**"তার জন্য একশোটা চিঠি"**
রিয়াদ আর তানিয়ার গল্পটা শুরু হয়েছিল কলেজ লাইব্রেরির ধুলো-মাখা বইয়ের গন্ধে। রিয়াদ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছেলে, আর তানিয়া আর্টসের স্বপ্নবাজ ছাত্রী। তাদের পরিচয় হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের *"চোখের বালি"* বইটি নিয়ে ঝগড়া করতে করতে।
"তুমি বুঝবে না, এই বইয়ের গভীরতা!" তানিয়া রাগ করে বলেছিল।
"গভীরতা আমার বোঝার বাইরে না," রিয়াদ হেসে উত্তর দিয়েছিল।
সেই থেকে শুরু। রিয়াদ তানিয়াকে প্রতিদিন একটা করে চিঠি লিখত—হাতে লেখা, কখনও কবিতা, কখনও সাধারণ কথা। চিঠিগুলোতে থাকত গল্প, রসিকতা, কখনও বা গভীর ভালোবাসার কথা। তানিয়া সেগুলো জমা রাখত একটা পুরনো টিফিন বাক্সে।
দিন যায়, সময় বদলে যায়। কলেজ শেষ হয়ে গেল। রিয়াদকে চলে যেতে হলো উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি। দূরত্ব তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাল। ফোনকল কমে এল, মেসেজের জবাব দেরিতে আসতে লাগল। একদিন তানিয়ার ইনবক্সে এল রিয়াদের মেসেজ: *"আমাদের পথ আলাদা।"*
কথাটা তানিয়া মেনে নিল, কিন্তু রিয়াদের লেখা সেই চিঠিগুলো সে রোজ পড়ত। এক বছর পর রিয়াদ ফিরে এল বাংলাদেশে। তানিয়া শুনল, সে বিয়ে করতে আসছে।
বিয়ের দিন সকালে রিয়াদের দরজায় হাজির হলো তানিয়া, সঙ্গে তার টিফিন বাক্স। "এগুলো তোমার," সে বলল, "একশোটা চিঠি। কিন্তু একটাও পড়ে দেখনি তুমি।"
রিয়াদের চোখ ছলছল করে উঠল। "কী বলছ তুমি? আমি তো—"
তানিয়া বাক্স খুলে দেখাল—ভেতরে শুধু খালি কাগজ। রিয়াদ অবাক। "কিন্তু... আমি তো প্রতিদিন লিখেছি!"
তানিয়া কাঁদতে কাঁদতে হাসল, "আমিও প্রতিদিন উত্তর লিখেছি... কিন্তু কখনও পাঠাইনি।"
রিয়াদ বুঝতে পারল, দূরত্ব কখনও ভালোবাসাকে মিটিয়ে দিতে পারে না, শুধু অদৃশ্য করে রাখে। সে তানিয়ার হাত ধরে বলল, *"এবার থেকে শুধু মুখের কথায় বলব, কাগজে নয়।"*
বিয়ের মণ্ডপে গেস্টরা অবাক হয়ে দেখল, বর তার পুরনো একটি টিফিন বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছে, যার ভেতর ভরা আছে না-লেখা কাগজে ভরা অসংখ্য সম্ভাবনা।
**[সমাপ্ত]**