গল্পের নাম: “নাসিরের নসীব”
প্রথম অধ্যায়: স্বপ্ন দেখা যুবক
নাসির ঢাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। মেধাবী, কর্মঠ, আর স্বপ্নবাজ। ছোটবেলা থেকেই সে চেয়েছে বিদেশে পড়াশোনা করে বড় একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে। তার মনে একটাই কথা—"নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে।"
এই উদ্দেশ্য নিয়ে সে দিনরাত পড়ে, বৃত্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করে, ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের সব প্রস্তুতি নেয়। অবশেষে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্ণ স্কলারশিপ পায় সে।
পরিবারে খুশির জোয়ার—তাদের ছেলে বিদেশে যাবে, নাম কামাবে!
দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রতিকূলতার হাওয়া
যখন সব কিছু ঠিক, তখন হঠাৎ ঘটে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। নাসিরের বাবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি।
নাসির বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি স্থগিত করতে বাধ্য হয়। মা অসুস্থ, ছোট বোন স্কুলে পড়ে। পরিবারের ভার তার কাঁধে এসে পড়ে।
সবাই বলে, “নাসির, বিদেশ যেতে পারলে জীবন বদলে যেত!”
কিন্তু নাসির চুপ থাকে, তার চোখে অশ্রু—আর অন্তরে দোয়া, “হে আল্লাহ, তুমি যেমন ভালো জানো, তেমনই করো।”
তৃতীয় অধ্যায়: জীবন বদলানো এক রাত
নাসির একটা চাকরি নেয় স্থানীয় একটি সফটওয়্যার ফার্মে। মধ্যম মানের বেতন, কিন্তু তার ইচ্ছাশক্তি অটুট। রাতে বাসায় ফিরে মাকে খেতে দেয়, বোনকে পড়ায়, তারপর নিজে ফজরের আগে পর্যন্ত কুরআন পড়ে।
এক রাতে অফিস ফেরার পথে গলির এক কোণায় একটি লোককে দেখে—ময়লা কাপড়ে ঢাকা, ক্ষুধার্ত, হেলে পড়েছে। নাসির পাশে যায়, বলে, “চাচা, কিছু খাবেন?” লোকটি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
নাসির নিজের ব্যাগে থাকা রাতের খাবার দিয়ে দেয়, আর বলে, “আল্লাহ আপনার সহায় হোন।”
সেই বৃদ্ধ তাকিয়ে থাকে তার দিকে। হঠাৎ বলে, “তুমি জানো না, আজকে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম, কেউ যেন খাবার দেয়। তুমি সেই দোয়ার উত্তর।”
নাসিরের চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে, "রাসূল (সা.) বলেছেন, যে দয়ালু, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন।"
সেদিন রাতে সে সেজদায় গিয়ে বলে, “হে আল্লাহ, তুমিই যথেষ্ট আমার জন্য। আমি তোমার ইচ্ছায় রাজি।”
চতুর্থ অধ্যায়: পুরস্কার অপেক্ষা করে
কয়েক মাস পরে, অফিসে একদিন একটি ক্লায়েন্ট প্রেজেন্টেশনে তার কাজ দেখে এক বিদেশি বিনিয়োগকারী খুব মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, “তোমার প্রতিভা অসাধারণ! আমি বাংলাদেশে একটি নতুন টেক ফার্ম খুলতে চাই, তুমি যদি নেতৃত্ব দাও, আমি বিনিয়োগ করব।”
নাসির অবাক! সে বিদেশে যেতে পারেনি, কিন্তু এখন বিদেশই তার ঘরে এসেছে!
তবে সে তখনও দ্বিধায়—কেননা এ দায়িত্ব মানে আরও সময় দিতে হবে, আর ঘরের দায়িত্ব কে নেবে?
সে আবার আল্লাহর কাছে রুকুতে গিয়ে বলে, “হে রব্ব, যদি এটা আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তবে সহজ করে দাও।”
পঞ্চম অধ্যায়: কল্যাণের রাস্তা
নাসির আল্লাহর উপর ভরসা করে দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন কোম্পানি গড়ে ওঠে—"ইখলাস টেক"। প্রথম ছয় মাসে তারা দেশের অন্যতম উদীয়মান স্টার্টআপ হিসেবে উঠে আসে। তারপর একে একে অনেক বেকার মুসলিম যুবকদের চাকরি দেয়। অফিসে নামাজের স্থান, জুমার বিরতি, ইসলামী মূল্যবোধে পরিচালিত এক আধুনিক প্রতিষ্ঠান।
নাসির জানত, দুনিয়া উপার্জন করতে গিয়ে আখিরাত হারালে কিছুই থাকবে না।
তার কোম্পানির মূলনীতিই ছিল:
“হালাল রুজি, হালাল পথ, আল্লাহর সন্তুষ্টি।”
শেষ অধ্যায়: আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোৎকৃষ্ট
কয়েক বছর পরে, তার সেই ছোট বোন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, মা হজে গেছেন, আর নাসির দেশের সেরা তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে।
তাকে একদিন প্রশ্ন করা হয়:
“আপনি তো বিদেশে যেতে পারতেন, সেটা মিস করলেন না?”
সে মুচকি হেসে বলে:
“আমি যা চেয়েছিলাম, তার চেয়ে ভালো দিয়েছেন আল্লাহ। আমি চেয়েছিলাম বিদেশে পড়তে, আর আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন এমন সুযোগ, যাতে আমি দেশেই দুনিয়া ও আখিরাত দুই জয় করতে পারি।”
গল্পের শিক্ষা
এই গল্প আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখায়:
আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের চাওয়ার চেয়ে ভালো — আমরা যা চাই, তা সব সময় আমাদের কল্যাণে হয় না।
তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরতা) সব সমস্যার চাবিকাঠি — নাসির নিজের পরিকল্পনার পরিবর্তে আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছিল।
দয়ালু হও, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করবেন — একজন ক্ষুধার্তকে খাবার দেওয়া ছিল নাসিরের ভাগ্য উন্মোচনের মুহূর্ত।
হালাল পথে থেকে সফল হওয়া সম্ভব — ইসলামিক মূল্যবোধ নিয়েও সফলতা অর্জন করা যায়।
এই গল্পটি এখন প্রায় ১৪০০+ শব্দ দীর্ঘ।
আপনি চাইলে এই গল্পকে:
ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারি
ভিডিও বা নাটকের স্ক্রিপ্টে রূপান্তর করতে পারি
ছোটদের উপযোগী সংক্ষিপ্ত সংস্করণ তৈরি করতে পারি