🌟 গল্পের নাম: তাওবার পুরস্কার
(একজন অপরাধীর জান্নাতের পথে ফিরে আসার সত্যিকারের গল্প)
১. শহরের ভয়ংকর যুবক
মোহিন ঢাকা শহরের এক ভয়ংকর নাম। সে ছোটবেলা থেকেই চুরি-ছিনতাই, মিথ্যা, প্রতারণা করে বড় হয়েছে। কিশোর বয়সেই সে গ্যাংয়ে ঢুকে পড়ে। মদ, জুয়া, অস্ত্র—সবই ছিল তার জীবনের অংশ।
মোহিনের বাবা ছোটবেলায় মারা যান, মা ছিলেন গরিব, কিন্তু ভক্ত ইসলামপ্রাণ। তিনি সব সময় বলতেন,
“বাবা, নামাজ পড়ো। ফিরে এসো। আল্লাহ সব ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু তুমি তো তাওবা করতে চাও না!”
মোহিন বিরক্ত হতো। বলতো,
“মা, তুমি আল্লাহর কথা বলো, কিন্তু আল্লাহ তো আমায় কিছু দেননি! আমি নিজে চালাই জীবন!”
মা কাঁদতেন। এক রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে তিনি কাঁদতে কাঁদতে দোয়া করলেন,
“হে আল্লাহ, তুমি যদি আমার ছেলে মোহিনকে হিদায়াত দাও, তাহলে আমি সারা জীবন শুকরিয়া আদায় করব!”
২. একটি গুলির শব্দ… ও জীবন বদলে যাওয়া
এক রাতে গ্যাংয়ের সঙ্গে মারামারির সময় মোহিনের পেটে গুলি লাগে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায়, অপারেশন জরুরি। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ।
অচেতন অবস্থায় সে স্বপ্ন দেখে—এক অন্ধকার কুয়ায় সে পড়েছে, চারপাশে আগুন, আর অজানা এক আওয়াজ বারবার বলছে,
“তুমি ফিরলে না কেন? তোমার সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!”
হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। সে দেখে মা তার মাথার পাশে বসে কাঁদছে, হাতে তাসবিহ।
মোহিন বলে,
“মা, আমি স্বপ্ন দেখলাম… আমি আর এ পথে ফিরব না। আমাকে আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন… এবার আমি তাওবা করব!”
মায়ের চোখে পানি চলে আসে। সে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ, তুমি ফিরছো, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।”
৩. নতুন শুরু — কিন্তু পুরনো দাগ
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে মোহিন নামাজ শুরু করে, দিনে দিনে চেনা পরিবেশে নিজেকে কষ্টে সরিয়ে রাখে। মসজিদে যায়, কুরআন পড়ে, ইসলামিক আলোচনা শোনে।
কিন্তু সমাজ তাকে সহজে গ্রহণ করে না। দোকানদার বলে,
“ওকে তো চিনিই, কত ছিনতাই করেছে! এখন নামাজ পড়ছে! নাটক!”
বন্ধুরাও ব্যঙ্গ করে,
“ওস্তাদ! জান্নাতের টিকিট কেটে ফেলেছ?”
মোহিন মন খারাপ করে। কিন্তু সেজদায় পড়ে কান্নাকাটি করে:
“হে আল্লাহ, সবাই আমাকে ফেলে দিক, কিন্তু তুমি ফেলে দিও না।”
৪. আল্লাহ তার দ্বার খুললেন
মোহিন একদিন মসজিদে ইমামের কাছে গিয়ে বলে,
“হুজুর, আমি বদলাতে চাই, ইসলাম শিখতে চাই। আমার কি সুযোগ আছে?”
ইমাম মুচকি হেসে বলেন:
“তুমি জানো কি, রাসূল (সা.) বলেছেন—যে তাওবা করে, সে এমন, যেন সে কোনোদিন গোনাহ করেইনি!”
এই কথা মোহিনের হৃদয়ে গেঁথে যায়।
সে মসজিদে নিয়মিত হতে থাকে। একদিন ইমাম সাহেব তাকে বলেন,
“তুমি এত পরিবর্তন হয়েছো, এক কিশোর ক্লাস নাও না?”
মোহিন প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু রাজি হয়। ধীরে ধীরে সে শিশুদের কুরআন শেখায়, তাদের খারাপ পথ থেকে সরায়। তার পরিবর্তন সমাজে আলোড়ন তোলে।
৫. একদিন, এক বাচ্চার চোখে নিজেকে দেখে
মোহিন একদিন দেখেন, একটা বাচ্চা চুরি করে পালাচ্ছে। সে ধরে ফেলে, ধমক না দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কেন করছো এসব?”
বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমার বাবা জেলে, মা অসুস্থ, খেতে পাই না…”
মোহিন স্তব্ধ। সে যেন নিজের ছোটবেলাকে দেখে ফেলে।
সে বাচ্চাটাকে নিজের মাদরাসায় ভর্তি করে। খরচ নিজেই দেয়। নিয়মিত খোঁজ রাখে। আর নিজের অতীত ভেবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।
৬. তাওবার পুরস্কার
একদিন ইসলামি সম্মেলনে মোহিনকে ডাকা হয়। সবার সামনে সে নিজের গল্প বলে।
তার কথা শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক মানুষ। একজন প্রবীণ বলেন,
“তুমি প্রমাণ করেছো, যে সত্যিকারের তাওবা করে, তাকে আল্লাহ দুনিয়াতেই সম্মান দেন।”
কিছুদিন পর, তার মা হজে যাওয়ার সুযোগ পান। মোহিনের মুখে হাসি, চোখে অশ্রু।
সে বলে,
“হে আল্লাহ, তুমি আমার অতীত মুছে দিয়েছো, আমাকে সম্মান দিয়েছো, এখন শুধু তোমার সন্তুষ্টি চাই।”
৭. গল্পের শেষ নয়, বরং জান্নাতের দিকে শুরু
মোহিন এখন একটি দাওয়াহ প্রতিষ্ঠানের অংশ। হাজার হাজার তরুণকে সে সাহায্য করে পথ বদলাতে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
“তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার কী?”
সে বলে,
“আল্লাহ আমাকে তাওবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি মরলে যদি কবরে জান্নাতের বাতাস আসে, সেটাই হবে আমার আসল পুরস্কার।”
📘 এই গল্প থেকে শিক্ষা
তাওবার দরজা সব সময় খোলা — যত বড় গোনাহই হোক, আল্লাহ ক্ষমা করতে প্রস্তুত।
মানুষ পেছনে টানবে, আল্লাহ সামনে ডাকেন — তাই সমাজ নয়, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করো।
আসল পুরস্কার জান্নাতে প্রবেশ — আল্লাহর ক্ষমা, তার সন্তুষ্টি, সেটাই সাফল্য।
তাওবা মানে কাজেও বদল — শুধু কান্না নয়, আমলের পরিবর্তনও দরকার।
Salman Sa
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟
shakhawat josim Shah
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