দৌড়ে মার্কেটের ভেতর ঢোকার সুযোগও পেলাম না।
তার আগেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেলাম। হুট করে এমন জোর বৃষ্টি নামবে বুঝতেই পারিনি।
যদিও মেঘের কল্যাণে বিকেলেই সন্ধ্যা নেমে এসেছিলো। ব্লাকবোর্ডের মতো কুচকুচে কালো হয়ে গিয়েছিলো মস্ত আকাশ।
ছুটির দিনে এমন দীর্ঘ সন্ধ্যায় মন খারাপ নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে ভালো লাগে।
তবে ভুলেও বুঝতেও পারিনি কখন আকাশ ভেঙে পড়বে।
আমার মতো যারা মার্কেটে এসে ঢুকেছে সবাই কমবেশি ভিজে গেছে।
এমন সময় সোহান এসে ঢুকলো।
ওকে কিছু বলার আগেই ও আমাকে দেখে বললো,“কী রে দো দোস্ত, এ এ এখানে কী ক ক রিস?”
আমি কিছু বলতে পারলাম না।
গলায় কথা আটকে গেলো।
সোহান আমার ছোটবেলার বন্ধু।
গত রবিবারেও দেখা হয়েছে।
কই, তখনও তো ও তোতলা ছিলো না!
সোহানকে নিয়ে এক চায়ের দোকানে বসলাম।
দুই কাপ চা অর্ডার করেই বললাম,“আচ্ছা, তোর ঘটনা কী খুলে বলতো?
হঠাৎ করে তোতলা হয়ে গেলি কীভাবে?”
আমার কথা শুনে সোহানের মুখটা এমন দুঃখী দুঃখী হয়ে গেল, কী বলবো?
সোহান তোতলাতে তোতলাতে ঘটনাটি বললো।
গতকাল তোর ভাবিকে নিয়ে রাতে বিএফসিতে গিয়েছিলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে দেখে বোধহয় মানুষ ভেঙে পড়েছে সেখানে।
ঢুকেই দেখি বেড়াছেড়া অবস্থা।
খাবার অর্ডারের দীর্ঘ লাইন।
বসার জায়গা নেই।
কপাল গুণে দুইজন উঠতেই আমরা চেয়ার দখল করে নিলাম।
একদিকে টানা বসার ব্যবস্থা। সামনে ছোট ছোট টেবিল দিয়ে অপজিটে একটি করে চেয়ার দিয়ে দিয়েছে।
দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অর্ডার দিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসেছি।
মাথার উপর এসি। তাও দরদর করে ঘামছি।
এমন সময় বা পাশের সিট খালি হলো।
সাথে সাথেই এসে বসলো এক কাপল।
ছেলেটি চলে গেলো খাবার অর্ডার করতে। মেয়েটি এমন ভাবে তোর ভাবির পাশে বসেছে যে, চোখ একটু এদিক সেদিক হলেই দৃষ্টি মেয়ের উপর গিয়ে পড়ে।
মেয়েটিও কয়েকবার আমার দিকে তাকালো।
একজন ওয়েটারকে ডেকে আমার মাথার উপর এসি দেখালো।
বলল, এসিটি বাড়িয়ে দেন। গরম লাগছে।
বলতে গিয়ে কিছুটা তোতলালো।
আসলে তার গরম লাগছে, নাকি আমাকে ঘামতে দেখে বলেছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়!
তবে বউয়ের চোখ দেখে বুঝলাম, তার মনে কোনো প্রশ্ন নেই। সে নিশ্চিত উত্তর জেনে বসে আছে।
তাছাড়া আমার চোখ যে মেয়ের উপর পড়েছে কিংবা মেয়েটিও যে কয়েকবার আমাকে ফলো করেছে, এগুলো সে সবই খেয়াল করেছে।
বউকে খুশি করার জন্য বললাম,“এত সুন্দর একটা মেয়ে কিন্তু তোতলা!”
বউ এবার এমন ভাবে তাকালো, লেখকরা যাকে অগ্নিদৃষ্টি বলে।
আফসোস, বউ সুন্দর কথাটাই শুনলো, তোতলা কথাটা শুনলো না।
বাড়ি ফিরে সোহানের কী হয়েছিলো তা আর বলতে ইচ্ছে করে না।
ফলাফল তো সামনেই বসে আছে।
তোতলা সোহান।
© # #