**"তারপর থেকে একশো বছর"**
মেঘনা আর আদিত্যের প্রেম শুরু হয়েছিল রেইনট্রিতে, এক বিকেলে। কলেজের ছাদে দাঁড়িয়ে মেঘনা বৃষ্টি ধরার চেষ্টা করছিল, আদিত্য হঠাৎ এসে ছাতা ধরল তার মাথায়। "বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে," সে বলেছিল। মেঘনা জবাব দিয়েছিল, "জীবনে কিছু না ভিজলে অভিজ্ঞতা বাড়ে না।"
সেই থেকে তাদের প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় দেখা হতো কলেজ গেটে। আদিত্য মেঘনাকে নিয়ে যেত পুরনো বইয়ের দোকানে, আর মেঘনা আদিত্যকে শেখাত কিভাবে রোদে পুড়ে আঁকা যায়। তাদের ভালোবাসা ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু স্পষ্ট—যেমন রাতের আকাশে ধ্রুবতারা।
কিন্তু আদিত্য ছিল দরিদ্র, মেঘনার পরিবার ছিল ধনী। একদিন মেঘনার বাবা আদিত্যকে ডেকে বললেন, "তুমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছ।" আদিত্য চুপ করে চলে গেল। পরদিন থেকে সে আর কলেজ গেটে দাঁড়ায়নি।
মেঘনা অপেক্ষা করত, দিনের পর দিন। এক বছর পর সে শুনল আদিত্য দেশ ছেড়ে চলে গেছে। তারপরও সে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় কলেজ গেটে দাঁড়াত, শুধু এই ভেবে যে হয়তো কোনো দিন আদিত্য ফিরে আসবে।
বছরগুলো কেটে গেল। মেঘনা বিয়ে করল, সংসার করল, কিন্তু তার ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা থাকত— *"আজও বিকেল পাঁচটা হয়ে গেল, তুমি আসোনি।"*
পঞ্চাশ বছর পর এক শীতের সন্ধ্যায় বৃদ্ধা মেঘনা কলেজ গেটে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ একজন বৃদ্ধ এসে তার পাশে দাঁড়াল—চুল পাকা, চোখে চশমা, কিন্তু সেই একই হাসি।
"বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে," আদিত্য বলল।
মেঘনার চোখে পানি এসে গেল, "জীবনে কিছু না ভিজলে অভিজ্ঞতা বাড়ে না।"
তারা দুজনেই জানত, এই দেখা শেষ দেখা। আদিত্য ক্যান্সারে আক্রান্ত, মেঘনার হৃদয়ও দুর্বল। কিন্তু সেই রাতেই তারা কলেজের ছাদে বসলাম, যেখানে একদিন প্রথম দেখা হয়েছিল। আদিত্য বলল, "আমি প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় এই গেটের দিকে তাকিয়েছি, শুধু তোমাকে মনে করার জন্য।"
মেঘনা হাসল, "আমিও প্রতিদিন লিখেছি, 'আজও তুমি আসোনি'। কিন্তু আসলে তুমি এসেছিলে, আমার মনে।"
সেই রাতেই আদিত্য চোখ বন্ধ করল। মেঘনার ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা হলো— *"আজ বিকেল পাঁচটায় তুমি এলেই, আমার সব অপেক্ষা পূর্ণ হলো।"*
**[সমাপ্ত]**