...........নীল আকাশের চিঠি...........
তিন বছর পর তামান্না ফিরে এসেছে ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে আজ তার প্রথম অফিসে যোগদান। একটা বিজ্ঞাপন এজেন্সির কনটেন্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পেয়েছে সে। বাস থেকে নেমে, হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় চুল উড়ে যাচ্ছে, শহরটা আগের মতোই আছে — কোলাহল, ট্রাফিক, ধুলা আর হাজার রকম মানুষ। কিন্তু একটাই জিনিস বদলে গেছে — তার ভেতরের মানুষটা।
কোনো এক সময় এই শহরের আকাশে তাকিয়ে সে স্বপ্ন দেখত, ভালোবাসত, আর অপেক্ষা করত। এখন? এখন শুধুই বাস্তবতা।
অফিসের লিফটে উঠতে উঠতে হঠাৎ একটা পুরনো গান কানে আসল —
“তুমি আসবে বলে… জানালায় বসে আছি…”
তামান্নার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। এই গানটা তো রাজীব পছন্দ করত। সেই রাজীব, যার সঙ্গে সে একসময় ভেবেছিল সারাজীবন একসাথে কাটাবে। তিন বছর আগে হঠাৎ করেই তাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়। রাজীব চলে যায় দেশের বাইরে, আর তামান্না চুপচাপ মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ফিরে দেখা
তাদের দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। রাজীব ছিল ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টে, আর তামান্না বাংলা সাহিত্যে। প্রথম দেখা হয় বইমেলায়, একটা কবিতার বই নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে। রাজীব বলেছিল,
— “নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা অত গভীর না, খুব সহজ ভাষা।”
তামান্না তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেছিল,
— “সহজ ভাষা মানেই কি গভীরতা কম? গভীর জিনিস সহজ করে বলা যায় না বলেই তো সবাই তাকে কবি ভাবে!”
সেই তর্কই ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, তারপর ভালোবাসায় রূপ নেয়। ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখা যেত দুজনকে — রাজীব বাইক নিয়ে আসত, তামান্না পেছনে বসত। দুপুরে ক্যান্টিনে একসাথে ভাত খাওয়া, বিকেলে চারুকলায় হাঁটা আর রাতভর ফোনে গল্প।
তাদের একটা স্বপ্ন ছিল — রাজীব বাইরে যাবে মাস্টার্স করতে, তামান্না লেখালেখি চালিয়ে যাবে। তারপর দুই-তিন বছরের মধ্যে বিয়ে। কিন্তু জীবন তো সবসময় প্ল্যান মেনে চলে না।
রাজীব হঠাৎই আমেরিকায় স্কলারশিপ পেয়ে গেল, আর যাওয়ার ঠিক আগে জানাল —
— “তামান্না, আমি জানি সময়টা কঠিন হবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো।”
তামান্না প্রথমে রাজি হয়েছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে দূরত্ব এসে ঘিরে ধরে। সময়ের ব্যবধান, সময়ের অভাব, আর রাজীবের বদলে যাওয়া কথাগুলো — সব মিলিয়ে একদিন তামান্না জানিয়ে দিল,
— “এভাবে আর সম্ভব না, রাজীব। তুমি তোমার জীবন গড়ো, আমিও চেষ্টা করব আমারটা নিয়ে এগিয়ে যেতে।”
বর্তমানের দেখা
তামান্না অফিসে ঢুকেই চমকে গেল। তার টিম লিডার কে জানো? রাজীব! সেই রাজীব — একটু পরিণত, একটু গম্ভীর, কিন্তু চোখে এখনো সেই পুরনো উজ্জ্বলতা।
— “তুমি… এখানে?” — তামান্নার গলা কেঁপে উঠল।
রাজীব হালকা হাসল,
— “আমি শুনেছিলাম তুমি জয়েন করছো। কিন্তু ভাবিনি টিমে থাকবে।”
পরের কয়েকটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটে গেল। তারা কেউই অতীত নিয়ে মুখ খোলেনি। শুধু অফিসের কাজ, প্রেজেন্টেশন, মিটিং — সবকিছু খুব পেশাদারভাবে চলছিল। তবে মাঝে মাঝে চোখাচোখি হতো, আর চোখে যেন কথা বলত তারা।
একদিন অফিস থেকে বের হতেই হালকা বৃষ্টি শুরু হল। তামান্না ছাতা আনেনি। রাজীব নিজের ছাতা বাড়িয়ে দিল। ছাতার নিচে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে দুজনই নীরব।
— “তুমি কেমন আছো?” — হঠাৎ রাজীব জিজ্ঞেস করল।
— “ভালো,” ছোট্ট উত্তর।
— “তুমি কি কখনো মনে করো, যদি সেই সময়টায় একটু সময় দিতাম, তাহলে…?”
