নষ্ট জীবন – হৃদয়বিদারক কান্নার গল্প
রাতের অন্ধকারে বসে আছে রাকিব। এক হাতের সিগারেটটা জ্বলছে, আরেক হাতে কাঁপতে থাকা মোবাইল। পর্দার ওপারে কারো নাম নেই, কারো মেসেজও নেই। অথচ এক সময় এই ফোনই ছিল তার জীবনের সব আশা-ভরসা। ভালোবাসার মিষ্টি বার্তা, বন্ধুরা ডেকে নেওয়ার উচ্ছ্বাস, কিংবা মায়ের কণ্ঠস্বর—সবই ছিল এই ছোট্ট যন্ত্রে। কিন্তু আজ যেন এর ভেতর কেবল শূন্যতা, হতাশা আর তিক্ত স্মৃতি।
রাকিবের জন্ম হয়েছিল এক সাধারণ পরিবারে। বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা গৃহিণী। ছোটবেলায় সবার চোখে সে ছিল খুব মেধাবী। গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরা বলতেন, “এই ছেলেটা একদিন বড় কিছু করবে।” সত্যিই, পড়াশোনায় ছিল অসাধারণ। পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় সে প্রথম হয়েছে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবে, কিংবা অন্তত এমন কিছু করবে যাতে সারা গ্রাম গর্ব করে।
কিন্তু স্বপ্নের সেই আলো ধীরে ধীরে নিভে যেতে শুরু করল কলেজে ওঠার পর। শহরে নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, আর সঙ্গে অজানা স্বাধীনতা—রাকিবকে অন্য পথে টেনে নিল। প্রথমে আড্ডা, পরে সিগারেট, তারপর নেশার জগৎ। মায়ের ফোনে রাতে মিথ্যে বলা, বাবার কষ্টের টাকা দিয়ে অকারণে খরচ করা—সবই ছিল নষ্ট জীবনের শুরু।
প্রথম দিকে সে বুঝতে পারেনি। মনে হতো, “এগুলো সাময়িক। আমি চাইলে ফিরে আসতে পারব।” কিন্তু মানুষ নেশার ফাঁদে একবার পড়লে ফেরার রাস্তা সহজে খুঁজে পায় না। নতুন বন্ধুরা তাকে শেখাল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভিডিও গেমস খেলা, সিনেমার অন্ধকার হলে সময় নষ্ট করা, অকারণে টাকা উড়িয়ে দেওয়া। পরীক্ষার হলে একসময় যে ছেলে সবার আগে খাতা জমা দিত, সে ধীরে ধীরে নকল ছাড়া কিছু লিখতেই পারত না।
বাবা টের পেয়েছিলেন ছেলের ভেতরে পরিবর্তন। মায়ের কান্না আর বাবার বকুনি—সবই তার কাছে বিরক্তির হয়ে দাঁড়াল। একদিন রাগ করে বাবাকে বলেই ফেলল, “আমাকে নিয়ে এত আশা করবেন না। আমি কিছু হতে চাই না।” কথাটা বলার পরপরই বাবা চুপ করে গিয়েছিলেন। চোখে শুধু জল ভেসেছিল, কিন্তু কোনো উত্তর দেননি। সেই নীরব দৃষ্টি আজও রাকিবকে তাড়া করে ফেরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হলো সে। একসময় বইয়ের প্রতি ভয় তৈরি হলো। আশেপাশের বন্ধুরা সবাই কেউ না কেউ ভালো জায়গায় ভর্তি হতে লাগল। কারো ফেসবুকে ভর্তি উল্লাসের ছবি, কারো হাতে ভর্তি কার্ড। রাকিবের হাতে তখন কেবল হতাশা। বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে শুরু করল। বন্ধুরা ডাকে, কিন্তু সে আর সাড়া দেয় না।
এরপর আসে আরেকটি ভয়ংকর অধ্যায়—প্রেম।
এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হলো তার। শুরুতে সবকিছু ভালোই চলছিল। মেয়েটি তাকে বদলাতে চেয়েছিল। বলত, “তুমি পারবে, শুধু চাইলে।” কিছুদিন সে চেষ্টা করেছিল। বই হাতে নিয়েছিল, বাবাকে খুশি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুরোনো অভ্যাস আবার টেনে নিল। সেই মেয়েও একসময় ছেড়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় শুধু একটি কথাই রেখে গেল, “তুমি তোমার জীবন নষ্ট করছো, আর আমি তোমার কবর হতে চাই না।”
সেই দিন থেকে রাকিব একেবারে ভেঙে পড়ল। প্রেম হারানো, বাবা-মায়ের ভরসা হারানো, নিজের স্বপ্ন হারানো—সব মিলে জীবনের মানেই হারিয়ে গেল। ঘরে বসে থাকতে থাকতে সে যেন পাথরে পরিণত হলো। রাতে চুপচাপ ছাদে গিয়ে বসে থাকত, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবত, “আসলে আমার জন্মই কেন হলো?”
