নখ পছন্দ না।
হৃদিও হাত সেরে ফেলে।
"কি লুকাচ্ছিস?"
প্রেমা আমতা আমতা করে বলে,
"ক কই কিছু নাত ভাইয়া৷ "
"কিছু একটা লুকালি!"
"ন না কিছু না৷ তুমি ঘরে যাও না৷ আমি মনিমা আন্টিকে বলে ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি।"
"আমার ব্রেকফাস্ট লাগবে না। হাত সামনে দেখা।"
"ভাইয়া৷"
"হৃদি ফাস্ট। হাত দেখা।"
আরহামের ধমক শুনে কেঁপে ওঠে হৃদি।
যদিও এতক্ষণ প্রেমা উত্তর দিচ্ছিল।। হৃদি চুপচাপ ছিল। হৃদিত এই ভয়েই কিছু বলেনি। তার পরেও তাকে ধমক দিল।
হৃদি চোখ ছোট ছোট করে হাত সামনে আনে।
আরহাম তাকিয়ে আছে হৃদির নখের দিকে।
বিরক্ত সে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আরহাম, প্রেমাকে উপেক্ষা করে হৃদির হাতের কুনুই ধরে ওকে পাশে নিয়ে আসে।
প্রেমা পেছনে ফেরারও সাহস পায় না।। সে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে।
হৃদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কেমন বান্ধবী।
আরহাম হৃদিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে।
এক হাতে দুই হাত লক করে।
হৃদি নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলে আরহমের মুঠো শক্ত হয়৷
"স্থির থাক বেয়াদব নাহলে আছাড় মারব।"
হৃদি থেমে যায়।
আরহাম অন্য হাতে হৃদির সদ্য লাগানো সব নকল নখ গুলো তুলে ফেলে।
মাত্র আঠাটা বসেছিল। তাই হৃদি ব্যাথা পায়।
"আহ... ব্যাথা পাচ্ছি... "
"লাগিয়েছিস কেন তাহলে? "
"ভালো লাগেত..."
আরহাম ওভাবেই হৃদির কন্ঠনালী ধরে নিজের দিকে ফেরায়।
হৃদির চোখে ভয়। চোখে কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,
"ভালো লাগেনা। আর কখনো লাগাবি না। আমার কথা মাথায় ঢুকেছে?"
হৃদি থেমে থেমে উত্তর দেয়,
"ঠ ঠিক আ আছে।"
"মাথায় থাকবেত?"
" হ হ্যা।"
"গুড।"
আরহামের হাত আলগা হয়।
হৃদি ছাড়া পায়।
"বি কেয়ারফুল লিটিল বার্ড।"
আরহাম কথা গুলো বলে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
হৃদি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।। হাত দু'টো সামনে এনে দেখে।
সদ্য ভালো লাগা নখ গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।
"সান্ডাহাতি কোথাকার। বিয়ে হবেনা। বিয়ে হলেও ১০০ টা বাচ্চা হবে। "
হৃদি কান্না করতে করতে আরহাম কে গালি দিচ্ছে।
আরহাম যেতে যেতে হৃদির বকবক শুনছে।
আরহমের ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি।
"Okey. We will make 100 baby's together."
এই বাক্যে ছিল মাতাল করা কন্ঠ।
হৃদি শুনতে না পেলেও আরহমের শান্তি লাগে।
"Wait a little more, my bird."
