মানুষের উপকার করা মহান ইবাদত। এটি মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকা ও সেবা করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। মানুষকে অসহায়ত্ব থেকে, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং সেই বিনিয়োগ তিনি বহুগুণে ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্জকে তার জন্য আল্লাহ বহুগুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত করে থাকেন এবং তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহকে কর্জ বা ঋণ দেওয়ার অর্থ হলো তাঁর পথে খরচ করা। গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা। একে ঋণ বলা হয়েছে রূপকার্থে। কেননা এর বিনিময় দেওয়া হবে উত্তমরূপে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম কর্জ (ঋণ) দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান। (সুরা হাদিদ: ১৮)
মানুষের উপকার করলে সৌভাগ্যময় মৃত্যু হয়। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, সৎ কাজ করার ফলে মন্দ মৃত্যু থেকে সুরক্ষা মেলে; গোপনে কৃত দান রবের ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় আয়ু বৃদ্ধি পায়। (সহিহুত তারগিব: ৮৯০)
আরও পড়ুন: মানুষের সম্মান রক্ষা করলে যে প্রতিদান পাবেন
আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুমিন জাতিকে বানিয়েছেন এক দেহের মতো করে। দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে গোটা দেহ আক্রান্ত হওয়া। তাই মুমিন অন্যের সেবা করাকে নিজের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করবে, এটাই ইসলামের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম: ৬৪৮০)
কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অসহায়দের পাশাপাশি আমাদেরও পরীক্ষা নিচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা দেখছেন। এই পরীক্ষায় পাস করতে হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, দরিদ্র প্রতিবেশী, এতিম-মিসকিন, নির্যাতিত মুসলিমসহ প্রত্যেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এতেই নীহিত রয়েছে মহান আল্লাহর দয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)
আরেক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই সৎকর্ম নয়, বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ওই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের ওপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য।’ (সুরা বাকারা: ১৭৭)
আরও পড়ুন: কাউকে কষ্ট দেওয়ার পর ক্ষমা না পেলে করণীয় কী
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
মানবতার আদর্শ মহানবী (স.)-এর জীবনের মহিমান্বিত অভ্যাস ছিল মানুষের উপকার করা, দরিদ্রদের উদারচিত্তে দান করা, অন্যের প্রতি বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এসব কাজের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪)
মানুষের উপকার করতে পারা মূলত ভাগ্যের ব্যাপার। এই সুযোগ ও সৌভাগ্য সবার হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য নিবেদিত এমন অনেক বান্দা আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপকার করার জন্য বিশেষ নিয়ামত দান করেন। যতক্ষণ তারা সেগুলো মানবকল্যাণে ব্যয় করে ততক্ষণ তিনি তাদের সেসব নিয়ামতের মধ্যে বিদ্যমান রাখেন। কিন্তু যখন তারা সে উপকার করা বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি তাদের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের দিয়ে দেন। (সহিহুত তারগিব: ২৬১৭)
তাই আসুন, আমরা আমাদের আশপাশে থাকা অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। মানুষের উপকারে মনোনিবেশ করি। আল্লাহ আমাদের মানবতার কল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পাদক: মহিউদ্দিন সরকার
Mir Abs Shawon
टिप्पणी हटाएं
क्या आप वाकई इस टिप्पणी को हटाना चाहते हैं?