সদস্যের লেখা, পড়ার অনুরোধ রইলো। সাধারণ সরকারি চাকরিজীবির জীবনযাত্রা
অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ২০১৮ সালে সরকারি চাকরীতে জয়েন করেছি, ৯০০০ টাকা বেসিকে। এক বছর চাকরি করার পরে ৪৫০টাকা বেতন বেড়েছে, সব মিলিয়ে মাস শেষে ১৪৫০০ টাকার মতো বেতন পেয়েছি। প্রথম পোস্টিং ছিল বাবুছড়া,খাগড়াছড়ি । বছরে তিনবার ছুটি আসতাম। ছুটি শেষ বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় পকেটে ভাড়ার টাকাও থাকতো না। এত অল্প টাকা বেতনে কখনো বাবা,মা ,ভাই ,বোন ,কারো স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি, কোনদিন ভালো বাসে উঠে ছুটিতে বাড়িতে আসতে পারেনি। কখনো ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেনি। বাবা মাকে ভালো জিনিস খাওয়াতে পারেনি। চাকরি যখন ৪ /৫ বছর তখন বিয়ে করেছি। তখন ব্যাংকে আমার ১০ হাজার টাকাও নেই, শ্বশুর বাড়িতে যখন বেড়াতে গিয়েছি, কোনদিন ভালো কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনি, শ্বশুরবাড়িতে গেলে অনেক লজ্জা লাগ তো, কারণ আমার শ্বশুর বাড়িতে আমাকে অনেক আদর করত। প্রত্যেকটা জামাই চায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে সবচেয়ে ভালো জামাই হয়ে থাকতে। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু প্রিয় স্বপ্ন থাকে। আমার প্রিয় স্বপ্ন ছিল , ভালো কাপড়-চোপড় পড়া ভালো জুতা পরা, একটা মোটরসাইকেল কিনে ব্যবহার করা, খুব সামান্য একটা স্বপ্ন, সেগুলো কোনদিন পূরণ করতে পারিনি, আজ চাকরি আমার ৮ বছর প্রায় শেষ, এখন ও একটা মোটরসাইকেল কিনতে পারিনি, বাড়িতে গেলে সব সময় বন্ধুদের মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াই। বন্ধুরা সব সময় বলে মোটরসাইকেল কখন কিনবি, । তখন শুধু মনে মনে হাসি , কারন আমার নামের পাশে তো সরকারি চাকরিজীবী লেখা আছে , বন্ধুরা তো বলবে এটাই স্বাভাবিক।, চাকুরী জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। প্রতিদিন রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিয়েছি, ভোতা কাচি দিয়ে ঘাস কেটেছি, ঘাস কাটতে কাটতে হাতের মধ্যে ফুচকা পড়ে গেছে, একদিন তো কান্না করে দিয়েছিলাম ঘাস কাটতে গিয়ে, তখন এক সিনিয়র সার্জেন্ট, আমার হাত দেখে বলেছিল, ও মনে হয় কোনো ভালো ফ্যামিলির ছেলে , ওকে আর ঘাস কাটতে দেয়া যাবে না কোদাল দিয়ে মাটি কেটেছি, নোংরা ড্রেন পরিস্কার করেছি, ১৬ মাইল দৌড় দিয়েছি, তিন মাইল দৌড় দিয়েছি, সারা জীবন গরমের মধ্যে মোটা কাপড়ের ইউনিফরম পড়েছি , মাথায় মোটা টুপি পড়েছি, অনেক গরম পড়ছে, কখনো কখনো মনে হয়েছে মাথার টুপিটা খুলি, মোটা কাপড়ের ইউনিফর্ম টা একটু খুলি। কিন্তু ডিপার্টমেন্ট এর চাকরি সিনিয়ারদের ভয়ে কখনো তা সম্ভব হয় নাই। জীবনে কখনো কি শুনেছেন, সরকারি চাকরি পাওয়ার পরে ও চাকরি চলাকালীন অবস্থায় মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা করে, বি ডি আর, এখন অবশ্য বিজিবি, পুলিশ আর্মি, এই তিন বাহিনীর লোক আত্মহত্যা করে, তাও আবার নিজের অস্ত্র দিয়ে নিজেই, গুলি করে। কিন্তু কখনো কি কেউ জেনেছেন কিসের জন্য আত্মহত্যা করে। সেটা কখনো কেউ জানতে চায় না। এতকিছুর পরেও ,আমরা বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কিন্তু পারিনা, এই সরকারি চাকরিতে একটা জিনিস পেয়েছি সবার কাছ থেকে, সেটা হচ্ছে ,বাবা মায়ের সাথে ভালো সম্পর্ক নেই, ভাইদের সাথে নেই, আত্মীয়-স্বজনের সাথে নেই, শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে নেই। ইচ্ছা থাকলেও মানুষের মনের আশা পূরণ করতে পারছি না। কারণ ৮ বছর চাকরিতে এখন বেতন পাই ২৪ হাজার টাকার মত, এই টাকা দিয়ে কি করা সম্ভব, যার দুইটা ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে, বাবা-মা বৃদ্ধ, মাস শেষে, কোনরকম ডাল ভাত খেলে হয়তো বা পাঁচ হাজার টাকা ব্যালেন্স থাকে, কিন্তু অসুস্থ হলে আবার ৫০০০ টাকা দেনা হতে হয়। সরকারি চাকরি করি ইচ্ছা করলেই তো লুঙ্গি পড়ে ঘুরে বেড়াতে পারি না , সেই জন্য প্যান্ট পড়তে হয়। আমাদের চেয়ে রিক্সাওয়ালা অটোওয়ালাতারা অনেক ভালো আছে। কারণ তাদের তো প্যান্ট পড়ার চিন্তা নেই। আজ ০৮ টি বছর সরকার বেতন বৃদ্ধি করে না। জিনিসপত্র দাম তো আর থেমে নেই সব দ্বিগুণ হয়েছে।
আর কতদিন এভাবে চলবে। আস্তে আস্তে স্বপ্নগুলো ছোট হয়ে আসছে মন ভেঙে যাচ্ছে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। শরীরের বিভিন্ন রোগব্যাধি ভর করছে।
(সংষষষ
asif213
Xóa nhận xét
Bạn có chắc chắn muốn xóa nhận xét này không?
MD Jihad
Xóa nhận xét
Bạn có chắc chắn muốn xóa nhận xét này không?
Ridoy miah
Xóa nhận xét
Bạn có chắc chắn muốn xóa nhận xét này không?