অনেকে হয়তো জানে না—হাসনাত আবদুল্লাহ এক সময় কতটা ভালো লিখতো। ওর ফেসবুক পোস্টগুলো ছিলো চিন্তায় পরিপূর্ণ, ভাষায় প্রাঞ্জল, এবং বক্তব্যে গভীর। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষকরাও তার পোস্টে মন্তব্য করতেন। আমি নিজেই অনেকবার এসব দেখেছি, মনে হতো—“কী দারুণ চিন্তাশক্তি!” একটু ঈর্ষাও হতো। কিন্তু মাঝে মাঝে ভাবতাম, এত উচ্চমার্গের চিন্তা করে লাভ কী, যদি সেটা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত না হয়?
সেই ধারণা আমার ভেঙে গেলো যেদিন দেখি রেজিস্টার বিল্ডিং-এর সামনে একা দাঁড়িয়ে আছে হাসনাত, হাতে প্ল্যাকার্ড—লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে। তখন বুঝলাম, ছেলেটা শুধু চিন্তায় নয়, কর্মেও সৎ এবং সাহসী। ঢাবির মতো ব্যস্ত ক্যাম্পাসে খুব কম মানুষ নিজের সময়, নিরাপত্তা আর স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে এভাবে দাঁড়ায়।
জুলাই মাসে হাসনাত আবদুল্লাহকে নতুনভাবে চেনা শুরু করলাম। যে দেশ এক কাপড়ে স্বাধীন হয়েছিল, সেই দেশের নতুন বিপ্লবে তার ভূমিকা যেন আরও বড় হয়ে উঠলো। জুলাইয়ের পর থেকে যারা দেশে সত্যিকারের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্নের সবচেয়ে দৃঢ় যোদ্ধা হয়ে উঠেছে হাসনাত। স্বাভাবিকভাবে, দালাল মিডিয়া ও স্বৈরশাসকের চোখ গিয়েছে তার দিকেই।
আমার জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা অসাধারণ সব কথা লেখে, বড় বড় বই পড়ে, বিশ্লেষণ করে—কিন্তু বাস্তব জীবনে তাদের ছায়াও দেখা যায় না। আমার এক বন্ধু ছিল, হাজার হাজার বই পড়েছে, কিন্তু তাকে কখনো টিএসসিতে নিপীড়িত ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি, দেখিনি কোনো আন্দোলনে অংশ নিতে। এই ধরনের মানুষদের ওপর একটা ক্ষোভ জন্মেছিলো আমার ভিতরে।
কিন্তু হাসনাত আবদুল্লাহ আলাদা। সে লিখে, ভাবে, বলে—আর সেসব চিন্তা বাস্তবে রূপ দেয়। তার মাঝে কোনো মেকি কান্না নেই, কোনো আত্মপ্রদর্শন নেই। আছে শুধু একটা সাধারণ অথচ অসাধারণ আত্মা, যে সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়, চুপ করে না থাকে।
স্বপ্ন দেখতে কোনো দোষ নেই। এই পৃথিবীতে আজ তরুণরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাস্টিন ট্রুডোর মতো নেতৃত্ব আজ লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা। আমিও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণকে দেখেছি, যারা সব দলেই আছে—চলনশীল, উদ্যমী, স্বপ্নবাজ। শুধু প্রয়োজন তাদের একটু জায়গা দেওয়া, সাহস দেওয়া।
হাসনাত আবদুল্লাহদের হারিয়ে যেতে দিলে বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে পড়বে। এদের পাশে দাঁড়ানো মানে ভবিষ্যতের জন্য দাঁড়ানো।
© তারেক আহমেদ

Shakil Hossain
supprimer les commentaires
Etes-vous sûr que vous voulez supprimer ce commentaire ?