শেষ চিঠি
নামটা তার ছিল অরণি। ছেলেবেলা থেকে বইয়ের পোকা। গ্রামের ছোট্ট লাইব্রেরিটাই ছিল তার স্বর্গ। বাবা ছিলেন স্কুল মাস্টার, মা গৃহিণী। পরিবারের অবস্থা তেমন স্বচ্ছল না হলেও অরণির চোখে সবসময় স্বপ্ন ছিল — লেখিকা হবে সে।
কলেজে উঠে প্রথম প্রেমে পড়ে অরণি। ছেলেটার নাম রুদ্র। শহর থেকে পড়তে এসেছিল গ্রামে, এক সামাজিক প্রকল্পে। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর চিঠি লেখা, তারপর একদিন সন্ধ্যাবেলায় খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে রুদ্র বলেছিল, "তোমার চোখে আমি গল্প দেখি, অরণি। তুমি আমার গল্পটা হবে?"
অরণি তখন চুপ করে শুধু মাথা নেড়েছিল। স্বপ্নে বিশ্বাস ছিল তার, কিন্তু বাস্তবতা জানত আরও বেশি করে।
দুই বছর চলেছিল সম্পর্কটা, কিন্তু শহরে ফিরে গিয়ে রুদ্র আর নিয়মিত চিঠি লিখত না। ধীরে ধীরে কমে গেল যোগাযোগ। একদিন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। অরণি বুঝে গেল — রুদ্র ফিরে আসবে না।
সে লেখালেখিতে মন দিল। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে লেখা শুরু করল। প্রথম গল্প ছাপা হলো ছোটো এক পত্রিকায়। তারপর আস্তে আস্তে বই। অরণি নামটা সাহিত্যপাড়ায় পরিচিত হয়ে উঠল।
আজ বিশ বছর পর, এক সন্ধ্যায়, পত্রবাহক এল একটা চিঠি নিয়ে। প্রেরক — রুদ্র।
চিঠিতে লেখা:
"অরণি,
আমি জানি আমি যে ক্ষতটা রেখে গিয়েছিলাম, তা হয়তো কোনোদিনই পুরোপুরি সারবে না। আমি তোমার লেখা পড়ি, পুস্তক মেলায় গিয়ে তোমার বই কিনি। তুমি সেই স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছ, যেটা একদিন আমাদের চোখে ছিল।
শুধু বলতে চেয়েছিলাম, আমি গর্বিত তোমার জন্য। আর যদি কখনো মনে হয়, আমাকে মাফ করতে পারো, তাহলে জেনে নিও—এই দুনিয়ার সবচেয়ে ধন্য মানুষ হব আমি।
— রুদ্র”
চিঠিটা হাতে নিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইল অরণি। বাইরে তখন সন্ধ্যার আলো, হালকা বাতাস। তার চোখের কোণ ভিজে গেল। মনের ভিতরে বহু পুরোনো কিছু যেন আবার নড়েচড়ে উঠল।
সে ধীরে ধীরে খামটা টেবিলে রেখে লেখার ডেস্কে বসল। নতুন গল্প শুরু করার সময় হয়েছে।
শেষ।
এই গল্পটা যদি ভালো লেগে থাকে, আমি এটি আরও বড় করে উপন্যাসে রূপ দিতে পারি। চাইলে আপনি পরবর্তী অধ্যায়ও পেতে পারেন!
এই কথোপকথন কি এখনও পর্যন্ত সহায়ক?
Udoy Das
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?