— অপ্রাপ্তির আর্তি থেকে মুক্
(১) প্রতীক্ষার জ্বালা
এক সময় তার কথা শোনার আশায়
দুই চোখে জ্বালাতাম... প্রত্যাশার দীপ্ত প্রদীপ।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে
ভোরের কুয়াশায় মিলিয়ে গিয়ে
তার একটিমাত্র শব্দের জন্য
হৃদয়াকাশে উঠত হাহাকারের ঝড়।
প্রতিটি নিশি, প্রতিটি প্রাত,
মধ্যাহ্নের ঝলক কিংবা অপরাহ্নের রক্তিমাভায়
অপেক্ষার আগুনে পুড়ত মন।
তার সাথে কিছু মুহূর্ত কথা বলার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
আকুল হয়ে থাকত হৃদয়।
কিন্তু সে,
সে তো কখনোই আমার আকুলতায় ব্যাকুল হতো না।
আমার আকুলতার স্পর্শে
কখনো জাগেনি তার হৃদয়ে প্রেমের তরঙ্গ।
আমি যে প্রতীক্ষা করতাম
শূন্য পথের ধুলোয় পা রেখে,
তাকিয়ে থাকতাম আকাশের অনন্তে, উদাস মুখে...
পদধ্বনির মায়া বুনে বুনে
গুনতাম সময়ের অন্তহীন পল।
কিন্তু সে,
সে তো বুঝল না নীরব আর্তির ভাষা,
বুঝল না ভাঙা হৃদয়ের রক্তক্ষরণ...
যেন কুয়াশায় ঢাকা ভোরের হারানো আর্তনাদ।
যেন আমার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা কেবল মরুভূমির
বাতাসে তৃষ্ণা মিটানোর মতো মিথ্যে মরিচিকা।
(২) প্রত্যাহার
আজ আর আমি তার জন্য
অপেক্ষার সে দীপ্ত প্রদীপ জ্বালাই না।
এখন কথার জন্যও উন্মুখ নয় আমার প্রাণ,
বাতাসে খুঁজি না তার স্বর...
যেন স্তব্ধ বনের ফাঁকে হারিয়ে যাওয়া পাখির গান।
হয়তো আজ সে খোঁজে সেই হারানো চাঁদকে,
নীরব রাতে অশ্রুর জলে ভিজিয়ে নেয় বুকের পাঁজর।
হয়তো অন্ধকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে
অশ্রু-সিক্ত নয়নে চেয়ে থাকে
আমার প্রস্থানের ধূসর পথ পানে...
যেখানে আমি আর ফিরি না কখনো।
(৩) মুক্তি
তবে কি ফিরব আমি ফিরে
তার সেই অশ্রু-বন্যার ঢেউয়ে,
বেদনার নদীতে
যেখানে নয়নজল বহে অবিরল,
যেখানে ব্যথার ঘূর্ণিতে ডুবে যায় প্রাণ?
চিরচেনা সেই ব্যথার আবেশে
তবে কি নিজেকে আবার হারাব?
না,
কখনোই না।
ভালোবাসার নামে অবহেলার শিকল
ছিঁড়ে ফেলেছি আমি চিরতরে।
ছিন্ন করেছি সে বন্ধন
যে বন্ধন হৃদয়কে বেঁধে রাখে বিষণ্ণতার কারাগারে।
ফিরব না সেই অন্ধ পথে
যে পথ জীবনরথের চাকা করে দেয় স্থবির,
যে পথে প্রেমের নামে মেলে কেবল
লাঞ্ছনা, বঞ্চনা
আর বুকের গভীরে পুঞ্জীভূত নীরব কান্না।
আমি ফিরে এসেছি নিজের আলোয়।
নীরব ধ্যানে ডুবে খুঁজি নিজের পথ
যেখানে নেই আর পরের অবহেলা,
যেখানে নিজস্ব আকাশে কেবলই নিজস্ব উড়ান।
কারণ,
নিজের আত্মসম্মান
নিজেকেই রক্ষা করতে হয়।