জীবন আসলে কী?
একটা প্রশ্ন, যেটা আমরা সবাই জীবনের একেকটা পর্যায়ে এসে একেকভাবে ব্যাখ্যা করি। ছোটবেলায় জীবন মানে ছিল খেলাধুলা, স্কুলে যাওয়া, বিকেলে মা ডাকছে বলে ঘরে ফিরে আসা। তখন বুঝতাম না, সময় নামের যে জিনিসটা আছে, সেটা কতটা নির্মম। এখন বুঝি — সময় থেমে থাকে না, কাউকে অপেক্ষা করায় না, কারো জন্য নিজেকে বদলায় না। আমাদেরই বদলাতে হয়।
বড় হতে হতে দেখলাম, মানুষ বদলে যায়। কেউ বন্ধু ছিল, আজ পরিচিত না। কেউ শত্রু ছিল, আজ পাশে দাঁড়িয়ে। তখন বুঝলাম, সম্পর্ক মানে রক্ত না, মানে অনুভব, মানে যার পাশে দাঁড়িয়ে শান্তি পাওয়া যায়, সেও আপন। আর যাকে ধরে রাখতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে হয়, সে যতই আপন হোক, তাকে ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়।
এই জীবনে আমরা অনেক কিছু চায়। টাকা, নাম, পরিচিতি, ভালোবাসা। কিন্তু সব কিছু একসাথে পাওয়া যায় না। কোনোটার জন্য লড়াই করতে হয়, কোনোটার জন্য কষ্ট পেতে হয়, আর কোনোটার জন্য সব ছেড়ে দিতে হয়। এই যে ত্যাগ – এটাই জীবনকে বাস্তব করে তোলে।
কখনো কখনো মনে হয় – কেনো এত যুদ্ধ? কেনো এত দুঃখ, কষ্ট, প্রতিযোগিতা? কিন্তু তারপরই মনে পড়ে – জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়ার জন্য নয়। প্রতিটা অর্জনের পেছনে থাকে ঘাম, চোখের পানি, আর অব্যক্ত কষ্টের পাহাড়।
মানুষ ভাবে – সুখ অনেক দূরের কিছু। কিন্তু আসলে, সুখ লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট মুহূর্তে। বন্ধুর একটা ফোনে, মায়ের হাতের রান্নায়, ভালোবাসার মানুষটার একটুখানি হাসিতে। আমরা সেই সুখকে খুঁজতে যাই দুনিয়া ঘুরে, অথচ সে ছিল একদম পাশে।
জীবনে কখনো কখনো হেরে যেতে হয় জিততে শেখার জন্য। ব্যথা পেতে হয় অনুভব করার জন্য। আর একা থাকতে হয় নিজের ভেতরের আমি'কে খুঁজে পাওয়ার জন্য। কারণ সবকিছু যখন হারিয়ে যায়, তখন যে টুকু থেকে যায় — সেটাই তুমি।
ভালোবাসো, কিন্তু আটকে রাখো না। বিশ্বাস করো, কিন্তু অন্ধ হয়ো না। দাও, কিন্তু প্রতিদান চেও না। কারণ, প্রকৃত ভালোবাসা কোনো শর্ত মানে না। আর প্রকৃত বিশ্বাস কখনো পরীক্ষার প্রয়োজন ফেলে না।
আমরা অনেক ভুল করি, অনেক বার ভেঙে পড়ি, আবার উঠে দাঁড়াই। এটা শুধু তোমার নয়, সবার গল্প। তাই দয়া করে নিজের জীবনটাকে হালকা করে নিও না। তুমি একা নও। কেউ না কেউ তোমার মতো অনুভব করছে। কেউ না কেউ এই রাতেও চোখ ভিজিয়ে বসে আছে, শুধু নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য।
সবশেষে বলি — নিজের প্রতি সৎ থাকো। কারো মতো হতে যেও না। তোমার পথ আলাদা, তোমার গন্তব্যও তাই। ধৈর্য ধরো, সময় একদিন সব ঠিক করে দেবে। শুধু হাল ছেড়ো না।