হৃদয়ের সুরক্ষা এবং যত্ন নেওয়া আমাদের নিজেদের হাতেই থাকে। তাই এই বিষয়ে আরও কিছু আলোচনা করা যাক, কেমন?
প্রথমত, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা হৃদরোগ প্রতিরোধের প্রথম এবং প্রধান পদক্ষেপ। এর মধ্যে রয়েছে:
* সুষম আহার: প্রচুর ফল, সবজি, শস্য এবং কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন খাবারের তালিকায় যোগ করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণ ত্যাগ করা জরুরি।
* নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটা হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* ধূমপান পরিহার: ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
* পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রকেও বিশ্রাম দেয়।
* মানসিক চাপ কমানো: যোগা, মেডিটেশন বা শখের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
* নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত, যাতে কোনো ঝুঁকি থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
হৃদরোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত। যেমন:
* বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, যা চাপ, ভারী ভাব বা জ্বালা অনুভূতির মতো হতে পারে।
* শ্বাসকষ্ট।
* দ্রুত বা अनियमित হৃদস্পন্দন।
* মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা।
* ক্লান্তি।
* বাম হাত, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে হৃদরোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন উন্নত পদ্ধতি রয়েছে। ঔষধের মাধ্যমে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এনজিওপ্লাস্টি (angioplasty) এবং স্টেন্টিংয়ের (stenting) মাধ্যমে বন্ধ রক্তনালী খুলে দেওয়া যায়। বাইপাস সার্জারি (bypass surgery) গুরুতর ক্ষেত্রে রক্ত প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পেসমেকার (pacemaker) এবং ডিফিব্রিলেটরের (defibrillator) মতো ডিভাইস হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহৃত হয়।
হৃদয় আমাদের শরীরের ইঞ্জিনস্বরূপ। এর সঠিক যত্ন নিলে আমরা একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারি। তাই আসুন, আমরা সবাই আমাদের হৃদয়ের প্রতি আরও যত্নশীল হই।