মানুষ কখনোই পাহাড়ে হোঁচট খায় না। হোঁচট খায় ছোট ছোট নুড়ি পাথরে, হোঁচট খায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-পাথরের টুকরোতে। পাহাড়ের মতো বিশাল কিছুর সামনে আমরা সতর্ক থাকি, প্রস্তুত থাকি, কিন্তু সেই সামান্য, অবহেলিত কিছুর জন্যই পড়ে যাই।

জীবনের মতোই, সম্পর্কের পথও এমনই। একটি সম্পর্ক সেটা প্রেম, বন্ধুত্ব, দাম্পত্য কিংবা পারিবারিক কখনোই বড় কোনো ইস্যুতে হঠাৎ ভেঙে পড়ে না। সম্পর্ক ভাঙে ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি, অবহেলা, না বলা কথার ভেতরে জমে থাকা কষ্ট, কিংবা সময়মতো একটুখানি মনোযোগ না দেওয়ার কারণে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো প্রথমে হয়তো তেমন গুরুত্ব পায় না, কিন্তু দিনে দিনে সেগুলো জমতে জমতে পাহাড়ের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। এক সময় আসে যখন আর বোঝাপড়ার কোনো রাস্তা খোলা থাকে না বিচ্ছেদ হয়ে ওঠে একমাত্র সমাধান।

আমরা অনেক সময় ভাবি, "এতো ছোট একটা বিষয়, ও এতোটাই রাগ করলো কেন?" কিন্তু এই ছোট্ট বিষয়টাই হয়তো তার কাছে বড় ছিল। হয়তো সে প্রতিদিন একটু কথা বলা, একটুখানি সময় চেয়েছিল। হয়তো আপনার একটাই বাক্য বা অভিব্যক্তি তার মনে অনেক গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। একটি ক্ষতের জন্য সবসময় বড় অস্ত্র লাগে না, ক্ষত গভীর হয় তখনই যখন অনুভূতির জায়গায় আঘাত লাগে। তাই একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে বড় কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে ছোট ছোট যত্নের, সামান্য খেয়ালের, একটুখানি বোঝাপড়ার। সময়মতো একটি মেসেজ, ক্লান্ত দিনে এক কাপ কষ্টে থাকা মানুষটার পাশে নীরব উপস্থিতি, কিংবা শুধুই মন দিয়ে শোনা তার মনের কথা এই ছোট্ট ছোট্ট কাজগুলোই আজীবনের বন্ধন গড়ে তোলে। সম্পর্ক মানে একে অপরের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারা। তার অনুভূতিকে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করা। একটুখানি কেয়ার, একটুখানি সম্মান, কথায় গুরুত্ব দেওয়া, অনুভূতির প্রতি স্পর্শকাতরতা এগুলিই একটি সম্পর্কের মেরুদণ্ড।

শেষ কথায় বলা যায়, সম্পর্ক একটি সুন্দর বাগানের মতো। প্রতিদিন সেখানে একটু করে পানি দিতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, খেয়াল রাখতে হয় সূর্যের আলো পড়ছে কিনা। অবহেলা করলেই তা শুকিয়ে যায়। তাই সম্পর্কের ছোট ছোট বিষয়গুলোকে অবহেলা নয়, বরং যত্নে আলিঙ্গন করা উচিত। কেননা, জীবনের সবথেকে বড় সুখ লুকিয়ে থাকে এই ছোট ছোট খুঁটিনাটিতেই

image