টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। বিল দিয়ে ঘুরতেই দেখি পাশের ইলেকট্রিসিটি পোলটার গায়ে কি একটা লিফলেট লাগানো। উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম। সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে লেখা, "আমি ১০০০ টাকার একটা নোট এখানে হারিয়ে ফেলেছি। যদি কেউ খুঁজে পান দয়া করে আমার কাছে পৌঁছে দিন। আমি একজন বৃদ্ধ মহিলা, চোখে খুব কম দেখি।" তারপর নিচে একটি ঠিকানা দেওয়া।
ঠিকানা কাছেই। হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেক। কৌতূহল দমন করতে না পেরে আমি খুঁজতে খুঁজতে গেলাম সেখানে।
জং ধরা ভাঙাচোরা গেট দিয়ে সাবধানে ভেতরে ঢুকলাম। একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘর, উঠানে এক অশীতিপর বৃদ্ধা বসে আছেন।
আমার পায়ের শব্দে পেয়ে তিনি মুখ তুলে তাকালেন, "কে?"
আমার সম্বিত ফিরল, "গলির মাথায় আমি আপনার ১০০০ টাকা খুঁজে পেয়েছি!"
আমার কথা শুনে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। একটু পর, কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন, "বাবা, এই পর্যন্ত অন্তত ১০/১২ জন আমার কাছে এসেছে আর ১০০০ টাকা করে দিয়ে বলেছে, তারা নাকি রাস্তায় আমার টাকা খুঁজে পেয়েছে। আমার কোনো টাকা হারায় নাই, ওই লেখাগুলোও আমার না, আমি খুব একটা পড়ালেখা জানিও না!"
আমি নিচু হয়ে ওনার হাত ধরে বললাম, "যাই হোক, সন্তান মনে করে আপনি টাকাটা রেখে দিন।"
এই কথা শোনার পর তিনি টাকাটা নিয়ে বললেন, "বাবা, আমি খুব অসুস্থ। ভালো করে হাঁটতে চলতে পারি না। কি যে তোমায় খেতে দিই!"
এই বলে তিনি অনেক কষ্টে লাঠিতে ভর দিয়ে বারান্দায় উঠলেন, আমার মনে হলো তিনি এখনি পড়ে যাবেন। আমি তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলাম।
তিনি কম্পমান হাতে বাটিতে গুড়মুড়ি ঢালতে বললেন, "তুমি আমার অতিথি! তুমি বসো।"
আমার পেটে একটুও ক্ষুধা ছিল না। তবুও, কিছুটা বৃদ্ধার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে, বাকিটা তার সাথে আরো খানিকক্ষণ গল্প করার লোভে ধীরে ধীরে গুড়মুড়ি খেতে লাগলাম।
কথায় কথায় জানলাম এই পৃথিবীতে আপনজন বলতে ওনার কেউ নেই। আগে ভিক্ষা করতেন, অসুস্থ হবার পর আর বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না।
ফেরার সময় বৃদ্ধা বললেন, "বাবা, একটা অনুরোধ, তুমি যাওয়ার সময় ওই কাগজটা ছিঁড়ে ফেলো।"
আমি ওনার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মনে মনে ভাবছিলাম, "সবাইকে উনি বলার পরও কেউ কেন কাগজটি ছেঁড়েনি?"
আর ভাবছিলাম ওই মানুষটির কথা যিনি ওই নোটটি লিখেছেন। সহায়সম্বলহীন অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষটাকে সাহায্য করার জন্য এত সুন্দর উপায় বের করার জন্য আমি তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম।
হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়ল একজনের কথায়, "এই যে, শুনছেন?"
চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, "এই ঠিকানাটা কোথায় বলতে পারেন? একটু আগে আমি রাস্তায় ১০০০ টাকার একটা নোট পেয়েছি, এটা আমি ফেরত দিতে চাই।"
ঠিকানা দেখিয়ে সামনে এগোলাম। কখন জানি আমার চোখদুটো ভিজে উঠেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি বিড়বিড় করে বললাম, এভাবেই বেঁচে থাকুক আমাদের মানবতা!

Shawon Ahmed
تبصرہ حذف کریں۔
کیا آپ واقعی اس تبصرہ کو حذف کرنا چاہتے ہیں؟
Mir Abs Shawon
تبصرہ حذف کریں۔
کیا آپ واقعی اس تبصرہ کو حذف کرنا چاہتے ہیں؟