কাশীশের মৃদু, কিন্তু আত্মবিশ্বাস ভরা কণ্ঠ কানে যেতেই এতক্ষণ চুপচাপ চেয়ারে বসে নিজের এক হাতে পেপারওয়েট নিয়ে খেলা করা পুরুষটির হাত মুহূর্তেই থেমে গেল। নিজের অন্ধকার আচ্ছন্ন তীক্ষ্ণ বাজ পাখির ন্যায় দুই চোখ তুলে সে তাকালো কাশিশের দিকে। আর মুহূর্তেই এতক্ষণ শান্ত থাকা কাশীশ এবার কিছুটা অস্থির আর ব্যাকুল হয়ে উঠলো না চাইতেও ! এই লোকটার এই চাহনি সে একদম নিতে পারে না! একদমই না! তার মতো মেয়েও যে কারো দৃষ্টিতে কেঁপে উঠতে পারে, এই লোকের সঙ্গে দেখা হবার পূর্বে সে নিজেও অবগত ছিল না! অথচ এই মানুষটার সাথেই সে বিগত দুই বছর ধরে কাজ করে আসছে!
"ভাই! কী করছো? কাশীশ আমাদের সাথে এতদিন ধরে রয়েছে... ওর মতো মেয়ে এমন কিছু করতেই পারে না। আই'ম ড্যাম সিউর!"
জায়ানের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে এবারও অন্য সকল স্টাফদের মুখের অভিব্যক্তিও যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। যেন তারাও জায়ানের সঙ্গে সহমত। কাশিশ এমন কিছু করার মেয়েই নয়! কিন্তু এত কিছুর মাঝেও সেই পুরুষটির দুই চোখের শীতল চাহনি তো কেবল কাশিশের মুখের দিকেই আটকে আছে... যেন সে তার আরও কিছু বলার অপেক্ষায় রয়েছে!
"মিস. শেখ! আপনার কি আর কিছু বলার রয়েছে নিজের হয়ে?"
পুরুষটির ভারী কণ্ঠ, কিন্তু কাশীশ এই মুহূর্তে নিজের ভাবনায় মগ্ন। সে ভাবছে এর পরে এই জল্লাদ পুরুষটা তাকে কী করবে! কী আশ্চর্য! এই মেয়েটা এতো বড় একটা পরিস্থিতি সম্মুখে দাঁড়িয়ে। অথচ তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই যেন! সে ভাবছে তার আখরু-রুড, জল্লাদ বস তাকে কীভাবে গাধার খাটুনি খাটাবে সেই চিন্তায়! কাশিশের উদাসীন মুখশ্রী দেখে এবার একটা উষ্ণ নিশ্বাস ছাড়লো পুরুষটি। আর তার মাঝেই ভেসে এলো আরেকটা পুরুষালি কণ্ঠ___
"স্যার! ইনফরমেশন লিক কাশীশই করেছে আমি নিজ চোখে দেখেছি। তাছাড়া ওর মতো লো ক্লাসের মেয়েরা টাকার জন্য সবই করতে পারে! না হলে যে ইনফরমেশন কেবল ওর ল্যাপটপে ছিল সেটা ও ছাড়া অন্য কেউ কীভাবে লিক করবে?"
আশিকুল আতিক নিজের গলায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মিশিয়ে বলে উঠলো। কিন্তু তার এমন কথায় মুহুর্তেই সবাই তার দিকে বিরক্তির চোখে তাকালো। সবাই খুব ভালোভাবেই অবগত এই ব্যক্তির সম্পর্কে। তার এমন কথায় কাশিশ কিছু বলতে যাবে, তার আগেই এতক্ষণ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে থাকা সেই সুদর্শন পুরুষটি এবার উঠে দাঁড়িয়ে, কদম ফেলে এগিয়ে এলো কাশীশের দিকে! তার এমন আচরণে আশিকুল আতিকের মুখে দেখা মিললো এক বিষাক্ত নোংরা হাসি...
"আমার তেজ দেখিয়েছিস না! দুই টাকার মেয়ে একটা, এবার দেখ তোর কী অবস্থা হয়!"
"ঠ্যসসসস!"
"জানো*য়ারের বাচ্চা! আমার রাজ্যে দাঁড়িয়ে, আমার চোখে চোখ রেখে মিথ্যে বলার সাহস হয় কেমন করে? কী ভেবেছিস ক্যাভেন ক্রল দু’দিন অনুপস্থিত থাকলেই সে রাজ্যের খবর রাখে না? এই ইন্ডাস্ট্রির বাতাসের দিক পরিবর্তন যখন আমার নখের আগায় ধরা, তখন তুই আমার নাকের ডগা থেকে ইনফরমেশন লিক করবি আর আমি টের পাব না? তোর আত্মা কাঁপল না একবারও?"
আশিকুর আতিকের শার্টের কলার্ট ধরে তীব্র রাগে ধাড়ালো কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো ক্যাভেন। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে যেন। দু'চোখে জমে রয়েছে রক্তিম আভা। উপস্থিত প্রতিটি ব্যাক্তি ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছে মুহুর্তেই! আর আশিকুর আতিক! তার তো প্রাণটাই বের হয়ে যাবে, তীব্র আতঙ্কে তার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে। তাও নিজেকে রক্ষার্থে শেষ চেষ্টা করতে মুখ খুললো....
"স স স্যার, আ.. আমি!"
আশিকুর আতিকের কণ্ঠে কানে আসতেই এবার যেন পুরুষটি আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠলো...মুহুর্তেই শক্ত হাতে তীব্র বেগে তার গলা চেপে ধরে তাকে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠিয়ে ফেললো সে! রাগে- ঘৃণান দাঁত খিঁচিয়ে হিংস্র কণ্ঠে চিৎকাড় করে উঠলো___
"ইউ ব্লাডি! কী মনে হয় ক্যাভেব ক্রল ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? আমার সাম্রাজ্যে দাঁড়িয়ে আমাকে বোকা বানাতে চাওয়ার দুঃসাহস দেখানোর আগে তোর মনে রাখা উচিত ছিলো যে, ক্যাভেন ক্রল নামটা কোন বাপের দেওয়া নয়! তার নিজের তৈরী করা! তোর মতো সামান্য এক রাস্তার কুকুর আমার সাথে চালাকি করবি!"
নিজের বাক্যগুলো সম্পূর্ণ করে এক ঝটকায় সে আশিকুর আতিকে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললো। যেন রাস্তার কোন ময়লা-আর্বজনা! উপস্থিতি সকলে নিঃশব্দে এই মুহুর্তের সাক্ষি হলো।
"মিস.শেখ!".
ক্যাভেনের ক্ষুব্ধ আওয়াজ!
"জ্বী স্যার!"....কাশীশের কিছুটা চমকে উঠা কণ্ঠ! সে সব কিছুর থেকে যেন এক অন্য রাজ্যে বিরাজমান ছিল এতক্ষণ! কাশিশের এমন চমকে উঠা কন্ঠে এবার ক্যাভেন তীব্র বিরক্তিময় চাহনিতে তার দিকে এক পলক তাকিয়ে, নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে তার উদ্দেশ্য বলে উঠলো ___
"চলার পথে রাস্তার কুকুর একবার ঘেউ করলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া উত্তম! কিন্তু বার বার একই কাজ করার
পরেও কুকুর কে তার সঠিক স্থান বুঝিয়ে না দেওয়া টা নিশ্চয়ই আমি আপনার দূর্বলতা ভ