#নানান ব্যবস্থা করে থাকেন। এ বছরে বিপদ যেন পিছুই ছাড়ছে না। অনাকাঙ্খিত বিপদের কারণে এই বছরে সেসব কাজ দেরিতে হলেও ভাই ও দুই ছেলেকে নিয়ে সেটা সম্পূর্নও করেছেন।
উনার একটা বিশেষ গুন উনি দানের কথা কখনোই কাউকে বলেন না।
কত দান করলেন। কাকে দিলেন। কেন দিলেন। কীভাবে দিলেন। যা দেন সব নিজের মাঝে রাখেন। শারাফাত, সাফওয়ান, শাহাদত, সায়ন, শুদ্ধ, রুবাব, এদের সবার আয়ের কিছু অংশ একত্রে বিরাট এমাউন্ট আসে। তখন দু'হাত ভরে দান করা যায়। যদিও ছেলেদেরকে কখনো দিতে বলে নি তারাই নিজে থেকে দেয়। চৌধুরী বাড়ির সেফটির কথা স্মরণে রেখে
জামা-কাপড় বিতরণের আয়োজন বাড়ির বাইরে করেন। মজার ব্যাপার হলো ইদ সম্মুখে এলে বস্তি এলাকায় ট্রাকভর্তি সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয়।
ইদের বাজার ও জামা-কাপড় তুলে দেওয়া হয় গরীব মানুষদের মাঝে।
দিনভর সেগুলো বিতরণ করা হয়। তারা জানে না কে দেয়? যারা হাতে তুলে দেয় তাদের জিজ্ঞাসা করলেও জবাব মিলে না। বলে না। জোর করলে বলেন,' যারা দেয় তারা দোয়া কুড়াতে দেয়। আপনারা মন থেকে দোয়া করুন।' নরম মনের সরল মানুষটা সেটাই করেন। আর প্রতি বছর এভাবে আড়ালে থেকেই সাহায্য করে আসছেন চৌধুরী বাড়ির পুরুষরা।
যাদের মাঝে শো অফ করার লেমমাত্র নেই।
চাঁদ রাত বিধায় ইফতারে পরপরই হই-হুল্লোড় বেঁধেছে চৌধুরী বাড়িতে।
ছোটোরা কাড়াকাড়ি করে খেয়েছে ইফতারের সব খাবার-দাবার। এত খাবার। এত আইটেম। তবুও ভাই-বোনদের খাবার কেড়ে খাওয়ার স্বাদ যেন অমৃত। সায়ন শীতলের আলুর চপ কেড়ে খেয়ে নিয়েছে। এটা নিয়ে দু'জন ঘ্যানঘ্যান করে কেবল থেমেছে। তারা থামতেই সাম্য শখের হাতে থাকা খেঁজুর কেড়ে মুখে পুরে দিয়েছে। শখ রাগী চোখে তাকাতেই দুষ্টুটা খিলখিল করে হাসছে। শখকে তারা কেউই ভয় পায় না। কারণ তাদের শখ আপু কখনোই কাউকে বকে না। বরং মিষ্টি করে কথা বলে। আদুরে সুরে 'এমন করে না সোনা ভাই। ওটা কেন করলি পাখি? কী লাগবে, মন খারাপ কেন আমার কলিজার ভাইজানের?' শখ সর্বদা এভাবেই কথা বলে। কত কী বোঝায়। ভাই-বোনের আবদার মিটাতে কত কিছু কিনে দেয় তাই বোনদের মধ্যে শখ আপু বেস্ট। আর বোনদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ শীতল। কারণ সে সবকিছুতে আগে ভাগে ভাগ বসায়। ইফতার সেরে সব ভাই-বোনরা ছাদে উঠেছে চাঁদ দেখতে। হইহই করে চাঁদ দেখে মাদুর পেতে বসেছে। সায়ন, শুদ্ধ, রুবাব,শখ, স্বর্ন, শীতল, সাম্য, সৃজন সব কটাই উপস্থিত এখানে। গল্প হচ্ছে। হাসাহাসি হচ্ছে। খুঁনশুটি মারধর হচ্ছে। রুবাব কখনো এটা ওটা বলে শীতলকে রাগাচ্ছে, কখনো সাম্য, সৃজনের পেছনে লাগছে। সায়নও তাদের সাথে মেতে আছে। আর শুদ্ধ রেলিংয়ে হেলান দিয়ে পকেটে দু'হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাশের ছাদে। সেখানে কয়েকজন ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। বারবার এদিকে তাকাচ্ছে। সে ব্যাপারটা খেয়াল করে এবার ফোনটা বের করে কাউকে ফোন করল,
-'শুদ্ধ বলছি।'
অসময়ে পাশের বাসার শুদ্ধ ভাইয়ের কল পেয়ে সৌরভ অবাকই হলো। সে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। শুদ্ধ পুরুষালি গুরুগম্ভীর কন্ঠে
সালামের জবাব দিয়ে বলল,
-' তোদের ছাদে ক'জন ছেলেকে দেখছি। দুই মিনিটের মধ্যে নিচে নামতে বলে।'
-'কোনো সমস্যা ভাই? কিছু করেছে তারা?'
