ইয়েমেনের একজন আলেমের কাছে কয়েকজন ফুটবলার জিজ্ঞেস করলো, "উস্তাদ, শুনলাম ফুটবল খেলা নাকি হারাম। আসলেই কি তাই?"
ইয়েমেনের সেই আলেমের নাম হাবিব উমর বিন হাফিজ (হাফিজাহুল্লাহ)। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর। তিনি দারুল মোস্তফা ইসলামিক সেমিনারের ডিন। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় হাবিব উমর বিন হাফিজ ছিলেন অষ্টম।
ফুটবলারদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "তোমাদেরকে কে বলেছে ফুটবল খেলা হারাম?"
সরাসরি উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন। কারণ, বাই ডিফল্ট ফুটবল খেলা তো হারাম না। পাড়ার মাঠে, স্কুলের মাঠে যে ফুটবল খেলা হয়, এই খেলাটা তো হারাম না। বরং খেলার সাথে যেসব অনুসঙ্গ যুক্ত হয়, সেগুলোর কারণে এটা হারাম। যেমন: হাফপ্যান্ট পরে সতর খোলা রাখা।
একটি হালাল খাবারের সাথে হারাম মেশানো হলে ঐ হালাল খাবারটি হারাম হতে পারে। তাই বলে, হালাল খাবার (যেমন দুধ) ইটসেল্ফ তো হারাম না।
হাবিব উমর বিন হাফিজ বললেন, "তোমরা কোথায় ফুটবল খেলো? আমাকে জানাও তো। আমি আগামীকাল থেকে তোমাদের খেলা দেখতে যাবো।"
আলেমের কথা শুনে ফুটবলাররা বেশ অবাক। এরকম কথা তারা কখনো শুনেনি। এতো বড়ো একজন স্কলার তাদের খেলা দেখতে চাচ্ছেন, এটা শুনে তারা একটু বিব্রত হলো। তারা তাদের লোকেশন দিলো।
পরদিন বিকেলবেলা যুবকরা যখন মাঠে খেলতে গেলো, দেখতে পেলো সেই আলেম তাদের খেলা দেখতে এসেছেন। গ্যালারিতে বসে তিনি খেলা দেখছেন। এভাবে প্রতিদিন তিনি যুবকদের খেলা দেখতে যান।
একসময় যুবকরা একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে চায়। কিন্তু, টুর্নামেন্টের পুরস্কার দেবার জন্য ডোনার খুঁজে পাচ্ছিলো না। আল্লামা হাবিব উমর বিন হাফিজ বললেন, "তোমরা পুরস্কারের ব্যাপারে চিন্তা করো না। আমি তোমাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করবো।"
যুবকরা নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। একজন আলেম তাদেরকে ফুটবল খেলার পুরস্কার দিবেন?
ফাইনালের আগের দিন হাবিব উমর বিন হাফিজ জানালেন, তিনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে থাকবেন। তবে, ফুটবলারদেরকে একটি অনুরোধ জানালেন।
ফুটবলারদেরকে তিনি এতো সহযোগিতা করেছেন, তারা তার যেকোনো অনুরোধ মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো।
হাবিব উমর বিন হাফিজ বললেন, "আগামীকাল তোমাদেরকে ট্রাউজার পরে খেলতে হবে। কারণ, পুরুষের সতর ঢেকে রাখা ফরজ। থ্রি-কোয়ার্টার পরে খুব ভালোভাবে ফুটবল খেলতে পারবে। পারবে না তোমরা?"
যুবকরা সবাই একবাক্যে রাজি। তারা থ্রি-কোয়ার্টার পরে ফাইনাল খেলবে।
ফাইনাল খেলা হলো। গ্যালারিতে বসে হাবিব উমর বিন হাফিজ মনোমুগ্ধকর ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করলেন। প্রধান অতিথি হিশেবে পুরস্কার দিলেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছোট্ট করে একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, "দেখো বাবারা, আমি তোমাদের খেলা দেখতে প্রতিদিন আসি। তোমরা কি কষ্ট করে আমার কাছে মাঝেমধ্যে আসবে?"
ফুটবলাররা বললো, "আমরা তো আপনার কাছে যেতে চাই। কিন্তু, আমাদের লজ্জা লাগে। আপনার সাথে কতো বড়ো বড়ো আলেমরা থাকেন, তাদের পাশে বসতে আমরা বিব্রতবোধ করি।"
মাওলানা হাবিব উমর বিন হাফিজ বললেন, "সেটা ব্যাপার না। তোমরা বরং অন্য সময় আসো। প্রতিদিন এই টাইমে আমি ফ্রি থাকি। তোমরা তখন আসতে পারবা না?"
ফুটবলাররা সমস্বরে বললো, "জ্বি, উস্তাদ আসতে পারবো।"
ট্রাউজার, থ্রি-কোয়ার্টার পরে ফুটবল খেলার পাশাপাশি ফুটবলাররা সেই আলেমের দারসে যাওয়া শুরু করলো। মাঝেমধ্যে নামাজ পড়া শুরু করলো।
কিছুদিন এভাবে কাটলো।
অতঃপর দেখা গেলো, তাদের অনেকেই ৫ ওয়াক্তের নামাজী হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আলেম হয়ে গেলো, নিয়মিত দ্বীন নিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলো।
একজন দাঈ হলেন অপরচুনিটি সিকার। তিনি গোবরে পদ্মফুল ফুটাতে চান। মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করে নেন, কাছে টেনে নেন।
একটি মুসলিম সমাজে ফকিহের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রয়োজন আছে দা'ঈর। কেউ কেউ একইসাথে দুটোর ভূমিকা পালন করতে পারেন। সমাজে এই দুটোর ব্যালেন্স না থাকলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ ফেসবুকে এখন এটাই বেশি হচ্ছে। কারণ, আমরা এখনও ঠিক করতে পারিনি আমাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত।