আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে-
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে-
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার -ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে-
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,
আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;
আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।
মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!
======
তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না,
জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।
ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,
শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।।
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা,
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ
দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
চলার তোমার বাকী পথটুকু-
পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক-
হায়, অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না,
ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।।
দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি
তব ব্যথা কেউ বোঝে না,
তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী,
পথে ফেরে যারা পথ-হারা,
কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না,
বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি?
দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে?
এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে!
তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায়
কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায়
আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়-
পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক!
কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো
মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না,
ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।।
মুখে বলোনি,
অথচ দিব্যি ব্যবহারে বুঝিয়েছো, আমি তোমার কেউ নই! অবহেলা-অনাদরে ফেলে রেখে দিনের পর দিন নিঃসঙ্গতার আঁধারে ডুবিয়ে দিয়ে তুমি দূরে থেকেছো!
মুখে বলোনি,
আমাকে তোমার আর ভালো লাগে না। আমি অবুঝ নই। তুমি আগ্রহ হারিয়ে বসে আছো, আমি দিব্যি টের পেয়ে যাই। তুমি তো ভালোবেসে কাছে আসোনি। ভালোবেসে কাছে আসলে, দূরে থাকা যায়? যায় না।
স্বীকার করোনি,
শুধু তোমার মৌনতা আমাকে বুঝিয়েছে, তুমি আসলে ক্লান্ত। আমার এই অতিরিক্ত আবেগ, অতিরিক্ত তোমাকে কাছে পাওয়ার লোভ- তোমাকে পীড়া দিচ্ছে ভীষণ! জিজ্ঞেস করেছি, তুমি আসলে কী চাও? কোনো উত্তর দাওনি। আমি বুঝে গেছি, তুমি আর আমায় চাইছো না।
ভালোবাসোনি,
অথচ দিনের পর দিন ভনিতার খেলায় মেতে উঠেছো আমায় পরাজিত করতে। আমাকে কি সত্যি হারাতে পেরেছো? নাকি মনের অজান্তেই আমায় হারিয়ে ফেললেিপ চিরতরে?
স্বীকার করোনি,
তোমার এইসব ব্যস্ততার অজুহাত, আমাকে ম্যাচুরিটি শেখানো, আবেগ কমাতে বলা, যোগাযোগহীনতায় রেখে মাঝে মাঝে নিয়মরক্ষা করতে খুদে বার্তায় জানান দেয়াটা আসলে ভালোবাসা নয়। অবসর সময়ে বিনোদন নেয়া মাত্র।
সংগৃহীত
একটা সময় ছিল, যখন যেকোনো সম্পর্কের সাথে নিজেকে আকড়ে রাখতে চাইতাম। নিজের সবটুকু দিয়ে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতাম। যত্নবান ছিলাম খুব। কিন্তু দিন শেষে সেই আকড়ে ধরা সম্পর্কগুলো থেকেই সবচেয়ে বেশি দুঃ'খ পেয়েছি!
আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ছিলাম। নিজের সবটুকু দিয়ে তাকে আকড়ে রেখেছিলাম, খুব সোহাগে আদরে। নিজের অস্তিত্ব ভুলে তাকেই নিজের অস্তিত্ব বানিয়ে ছিলাম। যার জন্য দিনশেষে নিজেকে আর খুঁজে পাই নি। এতে করে তার চলে যাওয়াতে আমিই কষ্ট পেয়েছিলাম।
যার হাত ধরে সব কিছু ভুলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই মানুষটাও বুঝে নি আমায়। সব কিছুর জন্য আমাকেই দোষারোপ করল। নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় টিকলো না সেও শেষ পর্যন্ত!
এক সময় আমার অনেক বন্ধু ছিল। নিজের ভালোর কথা চিন্তা না করে, ওদের ভালো রাখতে ব্যস্ত ছিলাম। ওদের একটা ডাকে নিজের সবটুকু ঢেলে দিতাম। অথচ আমার বিবর্ণ সময়ে ওদের পাশে পাই নি। খেয়াল করলাম, আমিই ওদের প্রয়োজনের পাত্রই ছিলাম কেবল। প্রিয়জন আর হতে পারি নি।
একটা সময় ছিল, যখন আত্মীয় স্বজনের কাছে খুব প্রিয় ছিলাম। সবাই বলত আমার মতো ভালো আর কেউ হয়ই না নাকি। রূপে গুনে যেন মা লক্ষ্মী! কিন্তু যখন দুঃসংবাদগুলো আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ছিল তখন তারাই সবার প্রথমে চোখ বাকিয়ে ছিল!
বাবা মায়ের আদরের ছিলাম খুব। সব সময় মাথায় করে রাখত। অথচ যখন দেখতে পেল আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হচ্ছে না আর তখন সেই আমিই যেন তাদের চোখের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে। এখনও মাথায় রাখে, তবে সেটা বোঝা ভেবে!
বিশ্বাসের নামে বিশ্বস্ত মানুষগুলো আমায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে ছিল, সবকিছু আমারই ভুল! তাই এখন আর কোনো সম্পর্কের উপর বিশ্বাসটা ঠিক রাখতে পারি না। কাঁচের মতো ভেঙে যাওয়া এই আমি এখন শুধু নিজের উপর বিশ্বাস করতে পারি। কেউ ভালো করতে চাইলে এখন আর বিশ্বাস হয় না বরং তার দিকে মুচকি হেসে “আমি ভালো আছি” বলে পাশ কাঁটিয়ে যাই।
এখন এভাবেই চলছে জীবন আমার, চলুক না!