আজ পাঁচ বছর কেটে গেছে। যারা তার সমবয়সী ছিল, তারা এখন চাকরিজীবী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ বিদেশে গিয়ে সংসার করছে। আর রাকিব এখনো বেকার, বাবার টাকায় চলছে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো কাজে যোগ দিয়েছে, কিন্তু কোনো কাজই টিকেনি। মানুষ তাকে দেখে বলে, “এই ছেলেটার জীবন শেষ।”
সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তটা আসে তখন, যখন সে দেখে মায়ের চোখে জল। মা তাকে কিছু বলে না, কিন্তু লুকিয়ে কাঁদতে দেখে। একদিন রাতে মায়ের সেই কান্না শুনে তার মনে হলো, “আমার কারণে এ মানুষগুলো সারাজীবন কষ্ট পাচ্ছে। আমি কেন বেঁচে আছি?” সিগারেটের ধোঁয়া ভেদ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বারবার নিজের ব্যর্থতা গুনতে থাকে।
রাকিব জানে, তার জীবন আর আগের মতো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সে জানে, যত চেষ্টা করুক, তার সময় নষ্ট হয়ে গেছে। তবু এক অদ্ভুত টান তাকে বাঁচিয়ে রাখে—মায়ের ভালোবাসা। মাঝে মাঝে ভাবে, “আমি যদি না থাকি, মা ভেঙে পড়বেন।” আর সেই কারণেই হয়তো আজও সে বেঁচে আছে, শূন্য জীবনের বোঝা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
কখনো মনে হয়, আবার শুরু করা সম্ভব। হয়তো কোনো দিন নতুন কিছু হবে, হয়তো কোনো দিন তার জীবনও পথ খুঁজে পাবে। কিন্তু আবার ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে—“আমি কি পারব? নষ্ট জীবনের মানুষ কি আবার গড়তে পারে নতুন কিছু?”
রাতের অন্ধকারে বসে থাকতে থাকতে তার চোখে জল নামে। সিগারেটের আগুন নিভে যায়, কিন্তু বুকের আগুন জ্বলে থাকে। একসময় সে ফিসফিস করে বলে ওঠে—
“আমার জীবনটা আসলেই নষ্ট হয়ে গেছে।”
এভাবেই প্রতিদিন তার দিন শেষ হয়, নতুন দিনের কোনো স্বপ্ন ছাড়াই।
ব্যর্থ জীবন
জীবনের পথে সবাই সাফল্যের আলো খুঁজে বেড়ায়। কেউ খুঁজে পায়, কেউবা হোঁচট খেয়ে থেমে যায়। এই গল্পটা এমন এক মানুষের, যার জীবনের অধ্যায়গুলো সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার আঁধারেই বেশি রঙিন।
শুরুটা
রফিক ছোটবেলায় ছিল খুব মেধাবী। গ্রামের স্কুলে সবাই তাকে ডাকত “বিদ্যাধর” বলে। শিক্ষকরা বিশ্বাস করতেন, একদিন সে বড় মানুষ হবে। তার চোখে ছিল অনেক স্বপ্ন—ডাক্তার হবে, বাবাকে গরিবি থেকে মুক্তি দেবে, মাকে একটা পাকা ঘরে রাখবে।
কিন্তু স্বপ্নের পথে যতই এগোতে লাগল, ততই জীবনের কঠিন বাস্তবতার দেয়ালে ধাক্কা খেল। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারল না টাকার অভাবে। বাবার সামান্য চাষাবাদের আয়ে সংসার চলত কষ্টে। রফিক চাকরির আশায় ঢাকা গেল।
সংগ্রাম
ঢাকায় এসে প্রথমেই বুঝল—গ্রামের স্বপ্ন শহরে টিকে থাকে না। কাগজে ছাপা চাকরির বিজ্ঞাপন পড়ে দৌড়াদৌড়ি করল, সাক্ষাৎকার দিল, কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে বা পরিচয়ের ঘাটতিতে কোথাও টিকতে পারল না।
টিউশনি করে দিন চলল। কিন্তু সেখানে-ও প্রতিযোগিতা, দালালির খেলা। মাস শেষে অল্প টাকায় চলা কঠিন হয়ে উঠল। অনেক রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমোতে হয়েছে তাকে।
