--" ,
--" আপনার টিমের সেসব বেকুব কে যারা পরিস্থিতি না বুঝে মাইক নিয়ে যা-তা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্যে । "
আচমকা পাল্টা উত্তরে খানিকটা থতমত খেলো সেই রমণী। অপ্রস্তুত ভাবটা মুহূর্তে সামলে বলল,
--" আপনি ইনচার্জ। বর্তমান পরিস্থিতি না জানলেও কতটুকু জানেন সেটা প্রশ্ন করা অন্যায়? আপানারা তিনদিন ইনভেস্টিগেট করে কিছুই খুঁজে পাননি? নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করতে লজ্জা লাগছে বলে আমাদের উপর দায় দিতে চাইছেন? "
কথাগুলো অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে বলল সেই রমণী। মেহরাব এবার পুরোপুরি পেছনে ঘুরে তাকালো। তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করলো গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডের যাবতীয় ডিটেইলস অতঃপর বাঁকা হেসে বলল,
--" মিস রোদেলা মুর্তজা, কনফিডেনসিয়াল ইনফরমেশন প্রকাশ্যে জানাতে হয় না, এই বিষয়টা বোধহয় আপনার জানা নেই । বিনা দাওয়াতে আমাদের পেছনে ঘুরে একটাও ইনফরমেশন বের করতে পারেননি সেটা আপনাদের ব্যর্থতা, আমাদের উপর রাগ দেখালে সেটা মিটবে না৷ আর কিছু শুনতে চান? না থাক, পরে আবার লজ্জায় সিঁটিয়ে যাবেন। "
রোদেলার ফর্সা চেহারা ক্রোধে লাল হয়ে গেলো। চড়া মেজাজে বলল,
--" আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন অফিসার। "
মেহরাব নির্লিপ্ত সুরে বলল,
--" আপনাদের রেসপেক্ট করাও দোষ। তখন আবার বলবেন আপনি কিন্তু আমাদের গায়ে ঢলে পড়তে চাইছেন অফিসার।"
রোদেলা মেজাজ হারিয়ে চোখমুখ শক্ত করে রাগী স্বরে বলল,
--" আমি আপনার নামে মানহানীর মামলা করবো অফিসার।"
মেহরাব বিরক্ত হয়ে নির্বিকার গলায় বলল,
--" আমার অফিসে আপনার নিমন্ত্রণ রইল। দু'জনে বসে আলোচনা করে নাহয় ঠিক করবো, আরও কী কী মামলা দেওয়া যায় আমার নামে। আপাতত আপনার এলার্মের মতো মুখটা বন্ধ করে শান্তি বজায় রাখুন । "
উত্তরে আর কিছুই বলতে পারলো না রোদেলা। উপস্থিত সকল সাংবাদিক এতক্ষণ বেপরোয়া হয়ে যা-তা প্রশ্ন করলেও টিম লিডারের করুণ পরিণতি দেখে চুপচাপ স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। রোদেলার পাশে থাকা নির্ঝর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
--" এ তো কোনো সাধারণ অফিসার নয় লা। তোকে এক কথায় চুপ করিয়ে দেওয়া এক মহামানব। কাজ শেষে উনাকে একটা বড় করে সালাম দিয়ে আসবো দোস্ত । আমার তেইশ বছরের আফসোস উনি মাত্র তেইশ সেকেন্ডে মিটিয়ে দিয়েছে। বিগ ফ... "
নির্ঝরের কথাগুলো শুনে তার পায়ে জোরেশোরে একটা পাড়া দেয় রোদেলা। নির্ঝর চোখ বড়বড় করে তাকালে পুনরায় নির্ঝরের কোঁকড়া চুলগুলো মুঠোবন্দি করে দু'বার ঝাঁকিয়ে বলল,
--" তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ এখানেই শেষ। খুব শখ না আমাকে অপমান হতে দেখার? শখ মিটেছে? এখন যা ফুট নয়তো তোর নুডলস চুল তেলাপোকার সাথে ফ্রাই করে তোর পেয়ারে অফিসার কে খাওয়াবো। "
রোদেলার কথা নির্ঝর চোখমুখ খিচিয়ে হজম করে। এই মেয়ে রেগে গেলে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে সম্মানের রফাদফা করতে দু'বার ভাববে না। মানসম্মান বাঁচাতে মুখে কুলুপ এঁটে ভদ্র বাচ্চার মতো ক্যামেরা ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো বেচারা৷
সিনিয়র অফিসারের সাথে একজন সাংবাদিকদের এরুপ বাকবিতন্ডা খুব আয়েশ করে মজা নিয়ে দেখছিল বাকি অফিসারেরা। তারা ভেবেছিল ঝড় বোধহয় দিক পরিবর্তন করেছে কিন্তু বিধিবাম, মেহরাব তৎক্ষণাৎ তাদের দিকে ফিরে ক্রোধান্বিত স্বরে প্রশ্ন করে,
--" এখানে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখার জন্য ডেকে আনা হয়েছে আপনাদের? প্রিপারেশন এখনো শুরু হয়নি কেনো? নাকি অপরাধীর থেকে ইনভাইটেশন কার্ড পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন ?"
