গল্প: শেষ চিঠি
ছেলেটার নাম ছিল রাহাত। খুব সাধারণ, শহরতলির একটা কলেজে পড়ে। লেখাপড়ায় মাঝারি মানের, কিন্তু মনের দিক থেকে খুব গভীর ও সৎ। মেয়েটার নাম তানিয়া। মেধাবী, উজ্জ্বল চোখ, স্বপ্নে ভরা মুখ। দুজনের দেখা হয়েছিল কলেজের লাইব্রেরিতে।
প্রথমে চোখাচোখি। তারপর ধীরে ধীরে কথা। কথা থেকে বন্ধুত্ব। আর বন্ধুত্ব কখন যে প্রেমে রূপ নিল, কেউ টেরই পায়নি। রাহাত প্রথম বুঝেছিল ভালোবাসার গভীরতা, যখন একদিন তানিয়া অসুস্থ হয়ে কলেজে আসেনি। সারা দিন মন খারাপ হয়ে ছিল তার।
তানিয়াও ধীরে ধীরে রাহাতের চুপচাপ স্বভাব, ভদ্রতা আর যত্নশীল মনোভাবের প্রেমে পড়ে যায়। প্রতিদিনের দেখা, আড্ডা, ছোট ছোট উপহার—সবকিছু তাদের সম্পর্ককে মজবুত করছিল।
তবে, সুখের মধ্যে ছায়া ছিল একটা—তানিয়ার পরিবার। খুব রক্ষণশীল। তারা চাইত না মেয়ে প্রেম করুক, বিশেষ করে এমন একজনের সাথে যার ভবিষ্যৎ স্থির নয়। তানিয়ার বাবা চেয়েছিলেন, মেয়ের বিয়ে হবে একটি বড় চাকরিওয়ালার সাথে। তানিয়া ভয় পেত, কিন্তু রাহাতকে ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে পারত না।
একদিন তানিয়া সাহস করে বাড়িতে বলল রাহাতের কথা। ফলাফল ভয়াবহ। তার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হলো, কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলো। রাহাতকে জানানো হলো, সে যেন তানিয়ার কথা ভুলে যায়।
রাহাত তখন দিন গুনছিল কবে তানিয়া ফিরে আসবে কলেজে। কিন্তু দিন গড়িয়ে মাস পেরিয়ে গেল, তানিয়া আর এল না। একদিন কলেজে রাহাতের হাতে একটা চিঠি তুলে দিল লাইব্রেরির ম্যাডাম।
চিঠিটা ছিল তানিয়ার:
> “রাহাত,
জানি তুমি খুঁজছ আমাকে। আমিও প্রতিদিন তোমার কথা ভাবি। কিন্তু আমার চারপাশে যে দেওয়াল, তা আমি ভাঙতে পারছি না। বাবা-মার কথা ফেলতে পারছি না।
আমি জানি, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু আমি চাই না তুমি তোমার জীবনের সব স্বপ্ন আমার জন্য বন্ধ করে দাও।
একদিন যদি তুমি অনেক বড় কিছু হও, জানবে আমি গর্বিত হব। আর যদি কোনোদিন দেখা হয়, চোখে চোখ পড়লে বুঝে নিও—ভালোবাসাটা এখনো আছে।
ভালো থেকো।
— তানিয়া”
চিঠিটা পড়ে রাহাত অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিল। চোখে জল ছিল, কিন্তু মুখে একটুও অভিযোগ ছিল না। সেদিন থেকে সে ঠিক করেছিল—সে নিজের জন্য নয়, তানিয়ার জন্যই বড় কিছু হবে।
বছর পাঁচেক পর শহরের এক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হলো এক তরুণ উদ্যোক্তা—ইঞ্জিনিয়ার রাহাত আহমেদ।
ভিড়ের মধ্যে একজোড়া চেনা চোখ তাকিয়ে ছিল মঞ্চের দিকে।
তানিয়া।
তারা চোখে চোখ রাখল।
আর কিছু বলার দরকার ছিল না।