"ভালোবাসার শেষ সন্ধ্যা"
বিকেলটা যেন অদ্ভুত শান্ত ছিল। আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, আলো কমে আসছে শহরের অলিতে গলিতে। কাফি দাঁড়িয়ে ছিল নদীর পাড়ে, হাতে একটা ছোট্ট চিরকুট। হালকা হাওয়ায় চুল উড়ছিল, কিন্তু মন যেন কোনো ঝড়ের মাঝে আটকে আছে। সে অপেক্ষা করছিল—আবরারার জন্য।
আবরারা, সেই মেয়েটা যার চোখে কাফি প্রথম দেখেছিল নিজের ভবিষ্যৎ। কলেজে প্রথম পরিচয়, বইয়ের পাতার বাইরে যার হাসি ছিল সবচেয়ে সুন্দর কবিতা। প্রথম দিকে কথা বেশি হতো না। একদিন লাইব্রেরিতে হঠাৎ বই দিতে গিয়ে ধাক্কা খায় কাফি। বই পড়ে যায়। আবরারাই বই তুলে দিয়ে বলেছিল, “দেখে হাঁটো না?” সেই ছোট্ট বাক্য দিয়েই এক সম্পর্কের শুরু।
দিন গড়াতেই কাফির জীবন ভরে উঠল আবরারার আলোয়। ওদের ভালোবাসা ছিল অদ্ভুত রকমের সহজ—একসাথে হেঁটে চলা, একসাথে ঝগড়া করা, আবার মূহূর্তেই মিলিয়ে যাওয়া। কাফি কখনও ভেবেও দেখেনি, এই মেয়েটার ছাড়া তার জীবন কেমন হতে পারে।
একদিন কাফি আবরারাকে বলেছিল, “তুই চলে গেলে আমি আর কার জন্য সকাল শুরু করব?” আবরারা মুচকি হেসে বলেছিল, “তুই বেশি নাটক করিস, আমি তো আছি।” কিন্তু জীবনের নাটকটা বাস্তবের চেয়েও বেশি নির্মম হয়।
শেষ বর্ষে হঠাৎ করেই আবরারার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশ চলে যাওয়ার। কারণ, তার বাবার চাকরির পোস্টিং হচ্ছে কানাডায়। আবরারা কিছুই করতে পারেনি। সে চেয়েছিল থাকতে, চেয়েছিল লড়তে, কিন্তু বাস্তবতা কাউকে ছাড় দেয় না।
যেদিন আবরারা কাফিকে সব জানায়, সেদিন সন্ধ্যায় নদীর পাড়েই দেখা হয়েছিল। কাফি একদম চুপচাপ ছিল। শুধু বলেছিল, “তুই কি যেতে চাস?”
আবরারা বলেছিল, “চাই না, কিন্তু যেতে হবে।”
“আমার কথা মনে থাকবে?”
“তুই তো থাকবি আমার প্রতিটা নিশ্বাসে, কাফি।”
সেই সন্ধ্যাটা ছিল ওদের শেষ দেখা। কাফি জানত, সে আর কোনোদিন আবরারার চোখে তাকিয়ে বলতে পারবে না ‘ভালোবাসি’। আর আবরারা জানত, কাফির বুকের মধ্যে আজীবন বাস করবে সে—একটা না বলা গল্প হয়ে।
আজ পাঁচ বছর পর কাফি সেই একই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে। হাতে চিরকুটটা—যেটা সে কোনোদিন আবরারাকে দিতে পারেনি।
চিরকুটে লেখা—
“তুই চলে যাস, সমস্যা নেই। কিন্তু আমি তোকে আমার ভিতর থেকে যেতে দেব না।”
নদীর হাওয়ায় চিরকুটটা উড়ে যায়।
আর কাফি জানে, কিছু মানুষ ফিরে আসে না।
কিন্তু থেকে যায়, প্রতিটা গল্পের মাঝে, প্রতিটা নিঃশ্বাসে।
Md Joynal abedin
コメントを削除
このコメントを削除してもよろしいですか?
Kafe Sardar
コメントを削除
このコメントを削除してもよろしいですか?