আরহাম রুমে এসে ওয়াসরুমে চলে যায়।
হৃদিকে এতটা কাছে অনুভব করে আরহাম নিজের জন্য সমস্যা তৈরি করে ফেলেছে।
আরহাম ওয়াসরুমে গিয়ে বাথটাবে ঠান্ডা পানি ভরে বসে পড়ে।
ঠান্ডা পানির চারদিকে কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়৷
আরহামের চোখ বন্ধ।
ঠান্ডা পানিও যেন গরম হয়ে যাচ্ছে।
"তুই আমাকে আর কত কষ্ট দিবি বিহঙ্গিনী৷
আমার শান্ত হয়ে বিনা স্পন্দিত হৃদয় শুধুমাত্র তোর জন্য স্পন্দন করে।
আমার নিশ্বাস যে বন্ধ হয়ে আসে।"
চোখ বন্ধ করে বাথটাবে বসে ছিল আরহম। হটাৎ করেই তার ফোন বেজে ওঠে,
বাথটাবের চারিদিকে কিছুটা উঁচু করে পূর্ণ করে দেওয়া।
সেখানেই ফোন রাখা ছিল আরহামে।
আরহাম ফোনটা হাতে নেয়। ধোঁয়া গুলো হারিয়ে যায়।
"হ্যালো।"
"আপনি বলেছিলেন ডকুমেন্টস গুলো কালেক্ট করতে। আমি করেছি এখন কি করব?"
"ঈদের ছুটি কাটাও।"
"জয়েন হতে না হতেই ছুটি?"
"ছুটি চাও না? সত্যি? ". শ
" না না। আমি সেটা কখন বললাম। ঠিক আছে ছুটি মুবারক। "
কলটা কেটে যায়।
আরহাম হাসে।
ওপর দিকে ফাহিম বিরক্ত হয়ে বলে,
"ডেভিল একটা কখনোই ভালো হবেনা।। ডেভিলের কি হৃদ বলতে কিছু আছে। থাকলে আমাকে দিয়ে এত কষ্ট করাতে পারত।"
সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করার সময় থেকেই হৃদির মন খারাপ দেখছে মাধবি বেগম।
তিনি হাতের কিছু কজ শেষ করে হৃদির পাশে এসে বসে,
"কিরে কি হয়েছে তোর?"
"কিছু না। সামনে ঈদ আমি বাড়িতে যাব।"
প্রেমা পেছন থেকে বলে ওঠে,
"কেন এবার ঈদ সবাই এক জায়গায় করব প্লিজ। "
"না। আমি বাড়ি ছাড়া ঈদ করব না।"
মাধবি বেগম হাসলেন,
"বিয়ের পর কি করবি? দেখ আমি কত বছর হয়ে গেল বাড়িতে ঈদ করিনা৷"
"তোমারও অধিকার আছে বাড়িতে ঈদ করার।"
"তাহলে তোরা যখন আসবি তোদের কে দেখবে?"
হৃদির মনটা ছোট হয়ে যায়।
"বিয়ের পর সবার কথা ভাবতে হয়?"
"হ্যাঁ হয়ত।"
"কিন্তু তোমার ইচ্ছে করেনা বাড়িতে যেতে?"
"করেত। কিন্তু আমিত পারিনা যেতে।"
হৃদি নড়েচড়ে বসে।
"আমি বাড়িতে যাব মামনি।"
"ঠিক আছে মা যাবে। তোমার মামা তোমার জন্য জামা কিনেছে। তোমার নানাও। সেগুলো আসুক। তারপর তোমার বাবা আসলেই চলে যেও।"
মায়ের কথা কেটে আরহাম নিচে আসতে আসতে বলে,
"আম্মু। এবার সবাই এক সঙ্গে ঈদ করব।
ফুপাকে বলো। তিনি কি চায় এটা জিজ্ঞেস করো।"
"তাহলে একটা কজ কর আরহাম। তুই হৃদিকে নিয়ে যা। গিয়ে ওদের সবাইকে নিয়ে আয়।। তোর কথা তোর ফুপা ফেলবে না।
যদি না আসে বাড়ি পাগল মেয়ে টাকে রেখে আসিস৷ "
আরহাম হেসে ফেলে।
তার মায়ের বুদ্ধিতে তার মাঝে মাঝে তাকে অস্কার দিতে মন চায়।। কি সুন্দর বুদ্ধি।
হৃদি তাকিয়ে আছে মামনির দিকে।
কি বলল এটা মামনি।