ব রেখা ছিন্ন করে ফেলে।
ঝুমুর কাঁপতে কাঁপতে বলল,
"নবীন, তেলাপোকা জামার ভেতর…"
তার কণ্ঠে যেন কোনো শক্তি নেই, কেবল নিঃশ্বাসে ভরা এক অপ্রতিরোধ্য আত'ঙ্ক।
নবীন তৎক্ষণাৎ জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে বের করে আনে তেলাপোকাটিকে, আর ঝুমুরের শরীরে আবার জীবনের স্পর্শ ফিরিয়ে দেয়। বিদ্যুৎ গতিতে দূরে সরে গেল নবীন, অপরাধী কন্ঠে বলল,
"আমি দুঃখিত ঝুমুর। তোমার অনুমতি না নিয়ে ওভাবে তেলাপোকা বের করেছি। তুমি চিৎকার করবে আর ভয়ও পাচ্ছিলে! আমি সত্যি দুঃখিত! সরি ক্ষমা করো আমাকে।"
নবীন এক মূহুর্ত অপেক্ষা করলো না, চুপচাপ বেরিয়ে গেল কিচেন থেকে।না হলো তার পানি নেওয়া। ঝুমুর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, লোকটা কে ভুল বুঝেছি ঝুমুর। লোকটা তো প্রথমেই বলেছিল তেলাপোকা, কিন্তু ঝুমুর গুরুত্ব দেয়নি।আর তাকে হেল্প করেছে, একদমই বাজে ভাবে ছোঁয় নি। নবীন কেনো নিজেকে অপরাধী ভাবছে?ঝুমুরের উচিত নয় কি তার সাথে কথা বলা? অবশ্যই উচিত।
সকাল সকাল ঝুমুর চেয়েছিল নবীনের সাথে কথা বলতে কিন্তু নবীন তাকে এড়িয়ে গেছে। ঝুমুর বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।অবশ্য তার দোষ নেই, প্রথম থেকেই ঝুমুর নবীনের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করে।হয়তো সেই জন্য সে ভাবছে কালকে রাতের বিষয়টি নিয়ে তাকে কিছু কথা শোনাবে।
___________
ঘুমে কাতর হয়ে আছে ফারাহ।বক্ষভাজে লেপ্টে রয়েছে তাশফিনের। উদোম গায়ে বিছানায় একে অপরের সহিতে। ঘুমের মধ্যেই হাত রাখলো তাশফিনের উন্মুক্ত বক্ষপটে।চোখ দুটো কুঁচকে এলো তার, পিটপিট করে তাকালো সে। নিজের এতটা কাছে তাশফিন কে দেখে পিলে চমকে উঠে।সরতে গিয়েও থেমে গেলো সে
ক্লিন শেভ করা গালে ভীষণ ভাবে ছুঁতে ইচ্ছে করলো।ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে গাল ছুঁয়ে দিলো আলগোছে। অকস্মাৎ হাত চেপে ধরলো তাশফিন। আঁতকে উঠে ফারাহ।
"মিসেস শেখ সকাল সকাল এসব শুরু করেছেন আপনি?"
ভয়ে তটস্থ ভঙ্গিতে বলে উঠে ফারাহ।
"না মানে আসলে আমি..ওই ওই আর কি!"
"উফ্ মিসেস শেখ আপনি আমাকে ইদানিং বড্ড জ্বালা'চ্ছেন। আমি যদি জ্বা'লানো শুরু করি সইতে পারবেন তো?"
ড্যাবড্যাব করে তাকালো ফারাহ।কি ঠোঁটকাটা পুরুষ, সবসময় তাকে কায়দা করে জব্দ করে।
"আপনি না ভীষণ বাজে।"
ফিচলে হাসে তাশফিন, দু'হাতে জড়িয়ে ধরে ফারাহ কে।
"আই নো।"
লজ্জায় আড়ষ্ট হয় মেয়েটা।উঠতে দিলো না তাকে, জড়িয়ে ধরে ওভাবেই শুয়ে রইলো।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছে স্নেহা।সে আগেভাগেই রেডি হয়ে বসে আছে। আজকে আবারো ফারাহর সঙ্গে কলেজে যাবে সে। একটা মজার বিষয় আছে, সেহেতু পাবলিক কলেজ সেই সুবাদে স্টুডেন্টদের সাথে মিশে চুপিচুপি ক্লাস করে আসলেও কেউ ধরতে পারে না। বেশ মজা লাগে স্নেহার। ফারাহর শরীর টা অনেকটা ভালো।কোমড়ের ব্যথাটা নেই এখন, থাকবে কি করে?একটা মানুষ একটু পর পর যদি খুব যত্ন নিয়ে মালিশ করে দেয় তাহলে কি করে থাকবে?তাশফিন হয়তো ভেবেছে ফারাহ কিছুই বুঝতে পারেনি। উঁহু ফারাহর শরীরে কেউ হাত রাখবে আর তা ফারাহ বুঝতে পারবে না? ফুরফুরে মেজাজে সিঁড়ি বেয়ে নিচে এলো ফারাহ। কিছুক্ষণ আগে মনটা একটু খারাপ ছিলো, কারণ তাশফিন সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে তাই। কিন্তু তারপরেও ভেতরের আনন্দ টা মন খারাপ গুলো দূ্র করে দিয়েছে।
"চল।"
"হ্যা চল।"
ফারাহ আর স্নেহা বেরিয়ে পড়লো, ঝুমুর যাবে না।অবশ্য সে নিজের অনলাইন ক্লাস নিয়েই ব্যস্ত থাকে সর্বদা।
"ভাইয়া আপনি?"
গেটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাইফুল। সাইফুল দেখে কিছুটা অবাক হলো ফারাহ।এ সময় সে অফিসে থাকে,অথচ আজকে বাড়িতে? স্নেহা আর ফারাহ কে একসাথে দেখে মৃদু হাসলো সাইফুল।
"কলেজে যাচ্ছো? চলো আমি ড্রপ করে আসি।"
অবাক নেত্রে পল্লব ঝাপটায় ফারাহ।
"কিন্তু ভাইয়া আপনার অফিস আছে তো?আর আমরা একাই যেতে..
"আরে না না সমস্যা নেই,চলো। তাছাড়া গাড়ি থাকতে একা হেঁটে যাবে কেন?"
স্নেহা এক গাল হেসে বলল,
"হ্যা চল কষ্ট করে হেঁটে যাওয়ার কি দরকার। সাইফুল ভাইয়া আপনি বরং আমাদের পৌঁছে দিন।"
স্নেহা নাচতে নাচতে গাড়িতে উঠে গেল, শেষমেষ ফারাহও উঠে বসলো গাড়িতে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে,সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে ফারাহ,হুট করেই মনে হচ্ছে তার মাথা ব্যথা ধরছে ধীরে ধীরে।ব্যাগ থেকে এক গাদা চকলেট বের করলো স্নেহা, দুটো ছিঁড়ে একটা ফারাহ কে দিলো।
"এই নে ললিতা খা।"
ফারাহ গদগদ ভঙ্গিতে চকলেট হাতে নিয়ে নিল। ওদিকে এক জোড়া শকু'নি দৃষ্টি চেয়ে আছে তার দিকে। গভীর হচ্ছে দৃষ্টি। সর্বাঙ্গে বিচরণ করছে ফারাহর। বাইরের দিকে তাকিয়ে চকলেট শেষ করে লুকিং গ্লাসের দিকে আনমনে তাকালো ফারাহ। দৃষ্টি সরিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দেয় সাইফুল। কেমন অস্বস্তি লাগছে ফারাহর। সাইফুল