মুসলিম স্ত্রীর জন্য স্বামীর 'গায়রাত' (আত্মমর্যাদাবোধ বা পবিত্র ঈর্ষা) কেমন হওয়া উচিত, তা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল স্ত্রীকে রক্ষা করা নয়, বরং ইসলামী মূল্যবোধ ও পারিবারিক সম্মান রক্ষার একটি অংশ।
স্বামীর গায়রাতের ইতিবাচক দিক
একজন স্বামীর গায়রাত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে প্রকাশ পাওয়া উচিত:
* স্ত্রীর সম্মান রক্ষা: স্বামী তার স্ত্রীর সম্মান, ইজ্জত ও আব্রু রক্ষায় যত্নশীল হবেন। কোনো পরিস্থিতিতেই স্ত্রীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ বা অবমাননা মেনে নেবেন না।
* শালীনতা ও পর্দাকে উৎসাহিত করা: স্বামী স্ত্রীকে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শালীন পোশাক পরিধান করতে এবং পর্দা বজায় রাখতে উৎসাহিত করবেন। এটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং ভালোবাসা ও প্রজ্ঞার সাথে বোঝানো।
* অবাঞ্ছিত মেলামেশা থেকে বিরত রাখা: স্ত্রী যেন বেগানা পুরুষের সাথে অপ্রয়োজনীয় বা ফেতনামূলক মেলামেশা না করেন, সেদিকে স্বামীর সতর্ক দৃষ্টি থাকবে। এক্ষেত্রে কঠোরতা বা সন্দেহপ্রবণতা নয়, বরং সতর্কতামূলক মনোভাব কাম্য।
* ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখানো ও রক্ষা করা: স্বামী স্ত্রীর দ্বীনি জ্ঞান অর্জন ও ইবাদত পালনে সহযোগিতা করবেন। স্ত্রীর মাঝে যদি কোনো ভুল বা অবহেলা দেখেন, তবে কোমলভাবে তা সংশোধনের চেষ্টা করবেন।
* পরিবারের সুরক্ষা: স্বামী তার পরিবারকে, বিশেষ করে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে সমাজের মন্দ প্রভাব এবং অনৈতিকতা থেকে রক্ষা করবেন।
* স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা: স্ত্রীর প্রতি স্বামীর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা থাকা জরুরি। অকারণে সন্দেহ করা বা কুধারণা পোষণ করা গায়রাত নয়, বরং অবিশ্বাসের লক্ষণ। সত্যিকারের গায়রাত স্ত্রীকে সুরক্ষা দেয়, সন্দেহপ্রবণতা নয়।
* স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত করা: ভরণপোষণ, বাসস্থান, ভালোবাসা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা স্বামীর গায়রাতের অংশ। যখন স্বামী স্ত্রীর সকল হক পূরণ করেন, তখন স্ত্রীরও আত্মমর্যাদা বোধ তৈরি হয়।
যে বিষয়গুলো গায়রাত নয়
অনেক সময় ভুলবশত কিছু বিষয়কে গায়রাত মনে করা হয়, যা আসলে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাম্য নয়:
* অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা: স্ত্রীকে সব সময় সন্দেহ করা, তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা বা অকারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গায়রাত নয়, বরং সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
* অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরোপ: ইসলামী শরীয়াহর বাইরে গিয়ে স্ত্রীর উপর অযৌক্তিক বা অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা, যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, তা গায়রাত নয়।
* শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন: স্ত্রীর উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন চালানো, গালিগালাজ করা বা অসম্মান করা কোনোভাবেই গায়রাত হতে পারে না। ইসলামে স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
* অন্যের সামনে স্ত্রীকে হেয় করা: নিজের গায়রাত প্রকাশের নামে অন্যের সামনে স্ত্রীকে হেয় করা বা তার সম্মানহানি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
সারকথা
সংক্ষেপে, মুসলিম স্ত্রীর জন্য স্বামীর গায়রাত হওয়া উচিত বুদ্ধিদীপ্ত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং ভালোবাসা ও সম্মানবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি এমন একটি গুণ যা স্ত্রীকে সুরক্ষিত রাখে, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং একটি সুস্থ ও ইসলামী পরিবার গঠনে সহায়তা করে। এটি কেবল স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব নয়, বরং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে স্ত্রীকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলাতে সহযোগিতা করা এবং বাইরের কুদৃষ্টি বা মন্দ প্রভাব থেকে তাকে বাঁচানোর এক প্রকার আত্মমর্যাদাবোধ।
RB Siyam
टिप्पणी हटाएं
क्या आप वाकई इस टिप्पणी को हटाना चाहते हैं?