-'না। তবে না নামলে কিছু হবে।'
-'আচ্ছা আমি এক্ষুণি নামতে বলছি।'
শুদ্ধ কল কাটতেই ছেলেগুলোর মধ্যে একজনের কাছে কল এলো। ওরা এদিকে একবার তাকিয়ে শুদ্ধকে সালাম দিয়ে নিচে নেমে গেল। এদিকে এতকিছু ঘটল বাকিদের কারোই খেয়াল নেই। তারা নিজেদের গালগল্পে ব্যস্ত। শুদ্ধ সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছে চৌধুরী বাড়ির চাঁদের হাট। আনন্দে ঝুমঝুম করা প্রতিটা প্রাণ চৌধুরী বাড়ির হাঁট। তারা নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে আলো ছড়ায়। সুখ বিলায়। এজন্যই চৌধুরী বাড়িতে এত সুখ। এত আনন্দ। সবার মাঝে হঠাৎ তার চোখ গেল সাম্য, সৃজনের হাসিমাখা মুখের দিকে। মাত্র কয়েকটা দিন হয়েছে ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। বাচ্চা দুটো যেন নতুন করে বেঁচে উঠেছে। আবারও তাদের মধ্যে ফিরে এসেছে চঞ্চলতা। যদিও আগের তুলনার খানিকটা সুস্থও বটে। তবে ওষুধ চলবে আরো কিছুদিন। ওদিকে কথায় কথায় ভাইবোনদের মধ্যে সাম্যের ছোট বেলার একটা ঘটনা মনে করল সায়ন। হাসতে হাসতে ঘটনাখানা মুখেও বলল। সেটা স্মরণ করে একযোগে হেসে উঠল সবাই। হাসতে হাসতেই গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা তাদের। কথাও বলতে পারছে না কেউ হাসির চোটে। রুবাব মনে করতে পারছে না কারণ রুবাব ছিল না। তাই
সায়নও ঘটনাখানা বলতে লাগল,
একদিন সাম্য, সৃজন দুই ভাই খেলনা নিয়ে মারামারি লাগিয়েছে। দু'জন দু'জনাকে খামচি মেরে রক্তারক্তি অবস্থা। ওদের খামচাখামচি দেখে চুপ করে পেছন থেকে সিরাত এসে দুটোকেই আরেক ঘা বসিয়েছে। মায়ের মার খেয়ে একসাথে চিৎকার করে কাঁদছিল ওরা। শুদ্ধকে ভাই-বোনরা ছোটো থেকে একটু বেশিই ভয় পায়। আবদার করে তবে লিমিট রেখে।
সেদিন ঢাকা থেকে শুদ্ধও ফিরেছে ঘন্টা খানিক হয়েছে মাত্র। ফ্রেশ হয়ে
বাইরে যাওয়ার জন্য বের হতেই দেখে দুই বানর গলা ফাটিয়ে কাঁদছে। তাদের চোখ, মুখ খামচানো। রক্ত বের হচ্ছে একটু একটু। তাকে দেখেই দুটোরই হঠাৎ কান্না বন্ধ হয়ে গেল। তবে ফোঁপানো বন্ধ হলো না। ওদের কান্নারত মুখ দেখে শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করেছিল,
-' কি হয়েছে? চোখ, মুখের এই অবস্থা কেন তোদের?'
তারা কিছু বলার আগে সিরাত পুরো ঘটনা তাকে জানায়। ওরা দুই ভাই
নিজেদের এ অবস্থা করেছে দেখে দুটোকে কান ধরতে বলে। তারা ধরে। ড্রয়িংরুম তখন ফাঁকা। সিরাত তখন বকতে বকতে যান এ্যান্টিসেপ্টিক আনতে। তখন শুদ্ধ বলে,
-'বাইরের কাউকে পাস নি? ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করেছিস কেন? এবার থেকে মারামারি করতে ইচ্ছে করলে বাইরে থেকে কাউকে মেরে আসবি। মারার পর আরো দু'ঘা বসিয়ে শাসিয়ে আসবি যাতে বাড়িতে বিচার নিয়ে না আসে। বোঝা গেল? তবুও আমি যেন না দেখি নিজেরা নিজেরা