✨ পর্ব ৫: সাহসী স্বীকারোক্তি
কয়েকদিন ধরে রাহাতের ভেতর অদ্ভুত এক অস্থিরতা। মিমের সঙ্গে যতই সময় কাটছে, ততই তার বুকের ভেতর যেন ঝড় উঠছে। প্রতিদিন মিমের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়, আর কত লুকিয়ে রাখা সম্ভব? আজ না হয় সব বলে দেয়া যাক।
সেদিন বিকেলটা ছিল রোদ ঝলমলে। কলেজ শেষে মিমকে মেসেজ পাঠিয়ে জানাল— “আজ তোমায় একটা কথা বলবো। কলেজের পেছনের গাছতলায় আসো।”
মিম জবাব দিল— “ঠিক আছে।”
গাছতলার ছায়ায় দাঁড়িয়ে রাহাত বারবার হাতের আঙুল কচলাচ্ছিল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। মনে হাজার রকম ভাবনা— মিম কি রাগ করবে? না, মিমও কি একই অনুভব বয়ে নিয়ে চলছে?
অবশেষে মিম এল। নরম লাল কামিজ, খোলা চুল, চোখে সেই চেনা উজ্জ্বলতা।
— “কী ব্যাপার? এমন সিরিয়াস মুখে ডাকলে কেন?”
মিম বসতে যেতেই রাহাত হাত বাড়িয়ে তাকে থামিয়ে বলল—
— “না… আজ বসে নয়। দাঁড়িয়েই শোনো। আর… কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলবে না।”
মিম একটু অবাক হয়ে তাকাল। রাহাত একগাল নিঃশ্বাস নিয়ে শুরু করল—
— “তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে সব বদলে গেছে। তোমার হাসি দেখলে মন হালকা হয়ে যায়। তুমি কথা না বললে পুরোদিন কেমন ফাঁপা ফাঁপা লাগে। তোমার চোখে তাকালে নিজেকে খুঁজে পাই। আমি জানি না ভালোবাসা আসলে কীভাবে হয়… কিন্তু আমি জানি, আমি তোমায় ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না।”
কথা শেষ করে সে মিমের দিকে তাকাল। গলার স্বর কেঁপে উঠল—
— “তোমায়… ভালোবাসি মিম। খুব ভালোবাসি।”
কয়েক সেকেন্ড যেন পুরো পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেল। বাতাসও থমকে। মিম মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। রাহাত ভাবল হয়তো মিম কষ্ট পেয়েছে। হয়তো বন্ধুত্বটাও আজ ভেঙে যাবে।
কিন্তু হঠাৎ মিম তার চোখ তুলে তাকাল। চোখে জল। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
সে আস্তে করে বলল—
— “তুমি জানো… সেই প্রথমদিন তোমার করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আমারও মনে হয়েছিল, এই ছেলেটার সঙ্গে গল্পটা অন্যরকম হবে। আমি জানতাম না, কীভাবে বলবো… কিন্তু এখন যখন বললে… আমি আর লুকাবো না।”
এক ধাপ এগিয়ে এসে মিম আলতো করে রাহাতের হাতটা ধরে বলল—
— “তোমাকেও ভালোবাসি। অনেক।”
রাহাত অবাক হয়ে মিমের হাতের উষ্ণতা টের পেল। তার চোখ ভিজে উঠল। বুকের ভেতর যে ঝড় ছিল, তা যেন থেমে গিয়ে মধুর স্রোত হয়ে বয়ে গেল।
সেদিনের শেষ রোদে দাঁড়িয়ে দুজন একে অপরকে দেখছিল। চারপাশের পৃথিবী মুছে গিয়ে যেন শুধু দুজনেই ছিল।
এক সাহসী স্বীকারোক্তি তাদের বন্ধুত্বের বাঁধন ছিঁড়ে এক অটুট ভালোবাসায় গেঁথে দিল।