বন্ধুরা কেউ বিদেশে চলে গেল, কেউ সরকারি চাকরিতে ঢুকে গেল, কারও ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল। অথচ রফিকের দিন কাটে একখানা ফাঁকা রুমে, ভাঙা খাটে শুয়ে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে।
প্রেমের অধ্যায়
রফিকের জীবনে আলো এনেছিল এক মেয়ে—শিলা। সে-ই তাকে বলত, “তুমি একদিন পারবেই।” শিলার চোখে রফিক ছিল আলাদা। কিন্তু পরিবার চাইল ধনী পাত্র। রফিক কিছুই দিতে পারল না। শেষমেশ শিলার বিয়ে হয়ে গেল এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
এই আঘাত রফিককে ভেঙে দিল ভেতর থেকে। সে আরও একা হয়ে গেল। জীবনের প্রতি আস্থা হারাতে লাগল।
ব্যর্থতার ঘূর্ণিঝড়
রফিক কয়েকবার ছোটখাটো ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিল—মোবাইলের দোকান, চা-স্টল, বই বিক্রি। কিন্তু হয় প্রতারণার শিকার হয়েছে, নয়তো লোকসানে বন্ধ করতে হয়েছে।
চাকরির চেষ্টা চলল অবিরত। বয়স যত বাড়ল, সুযোগ ততই কমে এল। একসময় সরকারি চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে গেল। প্রাইভেট সেক্টরে অভিজ্ঞতা না থাকায় সেখানেও আর কেউ নিতে চাইত না।
যে মানুষ একদিন বড় স্বপ্ন দেখত, সে এখন বেঁচে থাকার জন্য রিকশা চালায়। প্রতিদিন ভোরে রিকশা নিয়ে বের হয়, রাতে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসে।
সমাজের দৃষ্টি
গ্রামে গেলে মানুষ তাকে ব্যর্থ বলে। কেউ বলে—“এত পড়াশোনা করে রিকশা চালাচ্ছে!” কেউ হাসাহাসি করে, কেউ করুণা দেখায়। রফিক আর গ্রামে যেতে চায় না। সে জানে, ব্যর্থ মানুষকে সমাজ কখনো ক্ষমা করে না।
মনের যুদ্ধ
রফিক অনেক রাত একা বসে ভাবে—“আমি কোথায় ভুল করলাম? কেন আমি কিছুই পারলাম না?” তার বুকের ভেতর এক অদৃশ্য ব্যথা জমে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু শেষ করে দেয়।
কিন্তু আবার ভাবে—“না, আমি বেঁচে আছি মানে এখনো লড়াই শেষ হয়নি।”
জীবনের শেষ অধ্যায়
বছর কেটে যায়। রফিক এখন মধ্যবয়সী। শরীর আগের মতো শক্তিশালী নেই। তবুও প্রতিদিন রিকশা চালায়, কারণ তার পেট তো আর থেমে নেই।
কোনো পরিবার গড়তে পারেনি। শিলার স্মৃতি এখনও মনে ভেসে ওঠে। কিন্তু সে এখন অন্য কারও স্ত্রী, সন্তানের মা।
রফিকের ঘরে কেউ নেই। একাকিত্বই তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী।
উপলব্ধি
একদিন রিকশা চালাতে চালাতে সে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে দাঁড়াল। দেখল, কিছু তরুণ-তরুণী হাসিমুখে বের হচ্ছে। ওদের চোখে ছিল সেই স্বপ্ন, যেটা একসময় তার চোখেও ছিল।
রফিক মনে মনে বলল, “তোমরা ভাগ্যবান। আমার মতো যেন ব্যর্থ না হও।”
উপসংহার
রফিকের জীবন এক ব্যর্থতার গল্প। কিন্তু এই ব্যর্থতার মধ্যেও একটা শিক্ষা আছে—জীবন সবসময় ন্যায্য নয়। সবার ভাগ্যে সাফল্য লেখা থাকে না।
কখনো কখনো ব্যর্থ জীবনও অন্যদের জন্য শিক্ষা হয়ে ওঠে। রফিক হয়তো বড় কিছু হতে পারেনি, কিন্তু তার গল্প অন্যদের শেখায়—স্বপ্ন ভাঙলেও মানুষ বেঁচে থাকে, লড়াই করে, টিকে থাকে।,,,,,,,,,
এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম এক কাছ থেকে আরেক কাজ জন্মিশন যখন কাজটা করতে হবেই তাই আসেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ভালো উন্নত মানের কিছু ডিজাইন করে নিতে চাইলে আমাকে দিয়ে করে নিতে পারেন কম্পিউটারের স্যামব্রয়ডারি জগতে কম্পিউটার এমব্রয়ডারি মেশিনারি সকল কিছুর জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে রুচি সম্মত ডিজাইন আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন দীর্ঘদিন যাবৎ আমি একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করে আসছি সেই প্রতিষ্ঠানের যে ডিজাইন গুলো সে এখন আমি করে দিচ্ছি এখানে আমরা ডিজাইন করছি প্যান্ট শার্ট পাঞ্জাবি থ্রি পিস ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক সামগ্রী উপরে আছে গাড়ির সিট বেট বিছনার কভার বালিশের চাদর ও বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন আমরা তৈরি করে থাকি তাই আমাদের সাথে যেই কোন মুহূর্তে আপনার যোগাযোগ করতে পারবেন এবং কাজ করে থাকি
জীবনের রঙ্গমঞ্চ
মানুষের জীবন যেন এক অভিনব নাটক। এই নাটকের নাম জীবন, আর মঞ্চ হলো এই বিশাল পৃথিবী। প্রতিদিন আমরা অজান্তেই কোনো না কোনো চরিত্রে অভিনয় করে চলেছি। কেউ নায়ক, কেউ খলনায়ক, কেউ দর্শক, আবার কেউ অদৃশ্য চরিত্র, যার উপস্থিতি বোঝা যায় কেবল তার প্রভাবেই।
শৈশবকাল যেন এই নাটকের প্রথম দৃশ্য। সেখানে থাকে নিষ্পাপ হাসি, ছোটখাটো কান্না, কচি হাতে খেলা। তখন চরিত্রগুলো সহজ—মা-বাবা যেন পরিচালক, বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠ যেন মঞ্চের আলো। এখানে ভুল করলে কেউ হাসে, কেউ শাসন করে, কিন্তু সবই মমতার আবরণে ঢাকা।
যৌবন এলে নাটক বদলে যায়। এখানে চরিত্রের গভীরতা বেড়ে যায়, স্বপ্নগুলো জটিল হয়। ভালোবাসা আসে, আবার ব্যর্থতার দংশনও লাগে। কেউ বন্ধুত্বে সৎ চরিত্রে অভিনয় করে, আবার কেউ বিশ্বাসঘাতকের চরিত্রে। অনেক সময় আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না, কোন চরিত্রে আমরা সবচেয়ে মানানসই। এ সময় মঞ্চের আলোও উজ্জ্বল হয়, করতালি ও সমালোচনা সমান তালে বাজতে থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে এসে মানুষ প্রায়ই বুঝতে পারে—এই নাটকে সে শুধু অভিনয় করছে না, বরং অন্যের নাটকের অংশও হয়ে উঠেছে। সংসারের দায়িত্ব, কাজের চাপ, সমাজের প্রত্যাশা—সব মিলে তাকে এক কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। কখনো সে পরিশ্রমী শ্রমিক, কখনো স্নেহময় পিতা-মাতা, কখনো সংগ্রামী সঙ্গী। কিন্তু দর্শক তখনও আছে—প্রতিবেশী, সহকর্মী, কিংবা সমাজ। তাদের চোখে সঠিক চরিত্রে অভিনয় করা যেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জীবনের শেষ দৃশ্যগুলো প্রায়ই এক অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। মঞ্চের আলো তখন নিভে আসতে থাকে, করতালি কমে যায়। অনেক চরিত্র হারিয়ে যায় স্মৃতির অন্ধকারে। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ তখন দর্শকের আসনে বসে অতীতের অভিনয়গুলো স্মরণ করে। ভাবে, কোথাও যদি একটু ভিন্নভাবে চরিত্রটি অভিনয় করা যেত! কোথাও যদি কোনো সংলাপ না বলেও বলা হতো!