মেহরাবের কথায় থতমত খেলো সকলে। তন্মধ্যে একজন সাহস জুগিয়ে বলল,
--" স্যার, ভিক্টিমের বাড়ির লোকজন না আসা অব্দিই অপেক্ষা করতে বলেছেন বড় স্যার। উনারা আসলে যেনো ভেতরে তল্লাশি নেওয়া হয় সে..."
মেহরাব কথাটা শুনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো সেই অফিসারের দিকে। পরক্ষণে হুংকার ছেড়ে বলল,
--" এমন কোনো ইন্সট্রাকশন আমাকে দেওয়া হয়নি। যেহেতু এটা আমার আন্ডারে আছে সেহেতু আপনাদের উচিত ছিলো আমার কথামতো কাজ করা। প্রমাণসহ জবাবদিহি করার জন্য প্রস্তুত থাকুন, আপাতত একদিকের বিষয়টা হ্যান্ডেল করুন। "
মেহরাবের কথা শুনে সেই অফিসার ফাঁকা ঢোক গিললো। এমন জাঁদরেল লোক সে আর দু'টো দেখেনি। এই ইন্সট্রাকশন উপরমহল নয় বরং ভিক্টিমের পরিবার থেকে এসেছিল। লোভে পড়ে রাজি হয়ে এখন যদি চাকরি খোয়াতে হয় তাহলে সব শেষ। টেনশনে দরদর করে ঘামতে থাকলো বেচারা৷
মেহরাব এবার চোখ তুলে চারপাশটা ভালো করে দেখলো। শহর থেকে খানিকটা দূরে, জঙ্গলের ভেতর এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য মণ্ডিত বাগান বাড়ি থাকতে পারে সেটা অনুমান করা কিছুটা কষ্টসাধ্য ব্যপার।
চারিদিকে বাহারি রকমের ফুলের বাহার। এরকম জায়গায় একজন কিডন্যাপার কোনো ভিক্টিম কে কেনো রাখবে সেই প্রশ্নটা বারংবার মস্তিষ্কে আসছে। মেহরাব প্ল্যান জানিয়ে দ্রুত সবাইকে এলার্ট করে। মেহরাবের ইশারা মতো সকলে এগিয়ে যায় বাগান বাড়ির দরজার দিকে। মেহরাব সেদিকে পা বাড়ানোর আগে পেছনে ফিরে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
--" এটা রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। ঐ ইয়েলো মার্কটা পেরিয়ে কেউ সামনে আসার দুঃসাহস দেখালে তাকে আলামত নষ্ট করার অভিযোগে একদম জেলে পুরে দেবো। "
উপস্থিত সকলে এবার চরম বিরক্ত হয়। বাহিরে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলে এসে লাভটা কী হলো? মেহরাব ওসব গায়ে মাখলো না। সাবধানে এগিয়ে গেলো সামনে।
একতলা বিশিষ্ট ছিমছাম একটা বাড়ি। দরজা ঠেলে সামনে ঢুকতেই খুব স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত পরিবার সংসারের চিত্র দেখতে পেলো সকলে। ভেতর