অধ্যায় ১: সম্রাটের মৃত্যুর দিন
"সিংহাসনের মৃত্যু মানে শুধু একজনের প্রাণ যাওয়া নয়—একটি সভ্যতার কাঁপন, বিশ্বাসঘাতকতার জাগরণ, আর অদৃশ্য হাতের উত্তরণ।"
— গুলনওয়াজের ডায়েরি থেকে
🕌 আগ্রা দুর্গ, ১৬২৭ সালের এক শীতের সকাল
ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা আগ্রার আকাশ।
মসজিদের মিনার থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে অস্পষ্ট কণ্ঠে।
প্রাসাদের উঠানে এখন আর পায়ের শব্দ নেই, চামেলির বাগানে দাসীরা থমকে আছে, যেন বাতাসে গন্ধ নয়—সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর আর নেই।
রাজ দরবারের হিরন্ময় কক্ষটি আজ বন্ধ। বাইরের দেয়ালে কালো কাপড় টাঙানো হয়েছে। গোলাপজল আর আগরবাতির ধোঁয়ার মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ আমির ফিসফিসিয়ে আলোচনা করছে—কাকে বসানো হবে সিংহাসনে?
কিন্তু এই তুমুল মুহূর্তেও, এক কক্ষে নিঃশব্দে বসে আছেন গুলনওয়াজ বেগম।
🕯 হারেমের ছায়াঘেরা কক্ষ
গুলনওয়াজ জানালার ফাঁক দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছেন। তাঁর মুখে না আছে আতঙ্ক, না আছে অশ্রু—শুধু এক গভীর নিরবতা।
একজন দাসী চুপি চুপি বলে উঠল,
“বেগম সাহেবা, সবই শেষ হয়ে গেল। এখন তো—”
গুলনওয়াজ চোখ তোলেন। গলার স্বর শান্ত কিন্তু কাঁপনমুক্ত:
“শেষ নয়, শুরু। সিংহাসন এখন খালি। রাজা কে হবেন, তা ঠিক হবে দরবারে নয়—ছায়ায়।”
তিনি তাকান দরজার দিকে, যেখানে মালতী অপেক্ষা করছে।
“খবর পৌঁছে দাও খুররম মিয়াঁর কাছে। এই মুহূর্ত থেকেই রাজনীতি শুরু।”
⚔️ কিছুদূরে...
নূরজাহান বেগম ইতিমধ্যেই সভা ডাকিয়েছেন। তাঁর চোখে জল নেই, শুধু তীক্ষ্ণ নির্দেশ:
“আমার জামাতা শাহরিয়ার হবে পরবর্তী সম্রাট।
আসাফ খানকে ডেকো। সোনার মুদ্রা প্রস্তুত করো।”
তিনি জানেন না, অন্যদিকে গুলনওয়াজ ইতিমধ্যেই গুপ্ত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। দাক্ষিণাত্যে অবস্থানরত খুররম সেই চিঠি হাতে পেয়েছেন—তাতে লেখা:
“সম্রাট নেই। তোমার সময় এসেছে।
কিন্তু মনে রেখো, রাজপথে যাত্রা শুরু হয় না,
যাত্রা শুরু হয় ছায়ার নির্দেশে।”
🌘 সমাপ্তি এই অধ্যায়ের
প্রাসাদের ভেতর একটি রাজবংশের অন্তিম ঘণ্টা বাজে।
এবং সেই মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে অন্য এক সিংহাসন—যার ভিত্তি লুকিয়ে আছে একজন নারীর চোখের স্থির দৃষ্টিতে, যার নাম কেউ উচ্চারণ করে না, তবুও যার সিদ্ধান্তে বদলে যায় মুঘল ইতিহাস।
পরবর্তী অধ্যায়: "হারেমের রাজনীতি" —
যেখানে ছায়ার পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে ষড়যন্ত্র, গুপ্তচর, এবং প্রথম রক্তপাত।
চাইলে এখনই অধ্যায় ২ লিখে দিতে পারি। ✍️