ফেলে আসা দিনের স্মৃতিতে।
কিছুটা পথ পেরিয়ে, অমিত হঠাৎ বলে ওঠে,
"চাচা, সামনে কোনো ভালো রেস্তোরাঁ দেখে দাঁরায়েন তো। রাতের খাবার তো এখনো খাওয়া হয়নি। বাসায় খাবার নিয়ে যাব।"
করিম চাচা একটু থে অবাক হয়ে বলেন,
"খাবার? গারি নিয়ে আসার সময় রফিক ভাই আর ভাবিকে দেখলাম, তোমাদের মহলের দরজা খোলে। ভাই বলল, 'তোমরা আসছো বিধায় ভাবি রান্না করবেন। তাই তিনিও এসেছেন ভাবির সঙ্গে।"
অমিত মুখটা কুঁচকে ফেলে। তীব্র এক অসন্তোষ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে। বল,
"এই মা-ও না! সবকিছুতেই এত বাড়াবাড়ি? রাতের খাবারটা রেস্তোরাঁ থেকে নিয়ে যেতাম। শুধু শুধু এখন ওনাকে কষ্ট করতে হবে।"
পেইজ: Jannat হায়দার।
বাড়ির সদর দরজাটা ধীরে ঠেলে ভেতরে পা রাখে অমিত। তার পেছনে শান্ত অথচ ক্লান্ত পায়ে হেঁটে আসছে আজরিন। ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে খবর দেখছিলেন রফিক মিয়া। কিচেন সুগন্ধে ভাসছে রোকেয়া বেগমের রান্না। অমিত আর আজরিনকে দেখে রফিক মিয়ার মুখে যেন অজান্তেই ফুটে ওঠে এক প্রশান্ত হাসি। উঠে এগিয়ে এসে বলেন,
— অমিত বাবা! তোমরা এসে পরেছ?
অমিত সালাম জানিয়ে বলে,
"কেমন আছেন, চাচা?"
রফিক মিয়া আদরের সুরে বলেন,
"এই তো বাবা, আলহামদুলিল্লাহ ভালো।"
আজরিনের পানে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কোমল স্বরে বলে,
"দেও মা, লাগেজটা আমার হাতে দাও।”
অমিতের কণ্ঠ শুনে রোকেয়া বেগম কিচেন থেকে বেরিয়ে আসেন। শরীরের খোঁজখবর, ক্লান্ত ভ্রমণের আলোচনা শেষে অমিত উপরে রুমের পানে পা বাড়ায়। সঙ্গে রফিক মিয়া আজরিনের লাগেজটি হাতে তুলে নেন।
রোকেয়ার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আজরিনের। পেছনে থেকে রোকেয়া বলেন,
— মা, একটু শরবত বা হালকা কিছু খাবে? কিছু বানিয়ে দিই?
আজরিন থেমে দাঁড়িয়ে মলিন হেসে বলে,
"না চাচি, কিছু লাগবে না। শুধু একটু গরম পানি করুন, আমি ওনার জন্য একটু কফি বানাবো।"
রফিক মিয়া লাগেজ রেখে চলে যান। অমিত ঘরের আলো জ্বালিয়ে ক্লান্ত দেহে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আজরিন ঘরে ঢুকে অমিতকে উল্টো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করে,
— " আপনার শরীর কি খুব খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?"
নিস্তেজ কণ্ঠে অমিত বলে, "না, তেমন কিছু না... দুই-তিন ঘণ্টা ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।"
"আপনার জন্য একটু কফি করে আনব?''
অমিত একটু চুপ থেকে ম্লান কণ্ঠে বলে, ''কফি? না... তুমি পারবে না, হাত পুড়িয়ে ফেলবে। দরকার নেই। আমাকে একটু ঘুমাতে দাও..! আর শুনো, তিন-চার ঘণ্টা পর আমাকে ডেকে দিও। স্নান করতে হবে, ফ্রেশ হতে হবে।"
আজরিন আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে, রোকেয়াকে গরম পানি করতে না করে। আবার রুমে ফিরে ওয়াশরুমে ঢোকে স্নানের জন্য।
স্নান শেষে আজরিন যখন বের হয়, চোখ পড়ে অমিতের পানে। অমিত যেন ক্লান্তির ভারে গুঁড়িয়ে গেছে, লোফারজোড়াও খুলেনি। আজরিন ধীর পায়ে গিয়ে অমিতের পায়ের পাশে বসে আলতো করে খুলে দেয় সেই লোফারজোড়া।
ঠিক তখনই নিচ থেকে রফিক মিয়ার ডাক আসে। আজরিন নিচে গিয়ে দেখে তারা ফিরে যেতে চায়। রোকেয়া জিজ্ঞেস করেন অমিত ঘুমিয়েছে কি না।
আজরিন বলে, "ঘুমাচ্ছেন।"
আজরিন একা এত বড় বাড়িতে তাকবে বিদায় রোকেয়া ঠিক করে আরেকটু সময় আজরিনের সাথে থাকবে। পরিবারের খোশ-গল্প করে তারা সময় কাটাতে থাকে। তাদের পাশের সোফায় রফিক মিয়া টিভিতে খবর দেখছে। কথা বলতে বলতে রোকেয়া আজরিনকে বলেন,
— "কাল তো তোমরা তোমার বাপের বাড়ি যাবে, না?"
— "হুম, তাই তো জানি।
— অমিতও যাবে?"
— "উনি কিছু বলেননি এখনো।"
এই সময় আজরিনের মোবাইলে জাহানারা বিবির ভিডিও কল আসে। দু'জন মিলে কথা বলে দীর্ঘক্ষণ।