তামান্না তাকাল রাজীবের দিকে।
— “ভবিষ্যতের কথা কেউ জানে না, রাজীব। কিন্তু আমি জানি, আমরা চেষ্টার কমতি করিনি।”
রাজীব একটু থেমে বলল,
— “তুমি কি এখনো কাউকে ভালোবাসো?”
তামান্না হেসে বলল,
— “ভালোবাসা তো মুছে যায় না, রাজীব। শুধু রূপ পাল্টায়।”
সেই দিনটা ছিল এক নতুন শুরু। তারা আবার গল্প করতে শুরু করল, একসাথে লাঞ্চ করল, আর একে অপরকে আবার নতুন করে চেনার চেষ্টা করল।
নীল আকাশের চিঠি
একদিন তামান্না অফিসে গিয়ে দেখে তার ডেস্কে একটা খাম। খুলে দেখে ভেতরে একটা কবিতা লেখা:
**“নীল আকাশে চিঠি লিখি,
প্রতীক্ষার পাতায় ভাসে,
যদি তুমি আবার একদিন আসো,
আমার আকাশে বাসা বাঁধো।
ভুলে যাও যত অনিশ্চয়তা,
শুধু চোখের ভাষায় বলো —
আমি থেকেছি, থাকব, শুধু তোমার জন্য।”**
তামান্নার চোখে জল চলে এল। নিচে লেখা — “রাজীব”।
তিন বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাজীবের এমন স্বীকারোক্তি যেন অতীত আর বর্তমানকে একসূত্রে বেঁধে দিল। বিকেলে ছাদে দেখা করতে বলল রাজীব।
ছাদে গিয়ে তামান্না দেখল — রাজীব দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ছোট্ট একটা গিফট বক্স।
— “তামান্না, আমি জানি সময় অনেক কিছু বদলে দেয়। কিন্তু আমার অনুভব, আমার ভালোবাসা আজও বদলায়নি। তুমি কি পারবে আবার শুরু করতে?”
তামান্না কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল — আকাশটা আজ খুব নীল, মেঘ নেই, ধীরে ধীরে রোদ ছড়িয়ে পড়ছে।
— “শুরু তো হয়েই গেছে, রাজীব। তুমি আবার কবিতা লিখেছ, আমি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমায় — আমি এখনো নীরেন্দ্রনাথের কবিতা ভালোবাসি।”
রাজীব হেসে তামান্নার হাত ধরল। এই হাতটা সে কোনোদিন আর ছাড়বে না — দুজনেই জানে।
শেষ কথা
ভালোবাসা সবসময় একরকম হয় না। কখনো সেটা সময়ের পরীক্ষা দেয়, কখনো দূরত্বের। কিন্তু যদি মনের ভেতরে সত্যি অনুভব থাকে, তাহলে কোনো না কোনো একদিন আকাশ চিরে একটা চিঠি ঠিকই এসে পড়ে। আর সেই চিঠির প্রাপক কখনো ভুল হয় না।
শব্দসংখ্যা: ~১,৩১০
চাইলে গল্পটি আরও সংক্ষিপ্ত, দীর্ঘ অথবা নাট্যরূপে তৈরি করে দেওয়া যায়। বললে পরবর্তী সংস্করণ বানিয়ে দিই।
No file chosenNo file chosen
ChatGPT can make mistakes. Check important info.