✨ পর্ব ৮: দূরত্বের কষ্ট

ঝড়ের সেই রাতের পর তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। মনে হলো, আর কোনো ঝড় তাদের ভাঙতে পারবে না। কিন্তু কখনও কখনও দূরত্ব ঝড়ের থেকেও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

একদিন মিম জানাল—
— “আমার আব্বু ঢাকায় নতুন জায়গায় বদলি হয়েছে। আমাকেও যেতে হবে… অন্তত কিছুদিন।”

রাহাত স্তব্ধ হয়ে গেল। মিমের কথাগুলো যেন কানে ঢুকল ঠিকই, কিন্তু বুকের ভেতর দুঃসহ শূন্যতা নেমে এলো।
— “কতদিন?”
মিম নিচু গলায় বলল—
— “কিছুদিন… হয়তো কয়েক মাস। হয়তো তারও বেশি।”

রাহাত আর কিছু বলতে পারল না। মিমের চোখেও পানি টলমল করছিল। তারা জানত, এই দূরত্ব তাদের জন্য সহজ হবে না।

বিদায়ের দিন কলেজ মাঠে শেষবারের মতো মিম আর রাহাত একে অপরকে জড়িয়ে ধরল। মিম ফিসফিসিয়ে বলল—
— “আমাদের গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে না, তাই না?”
রাহাত শক্তভাবে হাত ধরে বলল—
— “না মিম। তুমি কাছে থাকো আর দূরে— আমি তোমারই থাকবো।”

মিম চলে গেল। ট্রেনের জানালায় বসে কান্না চেপে রাখল। আর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রাহাত কেবল তাকিয়ে রইল শূন্যে।

প্রথম কয়েকদিন ফোন আর মেসেজে কথা হতো। “খেয়েছো?”, “আজ কি পড়লে?”, “আমার খুব মনে পড়ছে”— এইসব ছোট ছোট কথায় দিনগুলো চলতে থাকল। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর বাস্তবতা তাদের আড়াল করে দিতে লাগল।

একদিন মিমের মেসেজ এলো—
“আজ খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে ছুঁতে না পারলে সবকিছু ফাঁপা লাগে।”

রাহাত উত্তর দিল—
“আমারও মিম। তুমি নেই, অথচ চারপাশে কেবল তোমাকেই দেখি।”

তবু মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হতো। মিম অভিমান করত— “সারাদিন তোমার সময় কই?”, রাহাত রাগ করত— “তুমি তো বলো না কেমন আছো।”

তারা জানত, এই দূরত্ব সম্পর্ককে ধীরে ধীরে বিষিয়ে তুলছে। তবু দুজনেই চেষ্টা করত টিকিয়ে রাখতে। প্রতিদিন রাতে মিম আকাশের তারা দেখত আর মেসেজ পাঠাত—
“এই তারা আমাদের দেখছে। তুমি-আমি দুজনই এর নিচে আছি।”

রাহাত উত্তর দিত—
“যতো দূরে থাকো, তবু আমার মনের ভেতর তোমার ঠিকানা অটুট।”

কিন্তু কষ্টটা সহজ ছিল না। হাসির আড়ালে কান্না লুকিয়ে তারা বাঁচার চেষ্টা করছিল।

দূরত্ব তাদের সম্পর্ককে বারবার পরীক্ষা করছিল। তারা জানত না— এই পরীক্ষা কি পেরোতে পারবে? নাকি হারিয়ে যাবে এক অজানা অন্ধকারে?

তাদের ভালোবাসা কি দূরত্বকে জয় করতে পারবে?

এই অজানা প্রশ্ন নিয়ে রাতের আকাশের মতোই অজস্র অন্ধকার আর অল্প কিছু আলোয় তাদের গল্প বয়ে যাচ্ছিল…