✨ পর্ব ৪: কবিতার সন্ধ্যা
সন্ধ্যার নরম আলোয় কলেজ মাঠটা সোনালি হয়ে উঠেছিল। বসন্ত প্রায় ফুরিয়ে এলেও বাতাসে এখনও রঙ আর মিষ্টি গন্ধ লেগে আছে। আজ ছিল কলেজের সাহিত্য আসর— সবাই কবিতা, গল্প, গান শোনাবে। মিম আর রাহাত দুজনেই ঠিক করেছিল অংশ নেবে।
মিম সাজগোজ করে হলরুমে ঢুকল। আজ তার পরনে নীল সালোয়ার কামিজ, কপালে ছোট্ট নীল টিপ। চুল খোলা, ঠোঁটে হালকা হাসি। রাহাত তাকে দেখে কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল। মিম একবার চোখ তুলে তাকিয়ে হেসে ফেলল।
— “কী হলো? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?”
রাহাত মৃদু হেসে বলল,
— “আজ তুমি কবিতার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছো।”
মিম লাজুকভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু তার মুখের কোণে যে হাসি ফুটে উঠল, তাতে রাহাতের বুক কেমন যেন উষ্ণ হয়ে উঠল।
সাহিত্য আসর শুরু হলো। একে একে সবাই তাদের কবিতা, গান, প্রবন্ধ শোনাল। মিমের নাম ঘোষণা করা হলো। সে মাইক হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠল। চারপাশ নিস্তব্ধ।
মিম তার কবিতা পড়া শুরু করল—
“যখন আমি হারিয়ে যাই ভিড়ে,
তুমি আসো চুপচাপ পাশে।
যখন আমি ভেঙে পড়ি অজান্তে,
তুমি ছুঁয়ে দাও আমার আকাশে।
আমি জানি না কেন,
তোমায় ছাড়া কোনো গল্প আমার লেখা হয় না…”
কবিতা পড়তে পড়তে মিমের গলায় এক ধরনের কাঁপুনি ছিল। চোখ দুটো বারবার রাহাতের দিকে চলে যাচ্ছিল। কবিতা শেষ হলে হলরুমে হাততালি পড়ল। মিম মুচকি হেসে মঞ্চ থেকে নামল।
তারপর মঞ্চে ডাক পড়ল রাহাতের। সে ধীরে ধীরে উঠে গেল মিমের পাশ দিয়ে। মিম তার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে ফিসফিসিয়ে বলল,
— “তোমার কবিতা শুনবো।”
রাহাত মাইক হাতে নিয়ে চোখ বুজল। তারপর শুরু করল—
“আমার সমস্ত শব্দ তোমায় ঘিরে,
আমার প্রতিটি ভাবনা তোমার জন্য।
তুমি ছাড়া আমার কবিতা যেন নদী ছাড়া নৌকা।
তোমার হাসি আমার রোদ,
তোমার চোখ আমার আকাশ…”
কবিতা শেষ করে সে মিমের দিকে তাকাল। মিমের চোখ ভিজে উঠেছিল। এই প্রথম মিম অনুভব করল— সে আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারছে না।
সেদিন অনুষ্ঠান শেষে দুজন বাইরে বেরিয়ে এল। আকাশজোড়া চাঁদ উঠেছে। গাছতলার সেই পুরনো জায়গায় বসে মিম নিচু স্বরে বলল,
— “তোমার কবিতা… আমার জন্য লিখেছিলে?”
রাহাত এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল,
— “তুমি ছাড়া তো আমার কবিতা লেখা হয় না।”
মিম চোখ নামিয়ে হাসল। তার ঠোঁটে সেই চিরচেনা লাজুকতা। আর চোখে যেন অজস্র না বলা কথা।
সেদিনের সন্ধ্যায় কবিতা তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য সেতু বুনে দিল। দুজনেই বুঝল— এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।