তবু এই রঙ্গমঞ্চে ব্যর্থতা নেই। প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি ক্ষুদ্র হাসি-কান্নাই এই নাটককে পূর্ণ করেছে। জীবনের মঞ্চে আসল সাফল্য করতালি নয়, বরং অভিনয় শেষে যেন বলা যায়—“আমি আমার চরিত্রটা যথাসাধ্য সৎভাবে পালন করেছি।”
এই নাটক চলতেই থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আমরা মঞ্চ ছেড়ে গেলে অন্য কেউ আসে, নতুন চরিত্রে, নতুন আলো নিয়ে। তবু মঞ্চ একই থেকে যায়, আর নাটকের নামও বদলায় না—সে নাম জীবন।
একটা বিকেলের রোদ যেন তার জীবনের শেষ আলো হয়ে এসেছিল। আরিফা বসে ছিল জানালার পাশে, হাতে পুরোনো একটা চিঠি। চিঠিটা লিখেছিল রিফাত—যে একদিন তার পৃথিবীর সব কিছু ছিল। ভালোবাসা, স্বপ্ন, আশা—সবই ছিলো তাদের একসাথে বোনা।
রিফাতের সাথে পরিচয় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। দু’জনের হাসি, গল্প, আড্ডায় যেন সময় থমকে যেত। ওরা ভেবেছিল জীবন একসাথে কাটাবে, ছোট্ট একটা সংসার গড়বে। কিন্তু বাস্তবতার কাছে সব স্বপ্ন হেরে গেল। রিফাতের পরিবার মেনে নেয়নি তাদের সম্পর্ক। সামাজিক অবস্থান, আয়ের পার্থক্য আর হাজারো অজুহাতে সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেল।
আরিফা ভেবেছিল রিফাত লড়াই করবে, কিন্তু সে হার মেনে নিল। বিদায়ের দিন শুধু বলেছিল—“ভালোবাসি বলেই তোমাকে কষ্টে ফেলতে চাই না।” কথাটা শোনার পর আরিফার চোখে পৃথিবীটা ভেঙে পড়েছিল।
বছরের পর বছর কেটে গেছে, তবুও রিফাতের নামটা শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে। সে জানে, ভালোবাসা হারালেও সেই স্মৃতিগুলোকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। মাঝে মাঝে সে ভাবে, যদি রিফাত সত্যিই লড়ত, তাহলে হয়তো আজ তাদের সন্তান হেসে উঠত এই ঘরে।
চিঠিটা ভাঁজ করে বুকের কাছে চেপে ধরে আরিফা নিঃশব্দে চোখের পানি মুছে নিল। সে জানে, প্রেমে ব্যর্থতা শেষ নয়, কিন্তু সেই অসমাপ্ত গল্পটাই আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ভালোবাসা না পেলেও ভালোবাসা থেকে যায়—যেন হৃদয়ের গভীরে অমর এক যন্ত্রণা।
#sad#love