নিশির ডাক এবং প্যারাসমনিয়া (Parasomnia):
আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান এবং ঘুমের বিজ্ঞানীরা নিশির ডাকের অভিজ্ঞতার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্যারাসমনিয়া হল ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ বা অভিজ্ঞতার একটি শ্রেণী। এর মধ্যে স্লিপ টকিং (somniloquy), ঘুমের মধ্যে হাঁটা (somnambulism), এবং হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রম অন্তর্ভুক্ত। গভীর ঘুমের স্তর থেকে হঠাৎ জেগে উঠলে বা ঘুমের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে মানুষ এমন কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে যা তাদের কাছে বাস্তব মনে হয়। রাতের বেলা পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনার অনুভূতি বা সম্মোহিত অবস্থায় হাঁটার মতো ঘটনা প্যারাসমনিয়ার ফল হতে পারে।
নিশির ডাক এবং অডিটরি হ্যালুসিনেশন (Auditory Hallucination):
অডিটরি হ্যালুসিনেশন মানে হল এমন শব্দ বা কণ্ঠস্বর শোনা যা আসলে সেখানে নেই। মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার বা কিছু স্নায়বিক অবস্থার কারণে এই ধরনের হ্যালুসিনেশন হতে পারে। রাতের নীরবতায় যখন মন অন্য কোনো উদ্দীপক থেকে মুক্ত থাকে, তখন এই ধরনের হ্যালুসিনেশন আরও স্পষ্ট মনে হতে পারে এবং পরিচিত কণ্ঠস্বরের মতো শোনা যেতে পারে।
নিশির ডাক এবং মাস হিস্টিরিয়া (Mass Hysteria) বা সোশ্যাল কন্টাজিয়ন (Social Contagion):
কোনো একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাস বা ভয় যখন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে মাস হিস্টিরিয়া বা সোশ্যাল কন্টাজিয়ন বলা হয়। নিশির ডাকের লোককথা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত থাকায়, কোনো একটি গ্রামে বা গোষ্ঠীতে যদি কেউ এই অভিজ্ঞতা লাভ করার কথা বলে, তখন অন্যরাও একই রকম অনুভূতি অনুভব করতে পারে। ভয়ের শক্তি এবং সামাজিক প্রভাবের কারণে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সমষ্টিগত বিশ্বাসে পরিণত হতে পারে।
নিশির ডাক এবং শব্দ বিভ্রম (Auditory Illusion):
কখনও কখনও পরিবেশের কোনো অস্পষ্ট শব্দ বা অন্য কোনো আওয়াজকে মস্তিষ্ক ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। রাতের বেলা বাতাসের শোঁ-শোঁ আওয়াজ, পোকামাকড়ের ডাক বা দূরের কোনো ক্ষীণ শব্দ পরিচিত কণ্ঠস্বরের মতো শোনা যেতে পারে। একে শব্দ বিভ্রম বলা হয়।
নিশির ডাক এবং প্রযুক্তি:
আধুনিক যুগে শব্দ রেকর্ডিং এবং প্লেব্যাকের প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায়, নিশির ডাকের মতো শব্দ তৈরি করা বা নকল করা সম্ভব। যদিও নিশির ডাকের লোককথা অনেক পুরনো, তবুও প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের রহস্য তৈরি বা প্রচার করা যেতে পারে।
নিশির ডাক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি:
বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিশির ডাকের ভীতি কমানো সম্ভব। মানুষকে ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হ্যালুসিনেশন বা প্যারাসমনিয়ার মতো সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষিত করলে, তারা এই ধরনের অভিজ্ঞতাকে অতিপ্রাকৃত না ভেবে চিকিৎসা বা সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
পরিশেষে:
নিশির ডাকের লোককথা একদিকে যেমন আমাদের সংস্কৃতির অংশ, তেমনই অন্যদিকে মানুষের মনস্তত্ত্ব, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং সামাজিক আচরণের একটি আকর্ষণীয় ক্ষেত্র। আধুনিক বিজ্ঞান এই রহস্যময় অভিজ্ঞতার কিছু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিলেও, লোককথার ভীতি এবং আকর্ষণ আজও মানুষের মনে বিদ্যমান