"প্রান যায় অবস্থা। কিন্তু নির্ভানের তেজ কমছে না সে আবারও বেলার দিকে ঝাপিয়ে পরতে নিলে বেলা সরে যায়।দরজার ওপাশ থেকে ধাক্কানোর আওয়াজ আসে।বেলা কোনোমতে নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে দেয়।নির্ভানের বাবা-মা,দাদি,ভাই সাদাত, বোন স্নেহা,আর চাচি হাফসা ঢুকে পরে।তাদের দেখে বেলা একটু ভরসা পায়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে শ্বাশুড়ি হামিদা বেগমের গায়ে ঢলে পরে।নির্ভানকে কোনোভাবে থামিয়ে বেলাকে নিয়ে চলে গেলো।ডাক্তারকে ইতোমধ্যে কল করা হয়েছে।সে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হবে।
ওদিকে নির্ভানের ঘর থেকে ক্রমশ চিৎকার আসছে-
—"ওকে চলে যেতে বলো।নয়তো আমি ওকে মেরে ফেলবো।এই নির্ভানের বউ হতে এসেছে?আমার চোখের সামনে যেন ও কখনো না আসে।"
ডাক্তার জানিয়ে গেলো ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে বেলা আর শরীর খুব দুর্বল।একটা ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিলো কালকে ভোরের আগে ঘুম ভাঙবে না।তারপর ডাক্তার চলে যেতে নিলে আবার হামিদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে-
—"আপনি জানতেন আপনার ছেলে অসুস্থ। সে ফ্রেগোলি সিন্ড্রোমের রোগী তারপরও কেন একটা মেয়েকে এভাবে তার ঘরে যেতে দিলেন?"
হামিদা বেগম সাথে সাথে উত্তর দিলো-
—"এটা আমাদের পারিবারিক বিষয় ডাক্তারবাবু আমি চাই না আপনি এর মধ্যে আসুন।"
ডাক্তার চোখ সরিয়ে একটা নি:শ্বাস নিলেন।চোখ মুখে ফুটে উঠেছে রাগ আর অসহয়ত্বের ছাপ।বলেই ফেললো-
—"আপনারা জানেন আপনাদের ছেলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।তারপরও কেন একটা নিরপরাধ মেয়েকে তার সাথে জড়ালেন?"
তার কথা শুনে বাড়ির সবাই চমকে গেলো কিন্তু হামিদা বেগম চোখ নিচু করলেন না।
ডাক্তার বুঝলো এদের বলেও লাভ হবে না।এরা খুবই স্বার্থপর। স্বার্থপর না হলে কি একটা অসহায় মেয়েকে এভাবে একজন মানসিক রোগীর কাছে ছেড়ে দেয়।সেও নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো।কিন্তু মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হলো।
......................
রাতের আধার কাটতে শুরু করেছে।বেলা একটু একটু করে চোখ খুলতে শুরু করে স্নেহা আর বাড়ির কাজের মেয়ে টুম্পা তার কাছে ছিলো।তাদের হঠাৎ দেখে বেলা ঘাবড়ে যায়।স্নেহা বেলাকে আশ্বাস দিয়ে বলে-
—"ভয় পেও না ভাবী।আমি তোমার একমাত্র ননদিনী।এতোক্ষণ এখানে সবাই ছিলো একটু আগে চলে গিয়েছে।"
টুম্পার দিকে তাকিয়ে বলে-
—"ওদেরকে ডেকে আন টুম্পা।"
বেলার দিকে আবার তাকিয়ে বলে-
—"তুমি একটু শুয়ে থাকো আমি তোমার জন্য খাবার আনছি।"
তারপর টুম্পা আর স্নেহা চলে গেলো।দরজার ওপাশে যেতেই টুম্পার গলা শুনতে পেলো।
—"ওনাকে কতো দিন এভাবে লুকিয়ে রাখবেন আপামনি।আপনার ভাই জানতে পারলে তো জানে মেরে দিবে তাকে।সে তো আর যে সে পাগল না। যে করে হোক ভাবিকে এ বাড়ি থেকে বিদায় করেই ছাড়বে।"
—"আমার ভাইকে পাগল বলবি না টুম্পা সে একটু অসুস্থ।আবার ঠিক হয়ে যাবে।"
টুম্পার আর কিছু শোনা গেলো না।কিন্তু তাদের সবকিছুই বেলা শুনে নিলো।চোখে এসে জল ভীর করলো।বেলা জানালার ফাঁক দিয়ে বাহিরে তাকালো।চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।বুকের ভেতর শূন্যতা আর ভয়ের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হলো।এ ঘর তাকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে।সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলো না।জীবনের জন্য একটু ভালো থাকার জন্য ঝুঁকি তাকে নিতেই হবে। সে তার মায়ের মতো শ্বশুরবাড়ি থেকে অত্যাচারিত হয়ে জীবনটা শেষ করবে না।যে করে হোক এ বাড়ি থেকে পালাবে।তারপর চুপি চুপি ও বাড়ি ছাড়লো।
প্রেমার ধাক্কায় তার বেলা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
—"এভাবে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?স্যার ক্লাসে ঢুকে গেলো আর তুই এখানে?"
—"না মানে কিছু না।আচ্ছা ওই যে লোকটা একটু আসলো তার এখানে কি কাজ?"
—"নির্ভান ভাইয়ের কথা বলছিস?উনি তো ভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে আছে।উনি প্রতি বছর অনেক টাকা ডোনেশন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের।মাসে মাসে যে টাকাটা সকলে পায় তার বেশির ভাগই ওনার কোম্পানি থেকে আসে।হয়তো প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কোনো কথা আছে তাই এলো।"
—"ওহ আচ্ছা চল।নয়তো তোর ভাইয়ের যা রাগ আমাদের সারাদিন মাঠে না দাড় করিয়ে রাখলে হয়।"
—"আচ্ছা চল।"
---------------
দুজনেই ক্লাসে বসে আছে কিন্তু সবার শেষে।বেলা চোখ বোঝে,তার চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে।নির্ভানের মুখ তার চোখে বার বার ভেসে উঠছে।বেলার মাথায় এখনো নির্ভানের কথাই ঘুরছে।স্যারের দিকে তার কোনো খেয়াল নেই।
—"স্ট্যান্ডআপ।"
স্যারের চিৎকারে সে সপ্ন থেকে ফিরে এলো।তার মাথায় তখনো সেই রাতে দুঃসপ্নের ছায়া বেলা স্যারের কথা কিছুই শুনলো না।সে তো নিজের ভাবনায় আছে।স্যার এবার জোড়ে