের কথা বলো তখন সেই ভুল সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমরা কখনো কিছু বলি?”
ভাইজানের কথায় থেমে গেলেন নুরুল সওদাগর। চোখ নামিয়ে ফেললেন সঙ্গে সঙ্গে। ভাইজান এই বাড়ির ভেতর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি কখন, কোন ইঙ্গিতে কথা বলে ফেলেন কেউ বুঝতে পারে না।
বিষয়টি চলে গেলো একটি